এআইইউডিএফের সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনী মিত্রতায় আগ্রহী নয় বলে ঘোষণা করল কংগ্রেস। অন্য দিকে জোট গড়া নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি— দুই তরফের ডাকই প্রত্যাখ্যান করল অসম গণ পরিষদ। তাই, নিবার্চনের মাস তিনেক আগেও অসমে রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না।
কংগ্রেস এআইইউ়ডিএফের সঙ্গে জোট না গড়লে বিজেপির দিসপুর দখল ঠেকানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন এআইইউডিএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমল। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও জানিয়েছিলেন, মিত্রতার জন্য কংগ্রেসের দরজা খোলা। কিন্তু দলীয় আলোচনার পরে সেই খোলা দরজাই আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হুসেন বলেন, ‘‘কংগ্রেস বিধানসভার ১২৬টি আসনেই প্রার্থী দেবে। আমাদের শক্তি ও পরিকাঠামো অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। সংখ্যালঘু এলাকাতেও দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এআইইউ়ডিএফ। বিধানসভা নির্বাচনে তারা ১০টি আসনও পাবে কি না— তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’’ সম্প্রতি করিমগঞ্জের বারইগ্রাম জেলা পরিষদ উপ-নির্বাচন ও লামডিংয়ের পঞ্চায়েত সদস্য পদের উপ-নির্বাচনে এআইইউডিএফ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হুসেন দাবি করেন, ভোটারদের চরিত্র বুঝতে পারছে না এআইইউডিএফ। কংগ্রেসই শেষ হাসি হাসতে চলেছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর দিল্লিতে প্রশান্ত কিশোর, নীতীশ কুমারদের মধ্যস্থতায় হওয়া আসন সমঝোতার আলোচনায় আজমল রাজ্যে ৫০ শতাংশ মুসলিম ভোট থাকা ৩৫টি কেন্দ্র চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত আজমলের দাবি মানতে রাজি হয়নি। অবশ্য করিমগঞ্জের বিধায়ক তথা শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ এখনও বলেছন, ‘‘আমি কংগ্রেস ও এআইইউ়ডিএফের মধ্যে মিত্রতা চাই। দল চাইলে আমি ফের মধ্যস্থতা করতে রাজি।’’
এ দিকে দলীয় সূত্রে খবর, প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর প্রতিনিধিরা গোপনে অসম সফর করে যে রিপোর্ট তৈরি করেছেন— তা দেখে এআইসিসি ও নীতীশ কুমারের কপালে ভাঁজ পড়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গগৈ ও তাঁর মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের বিভিন্ন হঠকারি মন্তব্য, দুর্নীতির অভিযোগ, অসমের অনুন্নয়ন এবং বিজেপি-হাওয়ার ফলে অসমে গগৈ সরকারের জনপ্রিয়তা দ্রুত কমছে। এই পরিস্থিতিতে জোট হলেও গগৈ সরকারকে বাঁচানোর নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না প্রশান্ত।
কংগ্রেস ও বিজেপি— দু’দলই আঞ্চলিক দল অসম গণ পরিষদকে জোটে টানতে চেয়েছিল। কিন্তু দিল্লিতে কয়েক দফার বৈঠকের পরেও প্রশান্ত অসম গণ পরিষদকে দলে টানতে পারলেন না। গত কাল মরিগাঁও জেলার জাগিরোডে হওয়া অগপর সভায় সভাপতি অতুল বরা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত জানিয়েছেন, অসম গণ পরিষদ কোনও সর্বভারতীয় দলের সঙ্গে মিত্রতা করবে না। মহন্ত জানান, দিল্লিতে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে আলোচনা হলেও সেখানে মিত্রতা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অসমের রাজনৈতিক অবস্থার কথা আলোচনা করা হয়েছে। অগপ নেতৃত্ব কিশোরকে জানিয়ে দিয়েছেন বিহারের মতোই অসমেও পরিবর্তন প্রয়োজন। কিন্তু দলের নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে তাঁরা মিত্রতায় যাবেন না। জনসভায় প্রফুল্ল মহন্ত, অতুল বরারা রাজ্যের অনুন্নয়ন, অনুপ্রবেশ বন্ধে ব্যর্থতা, বাংলাদেশিদের সুরক্ষা দেওয়া, কেন্দ্রের টাকার হিসেব দিতে না পারা এবং রাজ্যকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য গগৈ সরকারে দায়ী করেন। একই ভাবে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারেরও সমালোচনা করেন তাঁরা। মহন্ত বলেন, ‘‘সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলি এক দিকে আমাদের অস্তিত্বহীন বলে ব্যাঙ্গ করছে, অন্য দিকে হাতির পিঠে (অগপর প্রতীক হাতি) চড়ে দিসপুর দখলের স্বপ্ন দেখছে। আমরা শুধুমাত্র অসমের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তাই তাঁদের শুভবুদ্ধির ভরসাতেই লড়তে নামব।’’
পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে— তাতে গগৈয়ের স্বপ্নের মহাজোট আপাতত বিশ বাঁও জলে। গগৈ ও আজমল ব্যক্তিগতভাবে জোটের বিরোধী নন। কিন্তু আসন সমঝোতা করলে দলের একাধিক তাবড় নেতা প্রার্থী হতে পারবেন না— তাই তাঁরা বেঁকে বসেছেন। জোট হলে হিন্দু ভোটেও তার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে কংগ্রেসের আশঙ্কা। অগপ নেতৃত্বও কংগ্রেস ও বিজেপিকে সমর্থন করার প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত। বিশেষ করে কংগ্রেস বরাবর অগপর ‘চিরশত্রু’ বলেই পরিচিত। ভোটের আগে তাদের হাত ধরলে অগপর আরও ক্ষতির সম্ভাবনা। আপাতত গগৈ ও আজমল— দুই নেতাই প্রশান্ত কিশোরের ‘হাতযশ’-এর ভরসায় বসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy