Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in India

টিকা-সিদ্ধান্তে লাভ কবে: প্রশ্ন

ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এত দেরি করে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আখেরে ভারতের কি কোনও লাভ হবে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১১
Share: Save:

অনুমতি দেওয়া হল বটে, কিন্তু দেরিতে হল না তো!

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভেঙে দিয়েছে সব রেকর্ড। ফি দিন আক্রান্ত হচ্ছে দেড় লক্ষের বেশি মানুষ। হাসপাতাল তো বটেই স্থানাভাব শ্মশানেও। এই পরিস্থিতিতে বিদেশে ছাড়পত্র পাওয়া প্রতিষেধককে জরুরি ভিত্তিতে ভারতে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। অতীতে ফাইজার সংস্থা ভারতে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ না করেই সরাসরি তাদের প্রতিষেধক এ দেশে ছাড়ার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে তাদের ওই অনুমতি দেয়নি নরেন্দ্র মোদী সরকার। বলা হয়েছিল পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ শেষ করার পরে ইতিবাচক ফলাফল এলে তবেই অনুমতি দেওয়া হবে কোনও বিদেশি সংস্থাকে। ফলে কিছু দিন পরে নিজেদের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয় ওই সংস্থা। এখন বাধ্য হয়ে নিজেদেরই সিদ্ধান্ত বদলাতে হল মোদী সরকারকে। নীতি পরিবর্তন করে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ছাড়াই বিদেশি প্রতিষেধককে ভারতে ব্যবহারের অনুমতি দিল সরকার।

ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এত দেরি করে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আখেরে ভারতের কি কোনও লাভ হবে? বিশেষ করে যেখানে দ্রুত প্রতিষেধকের জোগান প্রয়োজন, সেখানে ওই সিদ্ধান্ত দেরি হয়ে গেল না তো! কারণ, ফাইজার ও মডার্না আমেরিকাকে আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত ৩০ কোটি প্রতিষেধক দিতে চুক্তিবদ্ধ। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দিতে হবে প্রায় ৮০ কোটি প্রতিষেধক। ফাইজার ও মডার্না দুটি সংস্থাই ভাইরাসের ম্যাসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ-র উপর ভিত্তি করে প্রতিষেধক তৈরি করেছে। যা ইতিমধ্যেই কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে ইতিমধ্যেই আমেরিকা, ব্রিটেন বা ইজরায়েল, ইটালির মতো দেশগুলি ওই দুই সংস্থার সঙ্গে প্রতিষেধক কেনা নিয়ে আগেভাগেই চুক্তি করেছে। কিন্তু সেখানে ভারত ভরসা করে রেখেছিল, এ দেশে তৈরি প্রতিষেকের উপরে। কিন্তু একে চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন, অন্য দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসা-কার্যত ভেস্তে যায় মোদী সরকারের পরিকল্পনা। যে কারণেই এক ধাক্কায় নীতি পরিবর্তন করে ভারত। তবে এক স্বাস্থ্যকর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘এত দেরি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমাদের এখন অপেক্ষা করে থাকতে হবে। সংস্থাগুলির সঙ্গে অন্য দেশের যে চুক্তি রয়েছে, তা পালন করার পরেই ভারতের পালা আসবে। ফলে দ্রুত ওই সিদ্ধান্তের লাভ পাওয়া মুশকিল।’’ স্বাস্থ্যকর্তার আশঙ্কা, অন্তত দুই থেকে তিন মাসের আগে বড় সংখ্যায় প্রতিষেধক আসা মুশকিল।

ভারতের বিশাল বাজার আন্তর্জাতিক ওষুধ সংস্থার কাছে বরাবরই আকর্ষণীয়। ভারতের বাজার ধরতে স্বভাবতই বিদেশি সংস্থাগুলি আগ্রহ দেখাবে তা স্বাভাবিক। আজ ফাইজার সংস্থা তাদের প্রতিষেধকের উৎপাদন প্রায় দশ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ফাইজার বা মডার্নার মতো এমআরএনএ প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে সমস্যা হল, এদের কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিনের চেয়ে অনেকটাই কম তাপমাত্রায় রাখতে হয়। ভারতে এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত দু’টি প্রতিষেধক ও কাল ছাড়পত্র পাওয়া স্পুটনিক ভি-র জন্য বর্তমান কোল্ড চেন পরিকাঠামো যথেষ্ট। কিন্তু ফাইজার বা মর্ডানার প্রতিষেধক কি বর্তমান কোল্ড চেন পরিকাঠামোয় কাজ করবে? এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল বলেন, ‘‘প্রয়োজনে বিদেশি প্রতিষেধকগুলির জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। আমাদের লক্ষ্যই হল, বিদেশ থেকে প্রতিষেধক এনে দেশের যত বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসা।’’ কিন্তু কবে থেকে ওই প্রতিষেধক আসা শুরু হবে, তার জবাব নেই স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE