রাহুল গান্ধীর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ উদ্দীপনা বাড়িয়ে দিয়েছে বিরোধী শিবিরের। বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পরে ‘মহাগঠবন্ধনে’র সরকার তৈরি হবে বলে আশাবাদী তারা। এবং সেই মহাজোট সরকার গঠিত হলে তাতে যোগ দেওয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখল সিপিআই। অন্য দুই বাম দল সিপিএম এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন অবশ্য তত দূর এগোতে রাজি নয়। আর বিহারে পরিস্থিতি অনুকূল হলেও জোটের মধ্যে আসন-রফায় বিস্তর কাঁটা যে এখনও রয়ে গিয়েছে, সেই প্রশ্ন উদ্বেগে রাখছে সিপিএমকে।
দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ বার অন্যতম আলোচ্য ছিল ৬টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দলের প্রস্তুতি। বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে, রবিবার বিহার, অসম, কেরল, বাংলা, তামিলনাড়ু, পুদুচেরির নেতারা তাঁদের রাজ্যের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতির রিপোর্ট দিয়েছেন। সূত্রের খবর, বিহার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক লালন চৌধরি বৈঠকে বলেছেন, নীতীশ কুমারের সরকার মানুষের ক্ষোভ এবং প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মোকাবিলায় মরিয়া হয়ে নানা প্রকল্প ঘোষণা করছে। অন্য দিকে, রাহুলের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ ভাল সাড়া ফেলেছে। তবে সেই যাত্রার ‘কৃতিত্ব’ নিয়ে কংগ্রেস এবং আরজেডি-র মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। তেজস্বী যাদব নিজস্ব কিছু কর্মসূচি নিচ্ছেন, মহাজোটে আরজেডি বেশি আসনও চাইছে। কংগ্রেস দাবি করছে জয়ের ‘সম্ভাবনাময়’ বেশি আসনের। জোটের দুই বড় শরিকের এই টানাপড়েন না-মিটলে বাম দলগুলির আসনের দাবির ঠিকমতো নিষ্পত্তি হওয়া মুশকিল। আবার বাম দলগুলি আলাদা জোট তৈরি করে লড়াইয়ের জায়গায় নেই। তেমন পদক্ষেপ উচিতও হবে না। দলীয় সূত্রের খবর, বিহারে সিপিএম ১০-১৫টি আসনে লড়তে আগ্রহী।
আসন-রফা নিয়ে জটিলতা থাকলেও আর এক বাম দল সিপিআই অবশ্য আগাম পদক্ষেপ ভেবে রেখেছে। পটনার গর্দানিবাগে অনুষ্ঠিত দলের ২৫তম রাজ্য সম্মেলনে রাজনৈতিক প্রস্তাব পাশ হয়েছে, বিহারে মহাজোটের সরকার হলে সিপিআই তার শরিক হবে। সিপিআইয়ের পুনর্নির্বাচিত বিহার রাজ্য সম্পাদক রামনরেশ পাণ্ডের মতে, ‘‘সরকারে যাওয়ার সুযোগ এলে সেই সুযোগ আমাদের নিতে হবে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শুধু নেতিবাচক বক্তব্য নয়, আমরা কী কাজ করতে পারি, সেই ইতিবাচক দৃষ্টান্তও মানুষের সামনে রাখতে হবে। তবে এ সব কিছুর আগে যুক্তিসম্মত আসন বণ্টন এবং উপযুক্ত রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে লড়াই জরুরি।’’ রামনরেশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অতীতেও বিহারে কংগ্রেসকে পরাস্ত করে রাজ্য সরকারে সিপিআই শামিল হয়েছিল। কেন্দ্রেও যুক্ত ফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় সিপিআই নেতারা সদস্য হয়েছেন। সিপিএম এবং লিবারেশন যদিও ‘পর্যাপ্ত সংখ্যা’ না-থাকলে বাইরে থেকে সমর্থনের নীতিরই পক্ষপাতী।
সিপিএম সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিহারে পরিবেশ কাজে লাগানোর বার্তার পাশাপাশি কেরল নিয়ে ‘ইতিবাচক’ কথাই উঠে এসেছে। দক্ষিণী ওই রাজ্যে টানা তৃতীয় বার বাম সরকার গড়ার পরিস্থিতি ও প্রস্তুতি রয়েছে বলে দলের অন্দরে দাবি করেছেন কেরলের নেতৃত্ব। খ্রিস্টান ভোটে বিজেপি ভাগ বসালে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের ক্ষতি এবং তাতে বামের ফায়দা দেখছেন তাঁরা। বঙ্গ সিপিএমের তরফে আভাস রায়চৌধুরী কেন্দ্রীয় কমিটির সামনে রিপোর্ট দিয়েছেন, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আসন বাছাই এবং প্রচার-কৌশল ঠিক করে বিধানসভা ভোটের জন্য তৈরি হচ্ছে দল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)