‘ইংরেজি বলতে মানুষ লজ্জা পাবেন, এমন সমাজের নির্মাণ আর দেরি নেই’— এই মন্তব্য করে অমিত শাহ গোটা বিরোধী শিবিরের নিশানার মুখে পড়লেন। অমিত শাহের এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে খোদ রাহুল গান্ধী সরব হয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে লোকসভার বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, আজকের দুনিয়ায় চাকরি, রোজগার, নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য মাতৃভাষার সঙ্গে ইংরেজি শেখাও জরুরি। কিন্তু বিজেপি-আরএসএস চায় না যে, ভারতের গরিব ছেলেমেয়েরা ইংরেজি শেখে, প্রশ্ন করে, সমানে সমানে জীবনে এগোতে পারে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের জীবনকালেই দেখা যাবে, ইংরেজি বলতে মানুষ লজ্জা পাবেন। এমন সমাজের নির্মাণ আর দেরি নেই।’’ তার পর থেকেই শাহের এই মন্তব্যের কড়া নিন্দা শুরু হয়েছিল। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, সম্প্রতি জি-৭ গোষ্ঠীর বৈঠকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইংরেজি বলা নিয়ে সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ করা হয়েছে। শাহ সম্ভবত তারই জবাবে বলেছিলেন, আগামী দিনে ইংরেজি বলিয়ে-কইয়েরা লজ্জা পাবেন। কিন্তু আজ রাহুল গান্ধী পাল্টা যুক্তিতে ইংরেজির প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘ইংরেজি লজ্জা নয়, শক্তি। শিকল নয়, শিকল ভাঙার অস্ত্র। দেশের প্রতিটি শিশুকে ইংরেজি শেখাতে হবে। তা হলেই সকলকে সমান সুযোগ দেওয়া যাবে।’’
ডিএমকে নেতা সর্বানন আন্নাদুরাই মনে করিয়ে দিয়েছেন, মোদী সরকারের সমস্ত শীর্ষ মন্ত্রী, সে তিনি পীযূষ গয়াল, রাজনাথ সিংহ, নির্মলা সীতারামন, শিবরাজ সিংহ চৌহান হোন বা জিতেন্দ্র সিংহ, সকলেই নিজেদের ছেলেমেয়েকে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে পাঠিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি নেতারা চান না, আমজনতার ছেলেমেয়েরা ইংরেজি শিখুক। সর্বাননের প্রশ্ন, ‘‘অমিত শাহের ছেলে, আইসিসি-র প্রধান জয় শাহ কি একাই ইংরেজি বলবে?” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘‘অমিত শাহ পহলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলা ঠেকাতে পারেন না। সন্ত্রাসবাদীদের ধরতে পারেন না। মণিপুরে শান্তি ফেরাতে পারেন না। এ দিকে ইংরেজির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন।’’ সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার মতে, ‘‘অমিত শাহের ইংরেজির বিরোধিতা আসলে জাতীয় স্তরে ইংরেজির বদলে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিজেপি-আরএসএসের কর্মসূচিরই অঙ্গ।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)