Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Karnataka

লাগাতার পুলিশি জেরায় ভয়ে কাঁটা কর্নাটকের খুদে পড়ুয়ারা

সিএএ এবং এনআরসি-এর বিরুদ্ধে নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর থেকেই স্কুলে পুলিশের আনাগোনা শুরু হয়েছে। আর তাতে ব্যতিব্যস্ত পড়ুয়ারা।

স্কুলে পড়ুয়াদের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ।

স্কুলে পড়ুয়াদের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ।

সংবাদ সংস্থা
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:৪৩
Share: Save:

স্কুলে অভিনীত নাটকটা যেন বদলে দিয়েছে কর্নাটকের বিদারের শাহিন এডুকেশন ইনস্টিটিউটের ছোট ছোট পড়ুয়াদের জীবন। স্কুলে গিয়ে এখন শিক্ষকের প্রশ্ন নয়, নিয়মিত পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-এর বিরুদ্ধে ওই নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর থেকেই স্কুলে পুলিশের আনাগোনা শুরু হয়েছে। আর তাতে ব্যতিব্যস্ত পড়ুয়ারা। স্কুলের কর্তা থেকে অভিভাবক, সকলেরই অভিযোগ, নিয়মিত পুলিশি জেরার ফলে আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছে খুদেরা।

স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা, খেলাধুলো আর অল্পস্বল্প দুষ্টুমি— যে ভাবে ষষ্ঠ, সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা ছাত্রজীবন কাটায়, সে ভাবেই চলছিল ওই ইনস্টিটিউটের পড়ুয়াদের জীবন। কিন্তু গত ২১ জানুয়ারি স্কুলে অনুষ্ঠিত হওয়া নাটকটা যেন সব এক ঝটকায় বদলে দিয়েছে। অনুষ্ঠানের পর সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড হওয়ার পর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ উঠেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: সকলে জানত দুঁদে পুলিশকর্তা, ধরা পড়তেই বেরিয়ে এল আসল পরিচয়

ওই ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ গ্রেফতার করেছে এক অভিভাবিকাকেও। কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি স্কুলে পুলিশের অভিযান। তার পর থেকে স্কুলে সময়েই পৌঁছচ্ছে পড়ুয়ারা। কিন্তু ক্লাস মিস হয়ে যাচ্ছে তাদের। আগে যে সময়টা তাদের স্কুলে লেখাপড়া বা খেলাধুলোর মধ্যে দিয়ে কাটত, এখন কী চলছে?

আরও পড়ুন: ‘মহাত্মা গাঁধীর নাম করিনি’, দুঃখপ্রকাশ না করেই বললেন বিজেপি সাংসদ

মঙ্গলবার জাতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিফ এগজিকিউটিফ অসিকার তৌসিফ মাদিকেরি। তাঁর কথায়, ‘‘ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের ইতিমধ্যেই চার বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়ে গিয়েছে। পুলিশ তাদের কাছে বার বার জানতে চাইছে, কে নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন? কোন শিক্ষক নির্দেশ দিয়েছিলেন?’’

তৌসিফ আরও বলছেন, ‘‘ছাত্রদের নিয়মিত ভাবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ক্লাসের বাইরে থাকতে হয়। পুলিশের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট বেলা ১টায় আসেন। তিনি বিকেল চারটে পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গত চার দিন ধরে এমনই চলছে। এটা যে কোনও বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে কল্পনাতীত।’’ তাঁর মতে, পড়ুয়া তো বটেই এটা অভিভাবকদের জন্যও মানসিক অত্যাচার।

আরও পড়ুন: সারা দেশে এনআরসি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, সংসদে জানাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক

ওই স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে অভিভাবিকাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর স্বামী নেই। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে একাই রয়েছে তাঁর ন’বছরের শিশুটি। এখন প্রতিবেশীরাই তার দেখভাল করছেন। পুলিশের দাবি, ওই মহিলা নাটকের স্ক্রিপ্টে এমন কিছু সংলাপ জুড়েছিলেন যা তীব্র ভাবে সিএএ বিরোধী। আর প্রধানশিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর অনুমতিতেই ওই বিতর্কিত নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল।

নাটক-কাণ্ডে দু’জনের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে অন্য অভিভাবকরাও। খোলা চিঠিতে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের তোয়াক্কা না করেই শিশু ও কিশোরদের জেরা করছে পুলিশ। জেরার সময় তাদের বাবা-মা-কেও থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের আরও দাবি, এর ফলে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে তারা। অভিভাবকরা সমস্ত মামলা খারিজ করে দেওয়ার দাবিও তুলেছেন। যদিও, সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE