Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পরেও হামলা রামগড়ে, হত প্রৌঢ়

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিমুদ্দিন নয়াসরাই ব্লকের মনুয়া গ্রামের বাসিন্দা। রামগড়ের চিতরপুর বাজার থেকে মাংস কিনে গ্রামে ফিরছিলেন। শহরের মধ্যেই বাজারটাঁড় নামে একটি জায়গায় গাড়িটিকে দাঁড় করায় কয়েক জন যুবক। গাড়িতে গো-মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে তারা আলিমুদ্দিনকে মারতে থাকে।

আক্রান্ত: তখনও বেঁচে আলিমুদ্দিন। —নিজস্ব চিত্র।

আক্রান্ত: তখনও বেঁচে আলিমুদ্দিন। —নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০৫:০৪
Share: Save:

জায়গাটা বাজারের কাছেই। লোকজনও ছিল না এমন নয়। তাঁদের চোখের সামনেই সাদা রংয়ের মারুতি ভ্যানটা ঘিরে ভিড় জমে উঠল। মাঝবয়সী লোকটিকে টেনেহিঁচড়ে বের করা হল গাড়ি থেকে। তার পর এলোপাথাড়ি মার।

গো-ভক্তির নামে মানুষ খুন মেনে নেওয়া যায় না— প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার খুন। এ বার ঝাড়খণ্ডের এক মাংস ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে রামগড়ের বাজারটাঁড়ের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম আসগার আলি ওরফে আলিমুদ্দিন (৫০)। আলিমুদ্দিন যে গাড়িতে করে মাংস নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেটি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে গো-ভক্তরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিমুদ্দিন নয়াসরাই ব্লকের মনুয়া গ্রামের বাসিন্দা। রামগড়ের চিতরপুর বাজার থেকে মাংস কিনে গ্রামে ফিরছিলেন। শহরের মধ্যেই বাজারটাঁড় নামে একটি জায়গায় গাড়িটিকে দাঁড় করায় কয়েক জন যুবক। গাড়িতে গো-মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে তারা আলিমুদ্দিনকে মারতে থাকে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘গাড়িটাকে ঘিরে ভিড় জমতে দেখে দাঁড়িয়ে যাই। উত্তেজিত কিছু লোক বেধড়ক কিল-ঘুঁষি মারছিল মানুষটাকে।’’ স্থানীয় দোকানদাররা বলছেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা দেখেন কয়েকটা লোক লাঠি হাতে গাড়িটি ভাঙতে শুরু করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি হাতজোড় করে কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন। কর্ণপাত না করে কয়েক জন লোক গাড়ির ভিতর থেকে মাংস বের করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, ‘‘আমরা থামাতে গেলে উত্তেজিত জনতা আমাদের দিকেই তেড়ে আসে। আমরা ভয়ে পালিয়ে আসি। পুলিশকে খবর দিই।’’

পুলিশ আসার আগেই মারমুখী দুষ্কৃতীরা গাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। জ্বলন্ত গাড়ির কাছেই রাস্তায় পড়ে ছিলেন আলিমুদ্দিন। হাঁটতে পারছিলেন না। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে রামগড় সদর হাসপাতাল, পরে রাঁচীর রিমস হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

রামগড়ের এসপি কৌশল কিশোর ও হাজারিবাগের ডিআইজি ভীমসেন টুটি ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। এসডিপিও শশী প্রকাশ পরে বলেন, ‘‘গাড়িতে পাঁচ-ছ’কেজির মতো মাংস ছিল। তার ফরেনসিক পরীক্ষা হবে।’’ সন্ধ্যায় ডিআইজি জানান, ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ জোগাড় করেছেন। অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। এলাকা এখনও থমথমে। বাজারটাঁড় এলাকার দোকানপাটও বন্ধ। মঙ্গলবার রাতেই গিরিডিতে এক প্রৌঢ়কে গণধোলাই দিয়েছিল গো-রক্ষকরা। এ দিন মেরেই ফেলা হল আলিমুদ্দিনকে। এ দিন রাঁচীতে সিবিআই আদালতে হাজিরা দিতে আসা লালুপ্রসাদের অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মুখে যাই বলুন, আসলে তাঁর প্ররোচনাতেই এ সব ঘটনা ঘটছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE