বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে লোকসভা ভোট এবং তার পরে কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে নির্বাচন কমিশন কারচুপি করেছে বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। উদাহরণ দিয়েছিলেন কর্নাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভার! লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে ওই এলাকায় ১৫০ বর্গফুটের একচিলতে একটি ঘরে ৮০ জন ভোটারের নাম নথিভুক্তির তথ্যপ্রমাণ মিলেছে বলে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ প্রকাশিত খবরে দাবি।
লোকসভা নির্বাচনে কর্নাটকে ভোট চুরির উদাহরণ দিতে গিয়ে রাহুল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভায় ভয়ঙ্কর চুরি হয়েছে। সেখানে এক লক্ষেরও বেশি ভোট চুরি হয়েছে।’’ তিনি জানান, বেঙ্গালুরুর ওই লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস পেয়েছিল ৬ লক্ষ ২৬ হাজার ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৬ লক্ষ ৫৮ হাজার ভোট। হারজিতের ব্যবধান ছিল ৩২ হাজারের সামান্য বেশি। আর শুধু মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনে দুই দলের তফাত ছিল ১ লক্ষ ১৪ হাজারের বেশি ভোট। বিধানসভায় মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা এমনকি, লোকসভা ভোটের আগে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা ভোটেও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকেরা লোকসভার বিরোধী দলনেতার কাছে অভিযোগের বিষয়ে হলফনামা-সহ তথ্যপ্রমাণ চান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে রাহুল অসম্মান করতে চাইছেন বলে কমিশনের আধিকারিকেরা অভিযোগ করেন। কিন্তু কর্নাটকের রাজধানী শহরের মহাদেবপুরা বিধানসভায় রাহুলের দেওয়া ঠিকানায় খুঁজতে গিয়ে ৪৭০ নম্বর বুথের আউটার রিং রোডের একটি বাড়ির দেড়শো বর্গফুটের ঘর থেকে ৮০ জন ভোটারের ‘সন্ধান’ মেলায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ৩৫ নম্বর মুনি রেড্ডি গার্ডেনের ওই বাড়ির ঠিকানায় নিবন্ধিত ভোটারদের কেউই সেখানে থাকেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ফলে রাহুলের অভিযোগ সত্যতা পেয়েছে।
এমনকি, ওই বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা দীপঙ্করও সেখানকার স্থায়ী নিবাসী নন! তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বলে সরকারি তথ্যে জানা গিয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী দীপঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি তাঁর বাড়ির ঠিকানায় নথিভুক্ত ভোটারদের চেনেন না! মহাদেবপুরা-সহ কর্নাটক জুড়ে ভোটার তালিকায় কারচুপির সমীক্ষা করতে ইতিমধ্যেই সে রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের কাছে বার্তাও পাঠিয়েছেন রাহুল। তাঁর অভিযোগ, ওই বিধানসভা আসনের প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ ভোটারের মধ্যে অন্তত এক লক্ষ ২৫০টি ভোট ভুয়ো। এর মধ্যে একাধিক জায়গায় নাম রয়েছে ১১,৯৬৫ জনের। ভুয়ো ও অস্তিত্বহীন ঠিকানায় জাল ভোটার ৪০০০৯। একটি মাত্র ঠিকানায় নথিভুক্ত ভুয়ো ভোটার (৩৫ নম্বর মুনি রেড্ডি গার্ডেনের বাড়িটির মতো) ১০৪৫২। ভোটার তালিকায় ভুল ছবিযুক্ত ভোটার ৪১৩২ এবং ‘নতুন ভোটার’ হিসাবে নাম নথিভুক্ত করার ফর্ম তুলে জালিয়াতি করে সচিত্র পরিচয়পত্রধারী ৩৩৯৬২ জন ভোটার রয়েছেন। ‘প্রথম ভোটার’ হিসাবে ৬৫, ৭০, ৮০ এমনকি ৯৫ বছরের ভোটারের নামও মহাদেবপুরায় নথিভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ।