Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নরম নীতিতেই কি ফের সন্ত্রাস, কাঠগড়ায় বাদল

দেবেন্দ্র পাল সিংহ ভুল্লার, পরমজিৎ ভেওরা, গুরমিত সিংহ, লখবিন্দর সিংহ। কেউ ১৯৯৩ সালের দিল্লি বিস্ফোরণে দোষী। কেউ আবার পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংহের হত্যা মামলার আসামি।

প্রকাশ সিংহ বাদল

প্রকাশ সিংহ বাদল

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

দেবেন্দ্র পাল সিংহ ভুল্লার, পরমজিৎ ভেওরা, গুরমিত সিংহ, লখবিন্দর সিংহ। কেউ ১৯৯৩ সালের দিল্লি বিস্ফোরণে দোষী। কেউ আবার পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংহের হত্যা মামলার আসামি।

খলিস্তানি এই জঙ্গিদের বার বার পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রকাশ সিংহ বাদল-সহ অকালি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। আজ গুরুদাসপুরে জঙ্গি হানার পরে সন্ত্রাস প্রশ্নে সুর বদলেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু অকালি দলের দ্বিচারিতার ফলেই পঞ্জাবে ফের জঙ্গি সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা।

১৯৯৩ সালের দিল্লি বিস্ফোরণে দোষী সাব্যস্ত দেবেন্দ্র পাল সিংহ ভুল্লার ‘খলিস্তান লিবারেশন ফোর্স’-এর বড় মাপের নেতা ছিল বলেই আদালতে জানিয়েছিল পুলিশ। তার মৃত্যুদণ্ড মকুব নিয়ে আইনি লড়াইয়ের সময়ে ভুল্লারের স্ত্রী নবনীত কৌরের পাশে দাঁড়িয়েছিল অকালি দল। মৃত্যুদণ্ড খারিজ করে ভুল্লারকে যাবজ্জীবন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

তার পরে তাকে ‘বাড়ি’ ফেরাতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন অকালি নেতৃত্ব। দিল্লির তিহাড় থেকে ভুল্লারকে কড়া পাহারায় নিয়ে আসা হয় অমৃতসরের জেলে। বিষয়টি নিয়ে অকালি দলের মদতে প্রায় উৎসব হয়েছিল পঞ্জাবে।

আপাতত ভুল্লারের ঠিকানা অমৃতসরের একটি হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর। সেখানে ‘মানসিক অবসাদে’র জন্য চিকিৎসা চলছে তার। কানাডা থেকে এসে ভুল্লারের সঙ্গেই রয়েছেন স্ত্রী নবনীত। হাসপাতালে ভুল্লারের পাহারায় রয়েছে পঞ্জাব পুলিশের বড় বাহিনী। আরও আট জঙ্গিকে ‘বাড়ি’ ফেরানোর ব্যবস্থা করে ফেলেছে প়ঞ্জাবের স্বরাষ্ট্র দফতর। তাদের মধ্যে রয়েছে বিয়ন্ত সিংহের খুনিরাও।

রাজনীতিকদের মতে, অকালি দল ও শিখ ধর্মীয় সংগঠন শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির বড় অংশ খলিস্তানিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। হাসপাতালে ভুল্লারের সঙ্গে যাঁরা দেখা করতে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক শীর্ষ শিখ ধর্মীয় নেতা। শিখ ভোটের কথা মাথায় রেখে এই ভাবাবেগকে উস্কানি দেয় অকালি দল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে অকালি ও জোটসঙ্গী বিজেপির ফল ভাল হয়নি। ফলে, ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বাদলের দল শিখ ভাবাবেগে আরও হাওয়া দিতে চাইছে বলেও ধারণা রাজনৈতিক শিবিরের। শ্রীলঙ্কার এলটিটিই-র উপরে ভারতের তামিল রাজনীতিকদের ‘দুর্বলতা’র সঙ্গে অকালিদের খলিস্তান-প্রীতির মিল আছে বলে মনে করেন অনেকে।

আজ গুরুদাসপুরে হামলার পরে সন্ত্রাস প্রশ্নে সুর কড়া করতে বাধ্য হয়েছেন প্রকাশ সিংহ বাদল। তবে কৌশলে দায় কেন্দ্রের উপরে চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সন্ত্রাস জাতীয় সমস্যা। সে জন্য জাতীয় নীতি প্রয়োজন। কেন্দ্র বলছে তাদের কাছে অনুপ্রবেশ নিয়ে তথ্য ছিল। সে ক্ষেত্রে সীমান্ত সিল করা তাদেরই দায়িত্ব।’’ গুরুদাসপুর হামলায় অবশ্য খলিস্তানি নয়, লস্কর-ই-তইবার দিকেই আঙুল তুলেছে কেন্দ্র। ফলে, আত্মপক্ষ সমর্থনের কিছুটা সুযোগ পেয়েছেন বাদল। তাঁর কথায়, ‘‘এই জঙ্গিরা পঞ্জাব
থেকে আসেনি। সীমান্তের ওপার থেকে এসেছে।’’

বিরোধী কংগ্রেস অবশ্য সরাসরি বাদলের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে। দলীয় মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কথায়, ‘‘বাদলের দ্বিচারিতা স্পষ্ট। এক দিকে তিনি খলিস্তানিদের মদত দিচ্ছেন। পঞ্জাবে ফের খলিস্তানি পতাকা উঠছে। আবার এখন সুর চড়াও করছেন।’’

অকালি দলের এই অবস্থানে বার বার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে জোটসঙ্গী বিজেপিকে। তবে আপাতত এ নিয়ে বাদলকে নিশানা করে সমস্যা বাড়াতে রাজি নয় নরেন্দ্র মোদীর দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE