একদিনের জন্যও ভোট-প্রচার করেননি তিনি। তবুও জিতেছেন প্রায় ১৮ হাজারের বেশি ভোটে। তিনি অনন্ত সিংহ। মোকামার বিধায়ক। পরিবারের সদস্যদের কাছে ‘রবিনহুড’, এলাকার ভোটাররা বলেন ‘ছোটে সরকার’।
জেলবন্দি অনন্তের বিরুদ্ধে পাঁচটি খুনের এবং ছ’টি খুনের চেষ্টার মামলা ঝুলছে। এ ছাড়াও, চারটি অপহরণ ও তোলাবাজির মামলা রয়েছে। নির্বাচনের আগে জেডিইউয়ের অন্যতম এই বাহুবলী বিধায়ককে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ জানিয়েছিলেন, তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই গ্রেফতার হয়েছেন অনন্ত। এরপরে দল ছেড়ে নির্দল হয়েছেন অনন্ত সিংহ। কিন্তু মোকামায় প্রভাব কমেনি তাঁর। বেউর জেলের ভিতর থেকেই ভোটে জিতেছেন তিনি।
সদ্য জিতে আসা ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় ১৪২ জনের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা রয়েছে। গত বিধানসভায় ৭৬ জনের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ ছিল। এ বারে চিহ্নিত ১৪২ জনের মধ্যে ৯৮ জনের বিরুদ্ধে আবার খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, মহিলাঘটিত গুরুতর অপরাধের মামলা চলেছে। তার মধ্যে ৭০ জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আদালতে ‘চার্জ গঠিত’ হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনে দেওয়া সকলের হলফনামা ঘেঁটে এই তথ্য সামনে এনেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সব মিলিয়ে তালিকার শীর্ষে অবশ্যই রয়েছেন ‘ছোটে সরকার’ অনন্ত সিংহ। মোট ১৬টি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বাকিদেরও অনেকেরই ৮ থেকে ১২টি অভিযোগ রয়েছে। আরজেডির বিজয়ী ৮০ জনের মধ্যে ৪৬ জন, জেডিইউয়ের ৭১ জনের মধ্যে ৩৭ জন, বিজেপির ৫৩ জনের মধ্যে ৩৪ জন, কংগ্রেসের ২৭ জনের মধ্যে ১৬ জন, সিপিআই-এমএলের তিন জন, লোকজনশক্তি পার্টির দু’জন এবং লোক সমতা পার্টির দু’জনের মধ্যে এক জনের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
দারৌলি কেন্দ্রের বিধায়ক সিপিআই (এমএল)-এর সত্যদেব রামও জেলের ভিতরে বসেই নির্বাচনে জিতেছেন। একটি খুন, তিনটি খুনের চেষ্টা-সহ কয়েকটি অপহরণের অভিযোগ রয়েছে সত্যদেবের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের বেনিয়াপুরের বিধায়ক কেদারনাথ সিংহের বিরুদ্ধে দু’টি খুনের মামলা রয়েছে। নীতীশ কুমারের দল জেডিইউয়ের কুচাইকোটের বিধায়ক অমরেন্দ্র পাণ্ডের বিরুদ্ধে সাতটি অপরাধের মামলা রয়েছে। বিজেপির টিকিটে রক্সৌল থেকে জিতেছেন নীরজকুমার সিংহ ওরফে বাবলু। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অপহরণ-সহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়াও, অনেক বাহুবলী সরাসরি নির্বাচনে লড়েননি। কেউ তাঁর স্ত্রীকে নির্বাচনের ময়দানে নামিয়েছেন, কেউ বা পরিবারের অন্য সদস্যকে। রুপৌলির জেডিইউ বিধায়ক বিমা ভারতী, খাগরিয়ার জেডিইউ বিধায়ক পুনম যাদব এবং দারাউদার জেডিইউ বিধায়ক কবিতা সিংহদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। এঁদের স্বামীরা সকলেই জেলে। বিমা ভারতী এবং পুনম যাদবের বিরুদ্ধেও একাধিক অপরাধের মামলা দায়ের হয়েছে থানায়। পুনম বিহার বিধানসভার সবচেয়ে ধনী বিধায়কও বটে। সরকারি ভাবে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৪১ কোটি টাকা। আটরি বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছেন আরজেডির প্রার্থী কুন্তিদেবী। তাঁর স্বামী রাজেন্দ্র যাদব খুনের মামলায় ১০ বছরের সাজা খাটছেন। আর নিজের স্বামীর অপরাধ নিয়ে লালুপ্রসাদের তুলনাও টেনেছেন কুন্তিদেবী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘লালু প্রসাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল। আমার স্বামীকেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’’
স্বাভাবিক ভাবেই এ বারে সরকার অপরাধ দমনে ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কতটা সক্রিয় ভূমিকা নেবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। দীপাবলির দিন পটনায় জেলাশাসকের দফতরের পাশে দলিত নাবালিকাকে গণধর্ষণ এবং পটনা সিটিতে মহিলা কনস্টেবলের শ্লীলতাহানির ঘটনা চাপ তৈরি করেছে প্রশাসনের উপরে।
১৪২ জনের মধ্যে থেকে যে কেউই মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিতে পারেন। বিধানসভা উজাড় না করে কি ঠগ বাছতে পারেন নীতীশ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy