তিন মাস আগে নেতাজি পরিবারের সদস্য এবং গবেষকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, নেতাজি জয়ন্তীতে সুভাষচন্দ্র বসু সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ শুরু করা হবে। গোটা দেশের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার প্রেক্ষাপটে আগামিকাল সেই নথি প্রকাশ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামিকাল নেতাজি সংক্রান্ত বেশ কিছু ফাইলের ডিজিটাল সংস্করণ প্রকাশ করা হবে জনসাধারণের জন্য।
সরকারের কাছে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত গোপন নথিপত্র প্রকাশ্যে আনা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই চলছিল রাজনৈতিক চাপানউতোর। সেপ্টেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের কাছে থাকা ৬৪টি গোপন ফাইল প্রকাশ করেন। নেতাজিকে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে থাকা ফাইলগুলি প্রকাশ্যে আনা নিয়ে মোদী সরকারে উপর সে সময় চাপও সৃষ্টি করছিলেন মমতা। রাজ্যের নথিগুলিতে অন্তর্ধান সংক্রান্ত কোনও তথ্য না থাকলেও মমতার পদক্ষেপে নড়েচড়ে বসেন মোদী। আর এই সব কিছুরই ফলাফল, আগামিকাল নেতাজিকে ঘিরে রচিত হতে চলেছে এক মেগা চিত্রনাট্য।
আজ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং বিদেশমন্ত্রক যৌথ ভাবে সুভাষচন্দ্র বসু সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ্যে আনার প্রক্রিয়াটি শুরু করে দিয়েছিল। যেখানে যা রয়েছে সেগুলি একত্র করে জাতীয় লেখ্যাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও কিছু ফাইল আসে। প্রাথমিক ভাবে মোট ১০০টি ফাইলের সংস্কার এবং ডিজিটাল সংস্করণের কাজ করা হয় এর পর। আগামিকাল ওই ১০০টি ফাইলের কতগুলি মোদী প্রকাশ করবেন তা অবশ্য এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়নি।
আগামিকাল দিল্লিতে যখন গোপন নথি প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হবে তখন নেতাজি সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন, ২৩ জানুয়ারিকে রাজ্যে দেশপ্রেম দিবস হিসাবে ঘোষণা ইত্যাদি দাবিদাওয়া নিয়ে আগামিকাল দিল্লির রাজপথে মিছিল করতে চলেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। পাশাপাশি, দিল্লিতে এই প্রথম একটি নেতাজি ভবনের উদ্বোধন করবেন দলের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। দলের প্রবীণ এই নেতাকে আজই কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে দিল্লিতে। দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের কথায়, ‘‘আগামিকাল নেতাজির সমস্ত ফাইল প্রকাশ হবে কি না আমরা জানি না। আমাদের দাবি স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঘেরাটোপে থাকা দিকটিকে জানার জন্য, বিভিন্ন দেশের সেই সময়কার অবস্থান বোঝার খাতিরে সমস্ত তথ্য সামনে আসুক। শুধুমাত্র ভোটের আগে রাজনৈতিক স্বার্থে যেন একে ব্যবহার না করা হয়।’’
আগামিকাল এই ফাইল প্রকাশের পর রাজনৈতিক চাপানউতোরকে কিন্তু অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। এমনিতেই নেতাজি আবেগ নিয়ে দেশে সলতে পাকানো চলছে। বিষয়টি নিয়ে কার্যত কোণঠাসা সনিয়া গাঁধীর দল। সেই আবেগকে উস্কে দিতে গত নভেম্বরে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ বাহিনীর স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন মোদী। ঘটনা হল, এর আগে নেতাজি সংক্রান্ত দু’টি ফাইল প্রকাশ করাতে বেদম অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। সেখানে দেখা গিয়েছিল নেতাজির অন্তর্ধানের পরেও তাঁর পরিবারের উপর চলছে গোয়েন্দাদের নজরদারি। সেই তথ্য প্রকাশ পেতেই গোটা দেশ জুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। স্বাধীন ভারতের দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গ— এই দু’জায়গাতেই তখন কংগ্রেসের সরকার। ফলে অস্বস্তি কাটাতে পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় গিয়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক স্বার্থে নেতাজিকে ব্যবহার করছে মোদী সরকার। এর পর কেন্দ্রের হাতে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত গোপন ফাইলগুলি প্রকাশের সম্ভাবনা দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গড়েন মোদী।
আগামিকাল ফাইলগুলি প্রকাশ পাওয়ার পর, কংগ্রেসের অস্বস্তিু আরও বাড়বে কি না এখন সেটাই দেখার। সেই চাপ কাটানোর জন্য এই নিয়ে এখনই কোনও আগাম রণকৌশল নিতে চাইছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। ফাইলগুলি পড়ে দেখার পরই এ ব্যাপারে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সনিয়া গাঁধীর দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy