শুল্ক নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে সমস্যা শীঘ্রই মিটে যেতে পারে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে এসে এমনটাই জানালেন দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন। তাঁর কথায়, আগামী ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে শুল্ক-সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।
গত মঙ্গলবার দিল্লিতে ভারত এবং আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের পরে প্রথম এমন কোনও বক্তব্য এল কেন্দ্রের তরফে। বস্তুত, মঙ্গলবারের বৈঠকের পরে ভারত এবং আমেরিকা, দু’পক্ষই জানিয়েছিল বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। তবে বিস্তারিত কোনও মন্তব্য করেনি কোনও পক্ষই। এ অবস্থায় ভারতের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় বণিকসভার এক সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন নাগেশ্বরন। ওই সময়েই শুল্ক এবং বাণিজ্য প্রসঙ্গে ভারত-আমেরিকার কূটনৈতিক সমীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দু’দেশের সরকারের মধ্যেই আলোচনা চলছে। আমার মতে, ভারতীয় পণ্যের উপর আমেরিকার চাপানো শুল্কের বিষয়ে আগামী ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে একটি সমাধান দেখা যাবে।” নাগেশ্বরনের মতে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের উপর যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে তা উঠে যেতে পারে। এ ছাড়া প্রথমে যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছিল, তা-ও কমে ১০-১৫ শতাংশের মধ্যে কিছু স্থির হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলছে। দু’পক্ষই বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছে, আলোচনা ভাল ভাবেই এগোচ্ছে এবং শীঘ্রই একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি হয়ে যাবে। তবে এরই মধ্যে গত ৩০ জুলাই ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করে দেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা নিয়ে অসন্তোষের কথাও জানিয়েছিলেন সেই সময়ে। পরে গত ৬ অগস্ট রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প, যা কার্যকর হয় ২৭ অগস্ট থেকে। বর্তমানে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। ভারত এবং ব্রাজ়িল ছাড়া অন্য কোনও দেশের উপর এত চড়া হারে শুল্ক চাপাননি ট্রাম্প।
তবে সম্প্রতি ভারত প্রসঙ্গে সুর নরম করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আদৌ সহজ ছিল না। শুল্কের জন্য যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরেছে, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা কাটানোর জন্য তাঁর প্রশাসন ভারতের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিজেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চান, সে কথাও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই বক্তব্যের পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুভূতি এবং দুই দেশের সম্পর্কের ইতিবাচক মূল্যায়নকে উপলব্ধি করতে পারছি। তার প্রতিদানও দেওয়ার চেষ্টা করব।’’
আরও পড়ুন:
কূটনৈতিক চাপানউতর কাটিয়ে সম্পর্ক মসৃণ হওয়ার আভাস মেলে তখন থেকেই। এরই মধ্যে গত সোমবার বেশি রাতের দিকে ভারতে আসেন আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের প্রধান ব্রেন্ডন লিঞ্চ। মঙ্গলবার সকালে নয়াদিল্লিতে বাণিজ্যভবনে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এই নিয়ে বাণিজ্য নিয়ে ষষ্ঠ দফার বৈঠক হল দু’দেশের মধ্যে। আর শুল্ক নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চাপানউতরের মাঝে এটিই ছিল দু’দেশের প্রথম বৈঠক। সূত্রের খবর, অগস্টের শেষের দিকে দু’দেশের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে তা ভেস্তে যায়।