হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রে হেরে শিক্ষা হল কি! ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আজ বাদে কাল প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশ শুরু হয়ে যাবে। তার আগে আজ দিল্লি এসে রাজ্য কংগ্রেসের একাংশ ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) সঙ্গে জোট ভাঙার পক্ষে সওয়াল করছেন। অন্য অংশ জোটের পক্ষে হাইকম্যান্ডকে বোঝাচ্ছেন।
ঝাড়খণ্ডের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুখদেব ভগত, প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ বালমুচুদের দাবি ঝাড়খণ্ডে কংগ্রেস ক্ষয়িষ্ণু দল। সব আসনে লড়লে কংগ্রেস মজবুত হবে। আর সুবোধকান্ত সহায়দের বক্তব্য, জোট না হলে বিজেপির সামনে কংগ্রেস ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যাবে। তাঁরা চাইছেন, কংগ্রেস-জেএমএম-আরজেডি-জেডিইউ, সকলে মিলে বিজেপি-বিরোধী ভোটকে এককাট্টা করতে। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারাও ভাল মতোই জানেন, জোট গড়ে লড়লে যা-ও বা কিছু আসন পাওয়া যেতে পারে, একা লড়লে তা-ও পাবে না কংগ্রেস।
কিন্তু প্রশ্ন তা নয়। কংগ্রেসে মূল অসন্তোষের কারণ হল, নির্বাচনী জোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে রাহুল গাঁধীর অযথা গড়িমসি নিয়ে। ঝাড়খণ্ডে বিজেপি তৃণমূল স্তরে কর্মিসভা করে কার্যত নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়তে চলেছে। অথচ রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস এখনও জোটের সিদ্ধান্তই নিয়ে উঠতে পারেনি। তা নিয়ে টালবাহানা চলছে।
ঝাড়খণ্ডে এই মুহূর্তে জেএমএম-কংগ্রেস জোট সরকার চলছে। তাতে লালুপ্রসাদের সমর্থনও রয়েছে। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বি কে হরিপ্রসাদ গোড়া থেকেই এই জোট অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে। বিহার ভোটের পর এই জোটে নীতীশ কুমারের জেডিইউ-কেও রাখতে সক্রিয় হরিপ্রসাদ। একটা সময় ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার বাবুলাল মরান্ডিকেও জোটে সামিল করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে গিয়ে হরিপ্রসাদ জানিয়ে দেন, হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বেই ভোটে লড়বে জেএমএম-কংগ্রেস মহাজোট। হরিপ্রসাদের বিরুদ্ধে জেএমএমের কাছে বিকিয়ে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে জোট-বিরোধী নেতারা দেখাও করেন।
হরিপ্রসাদের বক্তব্য খতিয়ে দেখতে গত কালই এআইসিসি-র তরফে দিল্লি থেকে রাঁচিতে পাঠানো হয় তারাচাঁদ ভগোরাকে। সেখানেও সুখদেব ভগত, প্রদীপ বালমুচুরা জোটের বিরুদ্ধেই তাঁকে বোঝান। গত কাল সন্ধেয় মনে হচ্ছিল, কংগ্রেসের একলা চলার সিদ্ধান্ত তখনই ঘোষণা করা হবে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের চাপেই ঘটনা আর তত দূর গড়ায়নি। জোটপন্থী সুবোধকান্ত সহায়, মান্নান মল্লিক কিংবা সরফরাজ আহমেদরা জোটের পক্ষে পাল্টা চাপ তৈরি করেন।
এআইসিসি সূত্রের খবর, কংগ্রেসের তরফে ৩৬টি আসনে লড়ার জন্য জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কংগ্রেসও লড়তে চায় ৩৬টি আসনে। ৮১ আসনের বিধানসভায় বাকি ৯টি আসন আরজেডি এবং জেডিইউ-কে দিতে চায় কংগ্রেস। কিন্তু হেমন্ত সোরেন চান অন্তত ৫০টি আসন। রাহুলকে হরিপ্রসাদ জানিয়েছেন, ৩৬টি থেকে বাড়িয়ে আরও কিছু আসন জেএমএম-কে দেওয়া হোক। কারণ বিজেপির যাত্রাভঙ্গ করাই এখন কংগ্রেসের লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু রাহুল-সনিয়া এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যেমন দেরি করছেন, তেমনই তার সুযোগ নিয়ে রাজ্যের কিছু কংগ্রেস নেতা জোট ভাঙতে চাইছেন। গত কালই সুবোধকান্ত নয়াদিল্লি থেকে টেলিফোনে সাংবাদিকদের জানান, “রাজ্যের কিছু নেতা ভোটে লড়ার জন্য দলের সর্বনাশ করতে চাইছেন। আমি এখানে আলোচনার জন্য এসেছি। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’
যদিও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হরিপ্রসাদ আজও বলেন, “শেষ পর্যন্ত জোট অটুট রাখারই চেষ্টা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এক দু’দিনের মধ্যে রফাসূত্র চূড়ান্ত হয়ে যাবে।” তবে ঝাড়খণ্ডের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারছেন না দলের একাধিক শীর্ষ নেতা। ঘরোয়া আলোচনায় ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্যের কটাক্ষ, রাহুল বোধহয় চাইছেন, কংগ্রেস সব রাজ্যে হেরে যাক। তার পর শূন্য থেকে তিনি শুরু করবেন। এ জন্য ভোট বাদ দিয়ে এখন সাংগঠনিক নির্বাচন নিয়ে তিনি বেশি ব্যস্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy