প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনলেন সুপ্রিম কোর্টের এক প্রাক্তন কর্মী। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, এর পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ আছে। বিষয়টি নিয়ে শুনানির জন্য গঠন করা হয়েছে বিশেষ বেঞ্চ।
আজ সকালে চারটি নিউজ পোর্টালে এই বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। পোর্টালগুলি জানিয়েছে, ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ২২ জন বিচারপতিকে হলফনামা দিয়ে নিজের অভিযোগ জানিয়েছেন বছর পঁয়ত্রিশের ওই তরুণী। পোর্টালগুলির দাবি, তরুণী জুনিয়র কোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৮ সালের অগস্ট মাসে প্রধান বিচারপতির বাড়ির অফিসে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। তরুণীর অভিযোগ, ২০১৮ সালের ১০-১১ অক্টোবর তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি প্রতিবাদ করায় প্রথমে তাঁকে প্রধান বিচারপতির বাড়ির অফিস থেকে সরানো হয়। পরে ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর চাকরি থেকেই বরখাস্ত
করা হয়।
তরুণীর অভিযোগ, হেনস্থা এতেও থামেনি। তাঁর স্বামী এবং স্বামীর এক আত্মীয় দিল্লি পুলিশের হে়ড কনস্টেবল। পুরনো এক মামলার ভিত্তিতে তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়। ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি এক পুলিশ অফিসার তাঁকে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে নিয়ে যান। তরুণীর অভিযোগ, সেখানে প্রধান বিচারপতির স্ত্রী ক্ষমা চেয়ে তাঁর পায়ে নাক ঘষতে বলেন। তরুণীর দাবি, তিনি সে কথা মেনে নেন। এর পরেও তাঁর স্বামীর এক প্রতিবন্ধী আত্মীয়কে সুপ্রিম কোর্টের চাকরি থেকে সরানো হয়। কোনও কারণ দেখানো হয়নি।
তরুণীর অভিযোগ, ২০১৯ সালের ৯ মার্চ তিনি ও তাঁর স্বামী রাজস্থানে নিজেদের গ্রামে গিয়েছিলেন। এক প্রতারণার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে দিল্লি নিয়ে আসতে সেখানে হাজির হয় দিল্লি পুলিশ। পরের দিন তিলক মার্গ থানায় তিনি, তাঁর স্বামী, তাঁর স্বামীর আত্মীয়, তাঁর স্ত্রী ও অন্য এক আত্মীয়কে আটকে মারধর ও গালিগালাজ করা হয়। হেনস্থার মাত্রা চরমে ওঠার পরেই তাঁরা ‘সত্য প্রকাশ’-এর সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন ওই তরুণী।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পরেই সেটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধান বিচারপতিকে জানান সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। সকাল সওয়া দশটা নাগাদ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি জানায়, ‘‘প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হবে।’’ মিনিট তিরিশের ওই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সম্মানই এক জন বিচারপতির একমাত্র প্রাপ্তি। ভিত্তিহীন যৌন হেনস্থার অভিযোগের ফলে যদি সেই সম্মানে আঘাত লাগে, তা হলে কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বিচারপতি হতে চাইবেন না।’’ প্রধান বিচারপতির বক্তব্য, ‘‘আমার নিজের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স এখন ৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। আমার বিরুদ্ধে কেউ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারবে না। তাই একটা কোনও বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘অভিযোগকারিণীর বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর ছিল। এফআইআর থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তিনি সুপ্রিম কোর্টে চাকরি পেলেন? কর্মরত থাকার সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে তৃতীয় এফআইআর হয়। সেই মামলায় তাঁর জামিন খারিজ করতে দিল্লির আদালতে আবেদন করেছে দিল্লি পুলিশ।’’ প্রধান বিচারপতির মতে, ‘‘এর পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র আছে। বিচারবিভাগের উচ্চতম আসন থেকে বলা প্রয়োজন, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন। বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল থেকে যে সব ই-মেল আমাকে পাঠানো হয়েছে, সেগুলি একই পথে এসেছে। আগামী সপ্তাহে আমার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে অনেক রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর মামলার শুনানি হওয়ার কথা।’’ অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, ‘‘আগে এই ধরনের দু’টি মামলায় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতির এ দিনের বক্তব্য সর্বত্র প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন।’’ সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে এটা ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা। এই অসৎ মহিলার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রয়োজন।’’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘এমন ঘটনায় অভিযুক্ত ও অভিযোগকারিণীর নাম না প্রকাশের আইন রয়েছে। কিন্তু সব নিউজ পোর্টাল নাম প্রকাশ করেছে।’’
প্রধান বিচারপতি জানান, তিনি এই বিষয়ে কোনও নির্দেশ জারি করবেন না। সেই দায়িত্ব বিচারপতি মিশ্র ও বিচারপতি খন্নার। বিচারপতি খন্না বলেন, ‘‘সঠিক নিয়ম মেনেই ওই কর্মীকে সরানো হয়েছিল। এখন হঠাৎ জেগে ওঠে তাঁরা এ সব অভিযোগ করছেন।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম
কতটা সংযত হবে তা সংবাদমাধ্যমই স্থির করুক। প্রয়োজনে আমরা এই বিষয়ে নির্দেশ দেব।’’ সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো একটি ই-মেলে প্রধান বিচারপতির তরফে সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির পাশে দাঁড়িয়েছে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া।
কিন্তু প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং ও রাকেশ দ্বিবেদীর মতে, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেই অভিযোগ নিয়ে যে শুনানি হচ্ছে তা থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানো প্রয়োজন। জয়সিংয়ের আরও প্রশ্ন, ‘‘প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে এই শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল হাজির রইলেন কেন? সরকার প্রধান বিচারপতির পক্ষে জোর গলায় সওয়াল করছে। এর পরে কি সরকারের কোনও মামলার শুনানি থেকে প্রধান বিচারপতির সরে দাঁড়ানো উচিত নয়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy