মহারাষ্ট্র। বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুরা। এ বার কি হরিয়ানা? না কি নরেন্দ্র মোদীর বিধানসভা কেন্দ্র বারাণসী? ভোটার তালিকায় ‘কারচুপি’ নিয়ে ‘হাইড্রোজেন বোমা’ ফাটতে চলেছে বলে রাহুল গান্ধী বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিলেন।
বিহারে ‘ভোট চোর, গদ্দি ছোড়’ স্লোগান তুলে ভোটার অধিকার যাত্রার শেষে আজ পটনার জনসভায় রাহুল বলেন, বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে কী ভাবে ভোটার তালিকায় এক লক্ষ ভুয়ো ভোটার যোগ করে বিজেপি লোকসভা ভোটে জিতেছিল, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। সেটা যদি ‘পরমাণু বোমা’ হয়, তা হলে তার থেকেও ভয়ঙ্কর ‘হাইড্রোজেন বোমা’ আসতে চলেছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সম্ভবত হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচন অথবা লোকসভা নির্বাচনে বারাণসীর ভোটে কী ভাবে বিজেপি কারচুপি করে জিতেছিল, তার ‘প্রমাণ’ দিতে চলেছেন রাহুল। রাহুলের অর্থপূর্ণ মন্তব্য, “এই হাইড্রোজেন বোমা ফাটলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না।” চিন সফররত প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে রাহুল বলেন, “চিনেও লোকে ভোট চোর, গদ্দি ছোড় বলছে। আমেরিকাতেও বলছে।”
লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী শিবির হারলেও বিজেপির আসন কমিয়ে তাদের শরিক-নির্ভর করে ফেলেছিল। কিন্তু মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ভোটে জিতে বিজেপি ফের ঘুরে দাঁড়ায়। রাহুল আজ ফের অভিযোগ তুলেছেন, মহারাষ্ট্রের ভোটে বিজেপি কারচুপি করেছিল।
আজ রাহুল এবং তেজস্বী যাদব পটনা থেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা বিজেপিকে ‘ভোট চুরি’ করতে দেবেন না। আরজেডি নেতা তেজস্বী বলেন, “বিজেপি নেতাদের বুদ্ধি হাঁটুতে থাকে। বিহারের লোক উড়ন্ত পাখিকেও হলুদ মাখিয়ে দিতে পারে। নরেন্দ্র মোদী ভাবছেন, গুজরাতে ফ্যাক্টরি, বিহারে ভিকট্রি। তা হবে না।” ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ ছেড়ে বিজেপির হাত ধরে ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নীতীশ কুমারকে নিশানা করে তেজস্বী বলেন, “উনি এত বার ডিগবাজি খেয়েছেন যে, মস্তিষ্ক চক্কর খেয়ে গিয়েছে। বোধবুদ্ধি কাজ করছে না। আমরা ক্ষমতায় এলে যা করব বলছি, সেটাই নকল করছেন। বিহারে নকল মুখ্যমন্ত্রী চাই, না আসল?”
বিহারে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় পরিমার্জনের নামে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে সাসারাম থেকে শুরু ১৬ দিনের ভোটার অধিকার যাত্রা সোমবার পটনায় শেষ হয়েছে। গান্ধী ময়দানে গান্ধী মূর্তিতে মালা দিয়ে রাহুল, তেজস্বী, সিপিআই-এমএলের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, বিকাশশীল ইনসান পার্টির মুকেশ সাহনি-র মতো বিহারের মহাগঠবন্ধনের নেতাদের সঙ্গে জেএমএম-এর হেমন্ত সোরেন, শিবসেনা-উদ্ধবের সঞ্জয় রাউত, এনসিপি-শরদের জিতেন্দ্র আওয়াঢের মতো ইন্ডিয়া জোটের নেতারা অম্বেডকর পার্ক পর্যন্ত যাত্রা করেন। পুলিশ অবশ্য পটনার ডাকবাংলোর মোড়েই বিরোধীদের পথ আটকায়। সেখানেই জনসভা হয়।
তৃণমূলের ইউসুফ পাঠান জনসভার গোড়াতেই জানান, তিনি মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূত হিসেবে বিহারে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের তৃণমূল নেতা ললিতেশ ত্রিপাঠী। গান্ধী ময়দান থেকেই প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ছিল বাড়তি উন্মাদনা। যাত্রার আগে তেজস্বী ইউসুফদের নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। লালুপ্রসাদের সঙ্গেও তাঁদের কুশল বিনিময়, একসঙ্গে ছবি তোলা হয়। রাহুলও মঞ্চে বসে কিছু ক্ষণ ইউসুফের সঙ্গে কথা বলেন। ললিতেশ বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় সংশোধনের পরেও বিহারের মাত্র ৩৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ভুয়ো ভোটার ধরা পড়েছে। নির্বাচন কমিশন বিজেপির ভোট চুরির শরিক হয়ে উঠেছে।”
বিজেপি আজ পাল্টা অভিযোগ তুলেছে, কংগ্রেস, আরজেডি-সহ বিরোধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধরি বলেন, কংগ্রেস-আরজেডি যতই সংবিধানকে হত্যার অভিযোগ তুলুক, মানুষ জানে, গণতন্ত্রকে কারা হত্যা করেছিল। ভোটার অধিকার যাত্রার সভা থেকে নরেন্দ্র মোদীর মা সম্পর্কে অপশব্দ প্রয়োগের বিরুদ্ধে সরব বিজেপি পটনা জুড়ে ‘মায়ের অপমান’ লেখা হোর্ডিং লাগিয়েছে। আজ রাহুলের বক্তৃতার শেষে দুই বিজেপি কর্মী তাঁকে কালো পতাকা দেখান। রাহুল বলেন, “বিহারের বাচ্চাকাচ্চাও ভোট চোর, গদ্দি ছোড় বলছে। আর বিজেপি কালো পতাকা দেখাচ্ছে। বিজেপি সতর্ক হোক, হাইড্রোজেন বোমা আসছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)