Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in India

কোভিড মোকাবিলায় প্রয়োজন চিনকেও: জয়শঙ্কর

এস জয়শঙ্কর।

এস জয়শঙ্কর। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২১ ০৭:০৬
Share: Save:

অতিমারির এই মহাসঙ্কটে চিনের কাছে হাত পাততে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে, যারা কিনা সীমান্তে এখনও চাপে রেখেছে ভারতকে। এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা পাকাচ্ছে গত দু’সপ্তাহ ধরে। ভারতীয় বেসরকারি সংস্থা, চিন থেকে সরাসরি চিকিৎসা সংক্রান্ত পণ্য, অক্সিজেন আনাচ্ছে নিজেদের প্রয়োজন মতো। এ ব্যাপারে ভারত একাধিক বার সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছে, এটি দু’দেশের সরকারের মধ্যে কোনও ব্যবস্থা নয়। বেসরকারি সংস্থা তাদের প্রয়োজন মতো পণ্য আমদানি করছে এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে। অন্য দিকে জি-৭ রাষ্ট্রভুক্ত দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের জন্য লন্ডন সফররত এস জয়শঙ্কর গোটা বিষয়টি থেকে বিতর্কের বাষ্প ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছেন। এক দিকে তিনি সীমান্তে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘‘চিনের সঙ্গে সম্পর্ক একই রকম কঠিন রয়েছে, তার উন্নতি ঘটেনি।’’ পাশাপাশি অতিমারি মোকাবিলার প্রশ্নটি পারস্পরিক মতপার্থক্যের চেয়ে বৃহত্তর এবং সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার আশু প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন।

বিদেশমন্ত্রীর কথায়, “চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে শেষ যা কথাবার্তা হয়েছে তা খুবই কার্যকরী। তা পুরোপুরি ভাবে কোভিড অতিমারিকে কেন্দ্র করেই। আমি জানিয়েছি, কোভিড অনেক বৃহত্তর বিষয় এবং একত্রে এর মোকাবিলা করা আমাদের দু দেশের স্বার্থের জন্যই জরুরি। ওয়াং ই-ও আমায় একই কথা জানিয়েছেন।” জয়শঙ্করের কথায় “ভারতের যে সংস্থাগুলি চিন থেকে পণ্য আনাচ্ছে তাদের বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ভারত সরকার চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব সহায়তা করতে। বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর অবশ্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আমাদের বেশ কিছু বিমান অবিলম্বে চিনের নামার অনুমতি পেয়ে যায়। এখন চাকা গড়াচ্ছে ঠিকঠাক।” এর পরেই তিনি বলেন, “ভারত-চিন সম্পর্ক এই মুহূর্তে খুবই কঠিন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তার কারণ বহু বহু বছর ধরে চলা চুক্তি এবং সমঝোতার বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে। কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই চিন বিরাট সংখ্যক সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে। প্রায় এক বছর হতে চলল তারা সেখানে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। তাদের কার্যকলাপে সীমান্ত এলাকার শান্তি এবং সুস্থিতি নষ্ট হয়েছে। ৪৫ বছর পরে সেখানে রক্তপাত ঘটেছে।”

বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, কিছু ক্ষেত্রে সেনা সরানো নিয়ে সাফল্য এলেও অনেক সংঘাতবিন্দুতেই এখনও আলোচনা চলছে। ঘটনা হল, গত বছরের পুরোটাই সীমান্তে হিমসিম খেতে হয়েছে চিনকে নিয়ে। চলতি বছরে আপাতত চিনা সেনা প্যাংগং হৃদ সংলগ্ন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে পিছু হটেছে ঠিকই। কিন্তু বেজিংকে নিয়ে এখনও রক্তচাপ কমার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ঘরোয়া রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠছে, চিনের সঙ্গে এত বৈরিতার পরেও ভারতের বাণিজ্যিক নির্ভরতা তাদের উপরে বেড়েছে বই কমেনি। অতিমারির ক্ষেত্রেও ‘আত্মনির্ভর’ ভারতকে প্রকারান্তরে সেই হাত পাততে হচ্ছে চিনের কাছেই।

অথচ চিনের কারণে সীমান্তে লাগাতার চাপ বহাল থাকার পাশাপাশি লাদাখ ছাড়াও সিকিম এবং অরুণাচলপ্রদেশের ভারত-চিন সীমান্তে চিনা সামরিক পরিকাঠামো তৈরির খবর নতুন করে অস্বস্তি তৈরি করেছে সাউথ ব্লকে। সেনা সূত্রের খবর, অরুণাচল প্রদেশের সুবনসিড়ি অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে তিনটি নতুন ব্রিজ তৈরি করেছে বেজিং। পাশাপাশি প্যাংগং হ্রদের থেকে সেনা সরানোর পর লাদাখের দেপসাং, হট স্প্রিং এবং গোগরা অঞ্চলেও সেনা সরানোর কাজ শুরু হবে বলে তিন মাস আগে একটি বৈঠকে একমত হয়েছিলেন ভারত এবং চিনের সামরিক বাহিনীর শীর্ষকর্তারা। কিন্তু এখনও তা বিশ বাঁও জলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE