Advertisement
E-Paper

নেই প্রতিষেধক, স্মার্টফোন, সংক্রমণ বাড়লেও টিকাকরণে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে গ্রাম

শহরের স্মার্টফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত তরুণদের পক্ষেও সজাগ থেকে বুকিং করা কঠিন হয়ে উঠছে। কার্যত বিষয়টা ‘ফাস্টেস্ট ফিঙ্গার ফার্স্ট’ হয়ে উঠেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ০৭:০৪
Share
Save

শহর থেকে এবার ছোট শহর, গ্রামেও কোভিড ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। কিন্তু উল্টোদিকে টিকাকরণে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে গ্রাম, আধাশহর। কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরমহল, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তারা বলছেন, এর প্রধান কারণ দুটি। এক, প্রতিষেধকের অভাব। দুই, স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের অভাব। বা স্মার্টফোন থাকলেও তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে না পারা। নীতি আয়োগের এক কর্তা বলেন, “৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে সরকারি টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়েই নাম-ধাম লিখিয়ে, রেজিস্ট্রেশন করিয়ে টিকা নেওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু এখন প্রতিষেধকের জোগানেই টান। তার উপরে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে নিজেকেই রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। টিকা নেওয়ার জন্যও টিকাকরণ কেন্দ্র, কবে টিকা দেওয়া হবে, তা কোউইন ওয়েবসাইট বা আরোগ্যসেতু অ্যাপ থেকে খুঁজে নিজেদেরই বুকিং করতে হবে। সেখানেই গ্রামের মানুষ পিছিয়ে পড়ছেন।”

ওই কর্তার ব্যাখ্যা, টিকার অভাব বলে কোথাও টিকাকরণের স্লট খুললেও তা মুহূর্তের মধ্যে বুকিং হয়ে যাচ্ছে। শহরের স্মার্টফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত তরুণ প্রজন্মের পক্ষেও সারাদিন সজাগ থেকে বুকিং করে ফেলা কঠিন হয়ে উঠছে। কার্যত গোটা বিষয়টা ‘ফাস্টেস্ট ফিঙ্গার ফার্স্ট’ খেলা হয়ে উঠেছে। গ্রামের মানুষের পক্ষে তা কার্যত অসম্ভব। তার উপরে ইন্টারনেটের স্পিডও সমস্যা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই আজ বলেছেন, কোভিড ভাইরাস এ বার গ্রামেও ছড়াচ্ছে। গ্রামের মানুষকে সতর্ক হতে হবে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গ্রাম, আধাশহরে সংক্রমিতর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। দু’মাস আগেও গোটা দেশে ১০০ জন সংক্রমিত হলে তার মধ্যে ১০ জন গ্রামের মানুষ থাকতেন। এখন তা বেড়ে প্রায় ২৩ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। কোভিডে মৃতর তিন ভাগের এক ভাগ এখন গ্রাম-আধাশহরের মানুষ। উল্টোদিকে গ্রামে টিকাকরণের হার ক্রমশ কমছে। টিকাকরণের শুরুতে দেশে ১০০ জন টিকা পেলে তার মধ্যে গ্রাম-আধাশহরের ৫৫ জন টিকা পাচ্ছিলেন। এখন তা ৪৮ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে।

এর সমাধান কোথায়? লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সুপারিশ করেছেন, ডাকঘর, রেল স্টেশন থেকে গ্রামের মানুষকে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশনের বন্দোবস্ত করা হোক। এভাবে কি সমাধান হবে? নীতি আয়োগের এই কর্তা বলেন, “প্রতিষেধকের জোগান বাড়লে তবেই ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্যও টিকাকরণ কেন্দ্রে এসে রেজিস্ট্রেশন করে সঙ্গে সঙ্গে টিকা নেওয়ার সুবিধা চালু করা যাবে। এছাড়া কোনও সমাধান নেই। কারণ ডাকঘর থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিলেও টিকার স্লট মিলবে না।”

প্রতিষেধকের অভাবে সব রাজ্যেই বহু টিকাকরণ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে ১৩ শতাংশ টিকাকরণ কেন্দ্র কমে গিয়েছে। সবথেকে বেশি টিকাকরণ কেন্দ্র কমেছে অন্ধ্রে। প্রায় ৫৬ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গেও টিকাকরণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮ শতাংশ কমে গিয়েছে। আজ কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে, গত অক্টোবরে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিই সুপারিশ করেছিল প্রতিষেধকের আগাম বন্দোবস্ত করে রাখতে। কিন্তু মোদী সরকার তাতে কান দেয়নি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর বক্তব্য, মোদী সরকারের টিকাকরণ নীতিতেই সমস্যা। সরকারের উচিত জাতীয় স্তরে টিকা কিনে রাজ্যের মাধ্যমে বণ্টন করা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক অবশ্য আজ জানিয়েছে, মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধ, ১৬-৩১ মে-র মধ্যে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলিকে ১.৯১ কোটি ডোজ প্রতিষেধক পাঠানো হবে। কবে কোন রাজ্যে কতখানি প্রতিষেধক যাবে, তা-ও আগাম জানিয়ে দেওয়া হবে। রাজ্যগুলি আগাম তথ্য মিলচে না বলে অভিযোগ তুলেছিল। কেন্দ্রের বক্তব্য, রাজ্যগুলি যাতে টিকাকরণের বিষয়ে আগাম পরিকল্পনা করতে পারে, তার জন্যই আগাম জানিয়ে দেওয়া হবে। এই টিকা অবশ্য ৪৫ বছরের বেশি বয়সি, স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদেরই দেওয়া যাবে।

Crisis Coronavirus in India

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}