Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সুষমা-বসুন্ধরা নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছে কংগ্রেস, কাল ফের নথি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মৌন! কিন্তু সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে ঢোল বেজেই চলেছে! ধারাবাহিকের আজকের পর্বে কংগ্রেস টেনে বের করল রাজস্থানের ঢোলপুর প্রাসাদের হস্তান্তর নিয়ে বিতর্কিত কিছু নথি। অভিযোগ হল, সরকারি মালিকানায় থাকা সেই প্রাসাদকে ব্যক্তি মালিকানায় এনেছেন বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ১৯:২৫
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মৌন!

কিন্তু সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে ঢোল বেজেই চলেছে!

ধারাবাহিকের আজকের পর্বে কংগ্রেস টেনে বের করল রাজস্থানের ঢোলপুর প্রাসাদের হস্তান্তর নিয়ে বিতর্কিত কিছু নথি। অভিযোগ হল, সরকারি মালিকানায় থাকা সেই প্রাসাদকে ব্যক্তি মালিকানায় এনেছেন বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। তার পর তাঁর পুত্র তথা বিজেপি সাংসদ দুষ্মন্ত সিংহ ও ললিত মোদী মিলে সেটিকে একটি বিলাসবহুল হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত করেছেন। যার নাম রাখা হয়েছে রাজনিবাস হোটেল। বসুন্ধরার বিরুদ্ধে নয়া এই বিতর্ক উস্কে দিয়েই আজ ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে টিপ্পনি কেটেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ঠিক এক বছর আগে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, দুর্নীতির প্রশ্নে তিনি বিজেপি বা এনডিএ-র সদস্যেরও রেয়াত করবেন না। ‘না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা’! কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাকের ডগায় দিব্যি খাওয়াদাওয়া চলছে বিজেপি-তে!

শুধু বসুন্ধরাই নন, কংগ্রেস সরব হয়েছে আর একটি বিষয়েও। ললিত মোদীর পাসপোর্ট ও অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়ে তথ্য আইনে যে আবেদন করা হয়েছিল, বিদেশ মন্ত্রক তা খারিজ করে দেয়। আজ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ললিত মোদীকে সুষমা স্বরাজের সাহায্য করা নিয়ে তিনি সাতটি প্রশ্ন তুলেছিলেন। তথ্য আইনে সেগুলির জবাব বিদেশ মন্ত্রকের কাছে জানতেও চাওয়া হয়েছিল। তাঁর প্রশ্ন, সরকার কেন এই আবেদন আটকে দিল?

যদিও ঢোলপুর প্রাসাদ নিয়ে কংগ্রেসের এই অভিযোগের জবাবে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতারা কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু বসুন্ধরার ঢাল হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ খণ্ডন করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি অশোক পারনামি। তিনি দাবি করেন, আদালতের রায়েই প্রাসাদটির মালিকানা পেয়েছেন দুষ্মন্ত সিংহ। এটা সরকারি সম্পত্তি নয়, রাজা দুষ্মন্ত সিংহেরই সম্পত্তি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পারণামি বলেন, ব্যাপারটা আদতে রাজ ঘরানার অন্দরমহলের বিবাদ। বসুন্ধরা ও তাঁর স্বামী হেমন্ত সিংহের বিবাহবিচ্ছেদের সময় সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে টানাপড়েন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। আড়াইশো কোটি টাকারও বেশি সেই সম্পত্তির বিবাদ নিয়ে শেষ পর্যন্ত বনিবনা হয়। তাতে হেমন্ত নিজেই দুষ্মন্ত সিংহকে ঢোলপুর প্রাসাদের মালিকানা ছেড়ে দেন। নিজের কাছে রাখেন দিল্লিস্থিত কিছু সম্পত্তি। তাই কংগ্রেসের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কংগ্রেসের অবশ্য অভিযোগ, এ ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে বিজেপি। কংগ্রেস জানিয়েছে, আগামিকাল এই ব্যাপারে আরও কিছু নথি প্রকাশ করবে।

প্রশ্ন হল, ঢোলপুর প্রাসাদের প্রসঙ্গটি কেন প্রাসঙ্গিক?

কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, প্রাক্তন আইপিএল কমিশনার ললিত মোদী কালো টাকার কারবার, বিদেশি মুদ্রা লেনদেনে অনিয়ম সমেত আর্থিক দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত এবং ফেরার। ইতিমধ্যেই বিরোধীরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সংসদের বাদল অধিবেশনও পণ্ড করার চেষ্টায় রয়েছে তারা। এর মধ্যেই সোমবার মোদীর স্বপক্ষে মুখ খুললেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংহ। ললিত মোদী বিতর্কে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পেয়ে একটি আরটিআই দায়ের করা হয়। তার জবাবে এ দিন ভি কে সিংহ বলেন, ‘‘সব বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো জরুরি নয়। সঠিক সময় এলেই প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলবেন।’’ অভিযোগ, সরকারি পদের অপব্যবহার করে ললিত মোদীকে পালিয়ে থাকতে সাহায্য করেছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। সুষমা-র স্বামী-কন্যার সঙ্গে যেমন ললিত মোদীর আর্থিক লেনদেন ও সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তেমনই বসুন্ধরার সঙ্গে ললিতের আর্থিক স্বার্থ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই যে ভালমানুষি বা ব্যক্তিগত স্তরে ললিত মোদীকে সাহায্যের কথা সুষমা ও বসুন্ধরা-রা বলছেন তা সাজানো গল্প। আসল ব্যাপারটা হল নিতান্তই পাওনাগণ্ডার।

তবে কৌশলগত ভাবে সুষমার তুলনায় বসুন্ধরার ইস্তফা নিয়ে এখন কংগ্রেস বেশি চাপ বাড়াচ্ছে। কারণ, এক তো কংগ্রেস দেখতে পারছে, সুষমা স্বরাজকে বিজেপি নেতৃত্ব কিছুটা আড়াল করলেও বসুন্ধরাকে তাঁর নিজের প্রতিরক্ষা নিজেকেই করতে বলেছেন বিজেপি ও সঙ্ঘের শীর্ষ সারির নেতারা। তা ছাড়া দুটো বিষয় নিয়ে একসঙ্গে জোর লাগানোর তুলনায় একটা একটা করে উইকেট ফেলার চেষ্টা করাই ভাল বলে তাঁদের মত।

সেই কৌশলেই আজ বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির ঢোলে ফের কাঠি মেরেছে কংগ্রেস। জয়রাম বলেন, বসুন্ধরার সঙ্গে ললিত মোদীর আর্থিক স্বার্থ কতটা গভীর তা দু’টি ঘটনায় পরিষ্কার। আগেই জানা গিয়েছে, ললিত মোদীর কোম্পানি আনন্দ হোটেলস প্রাইভেট লিমিটেড মরিশাসের একটা ভুঁইফোড় সংস্থা থেকে ২১ কোটি টাকা লগ্নি পেয়েছিল। তার পর ললিত মোদীর ওই সংস্থা বসুন্ধরা-পুত্র দুষ্মন্ত সিংহের হোটেল ব্যবসায় (নিয়ন্ত হেরিটেজ হোটেল) সাড়ে ১১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। শুধু তাই নয়, দুষ্মন্ত সিংহের নিয়ন্ত হেরিটেজ হোটেল সংস্থার দশ টাকা মূল্যের শেয়ার প্রায় ৯৬ হাজার টাকা প্রতি শেয়ার মূল্যে কিনেছিলেন মোদী। দু’বছর আগে রাজস্থান বিধানসভা ভোটের সময় যে হলফনামা দিয়েছিলেন তাতেও স্পষ্ট লেখা ছিল নিয়ন্ত হেরিটেজ হোটেলের ৩৩৮০টি শেয়ার রয়েছে বসুন্ধরার।

আবার এখন দেখা যাচ্ছে, ঢোলপুর হোটেলের মালিকানা পরিবর্তন করেও মোদীর সঙ্গে হোটেল তৈরি করেছেন বসুন্ধরা ও দুষ্মন্ত। এ ব্যাপারে দুটি হলফনামা, খাজনার কাগজ এবং দুটি জবানবন্দি আজ প্রকাশ করে কংগ্রেস দাবি করে, ১৯৫৪ সালে ঢোলপুর রাজওয়াড়া ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। তৎকালীন রাজা রানা উদয়ভান সিংহ তথা বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার দাদাশ্বশুর ব্যক্তিগত মালিকানায় কিছু সম্পত্তি রেখে বাকিটা সরকারকে দান করেছিলেন। তার পর থেকেই ঢোলপুর প্রাসাদ সরকারি সম্পত্তি বলেই বিবেচিত হয়েছে। ২০১০ সাল পর্যন্ত ৬টি নথি পাওয়া যাচ্ছে যা প্রমাণ করে ঢোলপুর প্রাসাদ সরকারের এক্তিয়ারেই ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই প্রাসাদের মালিকানা পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত মালিকানায় নিয়ে আসেন বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। বসুন্ধরা-পুত্র দুষ্মন্ত সিংহ ও ললিত মোদী মিলিত ভাবে সেটিকে এখন একটি বিলাসবহুল হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত করেছেন। যার নাম রাখা হয়েছে রাজনিবাস হোটেল! এ ব্যাপারে আদালতে দেওয়া বসুন্ধরার স্বামী হেমন্ত সিংহের একটি বিবৃতির প্রতিলিপিও আজ প্রকাশ করে কংগ্রেস। তাতে বলা হয়েছে, ’৮০ সালের ১১ নভেম্বর হেমন্ত আদালতকে জানান, প্রাসাদটি এখন সরকারের সম্পত্তি। তা ছাড়া ২০০৫ সালে আদালতে দেওয়া এক হলফনামাতেও সে কথা স্বীকার করে নেন স্বয়ং বসুন্ধরা। পরবর্তী কালে খাজনা আদায় সংক্রান্ত কাগজপত্রেও সে কথার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বসুন্ধরা মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মালিকানা পরিবর্তনে সক্রিয় ছিলেন। তার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরবর্তীকালে কার্যসিদ্ধি করেন।

এর পরই অবশ্য পাল্টা কাগজপত্র দেখায় বসুন্ধরা শিবির। তাদের এ-ও বক্তব্য, সরকারি পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য কয়েক বছর আগে ঢোলপুর প্রাসাদের এক পাশের জমি অধিগ্রহণ করেছিল রাজস্থান প্রশাসন। সে জন্য সরকার থেকে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে দুষ্মন্ত সিংহকে। তা হলে কি কংগ্রেসের অভিযোগ দাঁড়াচ্ছে, না কি দাঁড়াচ্ছে না? জবাবে জয়রাম বলেন, ‘‘কেবল একপেশে একটা ছবি দেখাতে চাইছেন বসুন্ধরার অনুগামীরা। অনিয়ম যে এ ক্ষেত্রে হয়েছে সন্দেহ নেই। তা ছাড়া মূল ব্যাপার হল, ললিত মোদীর সঙ্গে লেনদেন। তা কি অগ্রাহ্য করতে পারছেন বসুন্ধরা? বরং এ দিক-ও দিক করে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। কিন্তু হাতেগরম কাগজপত্র যখন রয়েছে তখন মানুষকে বোকা বানানো সহজ হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE