বক্তা: কলকাতার এক অনুষ্ঠানে পিনারাই বিজয়ন। ছবি: পিটিআই।
সাদা চোখে যা আক্রমণ, রাজনীতির অঙ্কে তা-ই আসলে আশীর্বাদ! কেরলে গেরুয়া শিবিরের আগ্রাসনের মুখে পড়ে অন্তত তেমনই মনে করছেন পিনারাই বিজয়নেরা।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় এসে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, সঙ্ঘ তথা বিজেপি-র মোকাবিলা করাই এখন দক্ষিণী রাজ্যে তাঁদের প্রধানতম দায়িত্ব। কিন্তু সেই ঝড় সামলাতে গিয়ে কংগ্রেসকে এক ছাতার তলায় ডেকে আনার পক্ষপাতী নন বিজয়ন। কারণ, রাজ্যের সংখ্যালঘু জনমানসে প্রভাব বিস্তারের এমন সুযোগ ভাগ করে নিতে চান না তিনি। কংগ্রেসের চেয়ে বামেদেরই যদি সংখ্যালঘুরা কাছের বন্ধু বলে মনে করে, তাতে তাঁদেরই দীর্ঘমেয়াদি লাভ— বলছে বিজয়নের অঙ্ক।
ঠিক এই প্রশ্নেই আবার দ্বিমত দেখা দিয়েছে কেরল সিপিএমের অভ্যন্তরে। দলের প্রবীণতম নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন বা বিজয়ন মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য টমাস আইজ্যাকেরা মনে করেন, গেরুয়া তাণ্ডবের মোকাবিলায় কংগ্রেসকেও সমযোদ্ধা করা উচিত। তাঁদের যুক্তি বলছে, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিলে বরং সংখ্যালঘু সমর্থন আরও সংহত করা যাবে! কেরলের নিজস্ব রাজনীতির তাগিদে এই দুই সমীকরণই ঘটনাচক্রে আইজ্যাকদের এখন দলের কেন্দ্রীয় স্তরে সীতারাম ইয়েচুরির পাশে আর বিজয়নদের তাঁর বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে! তাত্ত্বিক মোড়কে পরিবেশিত হলেও কংগ্রেস-প্রশ্নে আপত্তি বা সুর নরম, দুই-ই আসলে ভোটের অঙ্কে।
কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের ফাঁকে বিজয়ন শনিবার বলেছেন, ‘‘বিজেপি-র নিশানায় এখন কমিউনিস্টরা। কেরলে সঙ্ঘ পরিবার হিংসার রাজনীতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যত তারা আক্রমণ করছে, তত তারাই বুঝিয়ে দিচ্ছে বিজেপি-র প্রধান শত্রু কে!’’ কেরলে মুসলিমের পাশাপাশি খ্রিস্টান সংখ্যালঘুও কম নয়। সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত বহু এলাকায় আগে কংগ্রেস এবং তাদের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের দাপট ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, সঙ্ঘ-বিজেপি’র মার যত বামেদের উপরে পড়ছে, সংখ্যালঘু ভিত শক্ত করতে তাঁদের সেটা সহায়তা করছে। বিজয়নের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের উন্নয়নের কর্মসূচিতে সংখ্যালঘুরা উপকৃত। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবেও তাঁরা সচেতন।’’
এই শহরের বাসিন্দা মালয়ালিদের সংগঠন ‘কলকাতা মালয়ালি সমাজম’-এর আয়োজনে গোখেল স্কুলের সরলা রায় স্মৃতি হলে এ দিন সন্ধ্যায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন বিজয়ন এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সতীর্থ আইজ্যাক, এ কে বালন, কে কে শৈলজা। সেখানেও বিজয়ন বলেন, ‘‘কর্নাটকে কালবুর্গি, গৌরী লঙ্কেশ থেকে ত্রিপুরায় সাংবাদিক শান্তনু ভৌমিকেরা খুন হয়েছেন ফ্যাসিবাদী শক্তির হাতে। গোটা দেশেই যুক্তিবাদীরা এখন আক্রমণের শিকার। কেরলেও চক্রান্তের মোকাবিলা করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’’ বিজয়ন যে দিন ভিন্ শহরে এই কথা বলছেন, সে দিনই তাঁর নিজের জেলা কান্নুরে বিজেপি হরতাল পালন করেছে আরএসএসের এক যুব কর্মীর খুন হওয়ার প্রতিবাদে।
মালয়ালি অনুষ্ঠানে বিজয়নের বক্তব্যে জল্পনা ছড়িয়েছে, ইয়েচুরির এমন ‘বন্ধু’ আর কে আছে! মুখ্যমন্ত্রীর অঙ্ক অবশ্য কষা হচ্ছে অন্য সূত্রে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy