জ়ুবিন গর্গের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসম জুড়ে আবেগঘন পরিস্থিতির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত শিল্পপতি উদ্যোগপতি গৌতম আদানির দিল্লির বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা গোপনে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ তুলল বিরোধীরা। সব সময় প্রচারের আলোয় থাকতে সক্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকের পরেই আদানির প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বড়োভূমির সাড়ে চার হাজার বিঘা জমি ওই শিল্পগোষ্ঠীকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অসম জাতীয় পরিষদের সভাপতি লুরিণজ্যোতি গগৈ দাবি করেন, কোকরাঝাড়ে জনজাতিদের দখলে থাকা প্রায় ৪৫০০ বিঘা জমি বিঘাপ্রতি মাত্র এক টাকা দরে আদানি গোষ্ঠীকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভূমি উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই এই বিশাল পরিমাণ জমি কোন প্রক্রিয়ায়, কার নির্দেশে এবং কোন উদ্দেশ্যে বরাদ্দ করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন লুরিণ। বিরোধীদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের জন্য টেন্ডার ডাকা, অনুমোদন দেওয়া-সহ সব কাজই এক মাসের মধ্যে অত্যন্ত গোপনীয় ভাবে সারা হয়েছে। ৩,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আদানির প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটির জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে কুড়ি হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের কয়লা ঝাড়খণ্ড থেকে আনা হবে এবং পরিবহণে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। এ নিয়ে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের সঙ্গে হিমন্তর বৈঠক হয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ামক কমিশন ২২ অক্টোবর প্রকল্পটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৩০ পয়সা দরে কেনার অনুমোদন দিয়েছে এবং অনুমোদনের তিন দিন পরেই কমিশনের অধ্যক্ষ কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণ পদত্যাগ করেছেন।
লুরিণ বলেন, ‘‘সব কিছু নিয়েই প্রচারপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রী এত বড় প্রকল্পের বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি! এ থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছে, ওই প্রকল্পকে ঘিরে সরকার এবং আদানির মধ্যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার গোপন বোঝাপড়া হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও জেলাতেও রাজ্যের বিজেপি সরকার আদানি গোষ্ঠীকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত কয়েক হাজার বিঘা জমি দিয়েছে বলে অভিযোগ।
জ়ুবিনের মৃত্যুর পরে সপুত্র গৌতম আদানি জ়ুবিনের বাড়িতে যান। বিরোধীদের দাবি, আদানি এবং সরকার যৌথ ভাবে জনমনকে প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। জ়ুবিনের মৃত্যুতে সৃষ্ট আবেগকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করছে হিমন্তের সরকার।
অসম তৃণমূলের মুখপাত্র তথা অসম বিদ্যুৎ গ্রিড কর্পোরেশন লিমিটেডের প্রাক্তন ডিরেক্টর অভিজিৎ মজুমদারের মতে, তাপবিদ্যুতের মতো দূষণ সৃষ্টিকারী প্রকল্প নতুন করে করাই উচিত নয়। বিশেষ করে যখন কোকরাঝাড়ের পাশেই বঙ্গাইগাঁওয়ে এনটিপিসি-র আরও একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, তখন এই প্রকল্পকে পরিবেশের ছাড়পত্র দেওয়া ঠিক নয়। তাঁর প্রশ্ন, একটি বেসরকারি সংস্থাকে কী ভাবে এত পরিমাণ জমি এক টাকা দরে দিল সরকার?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)