E-Paper

যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে জায়গা ছাড়তে হবে, মমতাকে সমর্থন শশী-মণীশদের

কংগ্রেস এত দিন মমতার এই কথায় ‘অশনি সঙ্কেত’ দেখছিল। এখন কংগ্রেসের নেতারাই প্রকাশ্যে মমতার এই ‘বিরোধী ঐক্যের সূত্র’-কে সমর্থন করছেন।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৩২
Mamata Banerjee and Shashi Tharoor.

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শশী তারুর। ফাইল চিত্র।

এত দিন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। কংগ্রেসও এত দিন মমতার এই কথায় ‘অশনি সঙ্কেত’ দেখছিল। এখন কংগ্রেসের নেতারাই প্রকাশ্যে মমতার এই ‘বিরোধী ঐক্যের সূত্র’-কে সমর্থন করছেন।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বিরোধী ঐক্য নিয়ে অন্যান্য বিরোধী দলের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন। ঠিক সেই সময়ে শশী তারুর, মণীশ তিওয়ারির মতো কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদেরা প্রকাশ্যে সওয়াল করতে শুরু করেছেন, কংগ্রেস যেখানে দুর্বল, সেখানে অন্য দলকে জায়গা ছেড়ে দিক। যাতে বিজেপি-বিরোধী ভোটে বিভাজন না হয়। একই ভাবে যে সব রাজ্যে সরাসরি বিজেপি বনাম কংগ্রেসের লড়াই, সেখানে অন্য আঞ্চলিক দল গিয়ে বিরোধী ভোটে ভাগ বসাবে না। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতো রাজ্যসভার সাংসদেরাও বহু দিন ধরে একই সওয়াল করছেন।

গত বছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই মমতা বলেছিলেন, চব্বিশের লোকসভা ভোটে যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে। ভোটের আগে নয়, ভোটের পরে বিজেপিকে সরাতে জোট হবে। সেই সময়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের ধারণা ছিল, মমতা আসলে বিরোধী জোটে রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের নেতৃত্ব মেনে নিতে চাইছেন না। নিজেই নিজের নীতি মেনে চলছেন না মমতা। গোয়া, ত্রিপুরায় গিয়ে বিজেপি-বিরোধী ভোটে ভাগ বসাচ্ছেন। কিন্তু সেই সময়েই মনু সিঙ্ঘভি বলেছিলেন, বিজেপি-বিরোধী জোটে বিভাজন রুখতে সবাইকে এককাট্টা হতে হবে। কারণ বিজেপি এমনিতেই ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পায় না। কিন্তু বাকি বিরোধী ভোটের বিভাজনের ফলেই বিজেপি জিতে যায়।

এ বার একই সওয়াল করেছেন শশী তারুর ও মণীশ তিওয়ারি। খড়্গে যখন বিরোধী ঐক্য নিয়ে এম কে স্ট্যালিন, নীতীশ কুমারদের সঙ্গে দৌত্য শুরু করেছেন, তখন তারুর বলছেন, লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২০০টির মতো আসনে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই। গত লোকসভায় কংগ্রেস ৫২টি আসন জিতেছে। এখন বাকি বিরোধী দলের নেতৃত্বকে বোঝাতে হবে, যেখানে অন্যেরা শক্তিশালী, সেখানে কংগ্রেস বাকিদের জায়গা ছেড়ে দেবে। যেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী, সেখানে ওঁদেরও কংগ্রেসকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এখন প্রয়োজন হল এই ৫৪৩টি আসন ধরে ধরে খতিয়ে দেখা, কোন আসনে কোন অ-বিজেপি দলের জেতার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। সেখানে অন্য কেউ ভোটে ভাগ বসাবে না। এটা করা গেলেই বিরোধী ঐক্য বাস্তবায়িত হবে।

একই মত লোকসভার সাংসদ মণীশ তিওয়ারির। তাঁর যুক্তি, এই কাজটা রাজ্য স্তরে সব থেকে ভাল ভাবে করা সম্ভব। রাজ্য স্তরেই আসন সমঝোতা বা বোঝাপড়া সেরে ফেলতে হবে। জাতীয় স্তরে জোট করতে হলে ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরি করতে হবে। তাতে অনেক মতাদর্শগত বিরোধ চলে আসবে। সে সব মেটাতে সমস্যা হবে। তিওয়ারির মতে, এ সবের মধ্যে না গিয়ে শুধুমাত্র ‘কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন দরকার’— এইটুকু ন্যূনতম কর্মসূচি নিয়েই বিরোধীদের এককাট্টা করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনে কংগ্রেসকে এক পা পিছিয়ে দাঁড়াতে হবে।

কংগ্রেস নেতাদের মুখে তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্যের প্রতিধ্বনি শুনে তৃণমূল নেতারা উজ্জীবিত। কংগ্রেস নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ঝাড়খণ্ড থেকে মহারাষ্ট্র, বিহার থেকে তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে কংগ্রেসের রাজ্য স্তরে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট বা বোঝাপড়া রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনেও সেই জোট থাকবে। প্রশ্ন হল, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে কী হবে? রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের নেতাদের বক্তব্য, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেই এর সমাধান সূত্র খুঁজবেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Congress Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy