E-Paper

চাপানউতোরই সার, রাজধানী সেই তিমিরেই

শীতের আকাশে যখন কালো ধোঁয়াশা দিল্লির আকাশকে গ্রাস করে নেয় তখন কেজরীওয়াল ফি বছর ধারাবাহিক ভাবে অভিযোগের আঙুল তোলেন হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের দিকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩ ০৫:৪০
delhi flood.

যমুনার জলে প্লাবিত দিল্লি। ছবি: পিটিআই।

শীতে আকাশ ধোঁয়াশায় কালো তো বর্ষায় কোমর জলে ঘরবন্দি রাজধানীবাসী। নরেন্দ্র মোদী বিদেশ সফরে গিয়ে ভারতের সাফল্যের গুণগান করেন। আর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল যে রাজ্যেই যান সেখানেই তিনি দিল্লি মডেল চালু করার পরামর্শ দেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তবে শীত হোক বা বর্ষা দেশের রাজধানীর পরিকাঠামো যে কতটা দুর্বল, রাজনীতিবিদদের উন্নত আধুনিক ভারতের দাবি কতটা ফাঁপা তা বারংবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আকাশে ঝুলে থাকা ধোঁয়াশার আস্তরণ কিংবা বর্ষার কোমর জল। এ দিন রাজধানীর মুকুন্দপুর এলাকায় বন্যার জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তিন কিশোরের।

আর পরিকাঠামোর ওই খামতি, মানুষের অস্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে যখনই প্রশ্ন ওঠে, শুরু হয়ে যায় চাপান-উতোরের খেলা। কেন্দ্রের অভিযোগ, কেজরীওয়াল সরকারের অপদার্থতার কারণেই দিল্লিবাসী জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। অন্য দিকে কেজরীওয়াল সরকারের অভিযোগ, কেন্দ্র তাঁদের সাহায্য করছে না। কথা শুনছেন না আমলারা। তাই নির্বাচিত সরকার কাজ করতে পারছে না। কংগ্রেসের মতে, এই চাপানউতোরের খেলায় সিদ্ধহস্ত উভয় পক্ষই। যার জন্য ভুগতে হচ্ছে আমজনতাকেই।

দিল্লির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র আইটিও-তে জল জমার কারণ খুঁজতে আজ সকালে সংলগ্ল ইন্দ্রপ্রস্থ মেট্রো স্টেশনের কাছে গিয়েছিলেন দিল্লির উপরাজ্যপাল বিনয় সাক্সেনা। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, জলসম্পদ মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। দেখা যায় স্টেশনের ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনার জল একটি ছোট নালার মাধ্যমে শহরে প্রবেশ করছে। কেন ওই খালের জলের শহরে প্রবেশ আটকে দেওয়া হয়নি তা নিয়ে উপরাজ্যপাল বিনয় সাক্সেনা বলতে শুরু করতেই তাঁকে মাঝপথে থামিয়ে দেন সৌরভ। দিল্লির জলসম্পদ মন্ত্রী গোটা দায় কার্যত কেন্দ্রের ঘাড়ে ঠেলে দিয়ে বলেন, ‘‘গত কাল রাতেই আমি জল আটকানোর জন্য জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু দিল্লি সরকারের আমলারা আমার কথা শোনেননি।’’ আম আদমি পার্টির অভিযোগ, আমলাদের নিয়ন্ত্রণ দিল্লি সরকারের হাতে না থাকায় আমলারা কেউ মন্ত্রীদের পাত্তা দেননা। যার ফলে ভুগতে হচ্ছে জনতাকে। পাল্টা বক্তব্যে উপরাজ্যপাল বলেন, ‘‘বলার থাকলে অনেক কিছুই বলা যায়। আঙুল তোলা যায়। কিন্তু তা না করে আমাদের একযোগে কাজ করার দিকে নজর রাখতে হবে।’’

শীতের আকাশে যখন কালো ধোঁয়াশা দিল্লির আকাশকে গ্রাস করে নেয় তখন কেজরীওয়াল ফি বছর ধারাবাহিক ভাবে অভিযোগের আঙুল তোলেন হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের দিকে। বলেন, ওই দুই রাজ্যের প্রশাসন ফসলের গোড়া পোড়ানো রুখতে ব্যর্থ হওয়ায় ভুগতে হচ্ছে দিল্লিবাসীকে। কংগ্রেসের মতে, নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে অন্য সরকারের দিকে আঙুল তোলার খেলায় অত্যন্ত কুশলী কেজরীওয়াল। আগে অভিযোগের তালিকায় কংগ্রেসশাসিত পঞ্জাব থাকলেও, এখন সেখানে আপের শাসন। তাই আপাতত অভিযোগ থেকে ছাড় পেয়েছে পঞ্জাব।

১৫ বছর পরে এ যাত্রায় দিল্লি পুরনিগমে ক্ষমতা হারিয়েছে বিজেপি। জিতেছে আপ। তাই বন্যার যাবতীয় দায় আপের দিকে ঠেলছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আবার বন্যার পিছনে ফের বিজেপির চক্রান্ত খুঁজে পেয়েছেন আপের নেতারা। দলের পক্ষ টুইট করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, গত দু’-তিন ধরে দিল্লিতে বৃষ্টি নেই। তা সত্ত্বেও কী ভাবে জলে ভেসে যেতে পারে রাজধানী? এ যাবৎ দিল্লিতে যমুনার জলস্তর বৃদ্ধির জন্য হরিয়ানার হথনিকুণ্ড জলাধার থেকে জল ছাড়াকে দায়ী করা হচ্ছিল। আজ আপের টুইটারে পোস্ট করা ভিডিয়োতে দাবি করা হয়েছে, ওই জলাধার থেকে যে জল ছাড়া হচ্ছে তার অন্যতম অভিমুখ হল দিল্লি। অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশের দিকে যে খাল রয়েছে তা শুকনো খটখট করছে। ওই ভিডিয়ো দেখিয়ে আপ নেতৃত্বের অভিযোগ, দিল্লিতে বারংবার হারের বদলা নিতেই দিল্লিবাসীকে জলবন্দি করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। পাল্টা অভিযোগে বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, আট বছর আগে ক্ষমতায় এসে যমুনা সংস্কারের ডাক দিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। যমুনা সংস্কার হলে আজ দিল্লির মানুষকে এ ভাবে জল জমার কারণে ভুগতে হত না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Delhi Arvind Kejrwal Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy