আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ‘সুনাম অর্জনের জন্য’ ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ককে ভারতে নিয়ে আসার ‘পরিকল্পনা করেছেন’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার এমনটাই অভিযোগ তুলল কংগ্রেস। সম্প্রতি দুই ভারতীয় টেলিকম সংস্থা এয়ারটেল এবং জিয়ো-র সঙ্গে চুক্তি হয় স্টারলিঙ্কের। যদিও ওই চুক্তির বাস্তবায়ন এখনও অনুমোদন সাপেক্ষ। কংগ্রেসের দাবি, মোদী নিজে এই গাঁটছড়া বাঁধার পরিকল্পনা করেছেন। ইলনের মালিকানাধীন স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে ট্রাম্পের কাছে সুনাম অর্জনের জন্যই তিনি এটি করেছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের সাধরণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের বক্তব্য, মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে এয়ারটেল এবং জিয়ো উভয় সংস্থাই স্টারলিঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া ঘোষণা করে দিল। তাঁর দাবি, আগে স্টারলিঙ্কের ভারতে আসা নিয়ে আপত্তি ছিল সংস্থাগুলির। সেই সব আপত্তি সরিয়ে রেখে কী ভাবে এটি সম্ভব হল, তা নিয়ে প্রশ্ন কংগ্রেস নেতার। জয়রামের অভিযোগ, “এটি স্পষ্ট যে এই গাঁটছড়া আর কেউ নয়, প্রধানমন্ত্রী নিজেই পরিকল্পনা করেছেন। স্টারলিঙ্কের কর্তা ইলন মাস্কের মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড) ট্রাম্পের কাছে সুনাম অর্জনের চেষ্টা করছেন।”
তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে জয়রামের প্রশ্ন, “জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে, (ইন্টারনেট) সংযোগ চালু বা বন্ধ করার ক্ষমতা কার হাতে থাকবে? সেটি কি স্টারলিঙ্কের হাতে থাকবে, নাকি ভারতীয় সংস্থার হাতে থাকবে? কৃত্রিম উপগ্রহ নির্ভর পরিষেবা প্রদানকারী অন্য সংস্থাগুলিকেও কি এর অনুমতি দেওয়া হবে? কিসের ভিত্তিতে তা দেওয়া হবে?”
ঘটনাচক্রে টেসলা, স্পেসএক্সের কর্ণধার ইলন বর্তমানে ট্রাম্পের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। এই অবস্থায় ইলনের সংস্থার সঙ্গে দুই ভারতীয় সংস্থার চুক্তি ঘিরে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে কংগ্রেস শিবির। ভারতে স্টারলিঙ্ক পরিষেবা প্রদানের জন্য এখনও ছাড়পত্র পায়নি স্পেসএক্স। দেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক পরিষেবা অনুমোদনের বিষয়ে খুবই সতর্ক ভারত সরকার। অতীতে মাস্ক একাধিক বার স্টারলিঙ্ক পরিষেবার অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র তার জন্য দরজা খুলেছে বলে কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। দুই সংস্থার সঙ্গে স্টারলিঙ্কের চুক্তিতেও বলা হয়েছে, বিষয়টি অনুমোদন সাপেক্ষ।
বস্তুত, সাম্প্রতিক অতীতে ভারতীয় দুই প্রতিপক্ষ টেলিকম সংস্থা এয়ারটেল এবং জিয়ো সমান ভাবে সরব হয়েছে স্টারলিঙ্ক প্রসঙ্গে। দুই সংস্থাই কৃত্রিম উপগ্রহ নির্ভর পরিষেবার স্পেকট্রাম বিতরণের জন্য নিলামের দাবি তুলে আসছিল। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, দুই সংস্থাই মনে করছিল, প্রশাসনিক স্তর থেকে স্টেকট্রাম বরাদ্দ করা হলে মাস্কের সংস্থা তুলনামূলক সস্তায় তা পেয়ে যেতে পারে।
মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স-ই স্টারলিঙ্ক পরিষেবা দেয় বিশ্ব জুড়ে। ইতিমধ্যেই এই পরিষেবা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে গ্রাহকেরা দ্রুত গতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করে থাকে। যে হেতু এটি কোনও ফাইবার তারের মাধ্যমে পরিষেবা প্রদান করে না, তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেই পরিষেবা পৌঁছোতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও পরিষেবা ব্যাহত হয় না বলে দাবি সংস্থার।
মার্কিন ওই সংস্থার সঙ্গে দুই ভারতীয় সংস্থার গাঁটছড়ার কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই ইলনের স্টারলিঙ্ককে ভারতে স্বাগত জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রেলমন্ত্রীও তিনিই। সমাজমাধ্যমে ওই পোস্টে অশ্বিনী জানান, প্রত্যন্ত এলাকায় রেলের প্রকল্পে এটি কার্যকর হবে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্টারলিঙ্ককে ভারতে স্বাগত জানানো ওই পোস্টটি সমাজমাধ্যম থেকে মুছে দেওয়া হয়। অশ্বিনীর সমাজমাধ্যমের পাতায় ওই পোস্টটি আর দেখা যাচ্ছে না।