Advertisement
E-Paper

দলটাই পথে বসলে কী হবে রণকৌশলে, প্রশ্ন সিপিএমে

প্রশ্ন একটাই। মেরুদণ্ডে জোর না থাকলে হাতিয়ারে শান দিয়ে লাভ কী? এপ্রিলে বিশাখাপত্তনমে পার্টি কংগ্রেস। তার আগে একের পর এক রাজ্য সম্মেলনে এই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠছে সিপিএমের নেতাদের সামনে। দলের নিচুতলার প্রশ্ন, সংগঠনের জোর না থাকলে রাজনৈতিক রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করে কী লাভ হবে? দাবি উঠেছে, সংগঠন মজবুত করতে তরুণ প্রজন্মকে দলে টানা হোক।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৭

প্রশ্ন একটাই। মেরুদণ্ডে জোর না থাকলে হাতিয়ারে শান দিয়ে লাভ কী? এপ্রিলে বিশাখাপত্তনমে পার্টি কংগ্রেস। তার আগে একের পর এক রাজ্য সম্মেলনে এই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠছে সিপিএমের নেতাদের সামনে। দলের নিচুতলার প্রশ্ন, সংগঠনের জোর না থাকলে রাজনৈতিক রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করে কী লাভ হবে? দাবি উঠেছে, সংগঠন মজবুত করতে তরুণ প্রজন্মকে দলে টানা হোক। সর্বক্ষণের কর্মী বা হোলটাইমারদের ভাতা বাড়িয়ে মাসে অন্তত ১৫ হাজার টাকা করা হোক। শ্রমিক, ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলির কাজকর্মের পদ্ধতি বদলানো হোক। পার্টির আদর্শ ছড়িয়ে দিতে রাজ্যে রাজ্যে দলের নিজস্ব স্কুল খোলা উচিত বলেও মত উঠে এসেছে। অভিযোগ উঠছে, সাংগঠনিক দক্ষতা বা কাজের মূল্যায়নের বদলে শীর্ষনেতাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। দল ডুবেছে তাতেই।

পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের সূচনায় কাল প্রকাশ্য সমাবেশ। বিমান বসুর আশা ১০ লাখ মানুষ আসবেন। তার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেখানেও কিন্তু সাংগঠনিক সমস্যাই বড় আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন এ কে গোপালন ভবনের নেতারা। প্রকাশ কারাট ও সীতারাম ইয়েচুরি, দু’জনেই রাজ্য সম্মেলনে যাচ্ছেন। এর আগে কেন্দ্রীয় নেতারা যেখানেই গিয়েছেন, সংগঠন নিয়েই তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। সব রাজ্যেই দাবি উঠেছে, আগে আলোচনা হোক, কেন সিপিএম তিন রাজ্যের বাইরে পা ফেলতে পারল না, কেন আন্দোলন গড়ে তোলা যাচ্ছে না, কেন তরুণ প্রজন্ম দলের প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছে। সংগঠনকে মজবুত করা ও গণসংগঠনগুলিকে ঢেলে সাজার রাস্তা খোঁজা হোক আগে। রাজনৈতিক রণকৌশল নিয়ে পরে ভাবা যাবে।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পার্টি কংগ্রেসের পরেই সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য আলাদা প্লেনাম ডাকা হবে। দুর্বলতার কারণ খুঁজে সংগঠন মজবুত করার রাস্তা খোঁজা হবে সেখানে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল, পলিটব্যুরো নেতা ইয়েচুরি নিজেই দলে সংগঠনের সমস্যা দূর করার দাবি তুলেছিলেন। রাজনৈতিক রণকৌশল পর্যালোচনার সময় গত অক্টোবরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে পাল্টা দলিল পেশ করেছিলেন তিনি। সেখানেই তিনি যুক্তি দেন, সংগঠনের জোর না থাকলে শুধু রাজনৈতিক রণকৌশল পাল্টালে লাভ হবে না। ইয়েচুরি বলেছিলেন, ‘একের পর এক নির্বাচনে হেরে দলের কর্মী-সমর্থকরা মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন। যত ক্ষণ না আমরা খোলা মনে সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা মেরামত করব, তত ক্ষণ তাঁদের চাঙ্গা করা সম্ভব হবে না।’

একের পর এক রাজ্য সম্মেলনে ইয়েচুরির বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। পাল্টা দলিলে ইয়েচুরি মূলত চারটি সাংগঠনিক দুর্বলতা তুলে ধরেছিলেন। এক, ক্যাডার নীতি। দুই, গণসংগঠন। তিন, ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী সংগঠন চালানো। এবং চার, দলে খেয়োখেয়ি। ইয়েচুরির যুক্তি ছিল, “শ্রমিকদের জন্য সিটু যে ন্যূনতম বেতন দাবি করে, অন্তত সেই পরিমাণ টাকা দেওয়া হোক হোলটাইমারদের।” শ্রমিকদের জন্য মাসে অন্তত ১৫ হাজার টাকা বেতন দাবি করে সিটু। ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘এই টাকা দেওয়া না হলে হোলটাইমারদের কাজের দক্ষতা বাড়ানো যাবে না। পার্টির অফিসবাড়ি তৈরি না করে ওই টাকায় তহবিল গড়ে তোলা হোক হোলটাইমারদের জন্য।’ ক্যাডার-নীতির গলদের পাশাপাশি পছন্দের লোককে পদে বসানোর প্রবণতার দিকেও আঙুল তুলেছেন ইয়েচুরি। তাঁর খেদ, ‘দলে খেয়োখেয়ি উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। কার জনসমর্থন কত বেশি, তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা হলে দলেরই উপকার। তাতে জনসংযোগ বাড়ে। কিন্তু সমস্যা হল, নিজের কৃতিত্বকে বড় করে দেখাতে অন্য কমরেডদের ছোট করে দেখানোর অভ্যেস তৈরি হয়েছে। কিছু নেতা এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছে। কমছে মানুষের সঙ্গে যোগ।’

রাজীব গাঁধী যখন জাতীয় সাক্ষরতা মিশন চালু করেছিলেন, তখন বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে প্রস্তাব এসেছিল, পার্টির তরফে রাজ্যে রাজ্যে স্কুল খোলা হোক। এর উদ্দেশ্য হবে শিশুদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা গড়ে তোলা। তখন ওই প্রস্তাব গুরুত্ব পায়নি। এখন ফের সেই বিষয়টি ভাবা উচিত বলে ইয়েচুরির যুক্তি। তাঁর মতে, আরএসএস নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সাম্প্রদায়িক তত্ত্ব ছড়াচ্ছে। এর মোকাবিলা করতে হবে।

ইয়েচুরির অধিকাংশ যুক্তিই যথেষ্ট বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, নেতাদের কেউই ভুল স্বীকার করতে চান না। দলের রাজনৈতিক শক্তি সম্পর্কেও নেতাদের বাস্তব ধারণা নেই। শীর্ষনেতারা এখনও পার্টির শক্তি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তব হল, লোকসভায় দলের সাংসদ মাত্র ৯ জন। ১৯৬৭ সালে সিপিএম যখন প্রথম লোকসভা ভোটে লড়েছিল, তখনও ১৯ জনকে সংসদে পাঠাতে পেরেছিল। এখন দেশের মাত্র ৮টি বিধানসভায় সিপিএমের উপস্থিতি। এর মধ্যে চারটি রাজ্যে মাত্র এক জন করে বিধায়ক রয়েছেন। নিচুতলার কর্মীদের মতো নেতারাও বেশ বুঝছেন, এ অবস্থায় যে রাজনৈতিক রণকৌশলই নেওয়া হোক না কেন, সংগঠনের অভাবে তা ভোঁতা হয়েই থেকে যাবে।

CPM premangshu chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy