Advertisement
E-Paper

‘হাড় হিম’ গোপালেও এখন সায় সিপিএমের

এ বার রাষ্ট্রপতি পদেই গোপালকৃষ্ণকে প্রার্থী করতে উৎসাহী ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর দৌহিত্রের জন্য সিপিএমকে গলা ফাটাতে দেখে চোখ কপালে তুলছেন রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই!

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৬

কয়েক মাস আগে তাঁর বিশ্ববন্দিত মাতামহ পথে নামিয়েছিলেন সিপিএমকে। এ বার নাতির নামে সিলমোহর দিতে হল সীতারাম ইয়েচুরিদের!

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীকে সব বিরোধী দল উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে বেছে নেওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্ছ্বসিত, তাতে কোনও বিস্ময়ের উপাদান নেই। এ বার রাষ্ট্রপতি পদেই গোপালকৃষ্ণকে প্রার্থী করতে উৎসাহী ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর দৌহিত্রের জন্য সিপিএমকে গলা ফাটাতে দেখে চোখ কপালে তুলছেন রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই!

বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে যে গোপালকৃষ্ণ ‘হাড় হিম করা সন্ত্রাসে’র কথা বিবৃতিতে লিখে আলিমুদ্দিনের পিলে চমকে দিয়েছিলেন, তিনিই এখন ইয়েচুরিদের প্রিয়পাত্র হলেন কী ভাবে? সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি বলছেন, ‘‘এই সব নির্বাচনই রাজনৈতিক লড়াইয়ের অংশ। এই মুহূর্তে গোপালকৃষ্ণের চেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য খুঁজে পাচ্ছি না! সব দলেরই ওঁকে সমর্থন করা উচিত।’’ সিপিএম সূত্রে বলা হচ্ছে, আসল ঠেলার নাম বিজেপি! সঙ্ঘ পরিবারের মোকাবিলা করার স্বার্থেই রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি, দুই নির্বাচনেই কংগ্রেসের নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক মুখ খাড়া করার দৌড়ে সামিল হয়েছে সিপিএম। এবং তার জন্য মেনে নিতে হচ্ছে গোপালকৃষ্ণকেও! গত ৩১ জানুয়ারি গাঁধীজির হত্যা-দিবসে কলকাতায় সম্প্রীতি মিছিল করেছিল বামেরা। অবাক হয়েছিলেন অনেকে। তখনও দায় ছিল বিজেপি-র মোকাবিলা। গোপালকৃষ্ণের বেলাতেও তা-ই।

আরও পড়ুন: লস্কর না হিজবুলের হাত, ধন্দে গোয়েন্দারা

সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল হিসাবে গোপালকৃষ্ণের বেশ কিছু কাজ আমরা মানতে পারিনি ঠিকই। বিবাদ ছিল। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য তাঁকে মেনে নেওয়ায় বোঝা গেল, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে জানি।’’ দলের কেউ কেউ এমনও বলছেন, রাজ্যসভার অধিবেশন পরিচালনা এবং কূটনৈতিক নানা সফর ছাড়া উপরাষ্ট্রপতির বিশেষ কিছু করণীয় নেই। তাই নির্বাচিত হলেও গোপালকৃষ্ণের দিক থেকে আর কোনও ‘বিপদে’র আশঙ্কা নেই!

বাম শিবিরের অন্দরের খবর বলছে, আগে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার একটি দেশে রাষ্ট্রদূত থাকার সময়ে কলকাতার এক ‘বন্ধু’কে দিয়ে জ্যোতি বসুর কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছিলেন গোপালকৃষ্ণ। ইচ্ছা, বাংলার রাজভবনে আসতে চান। জ্যোতিবাবুর পরামর্শে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তদানীন্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাটিলকে ফোন করে গোপালকৃষ্ণের নামে সম্মতি জানিয়েছিলেন। রাজভবনে এসে সেই গোপালকৃষ্ণই বিদ্যুৎ সঙ্কটে ভুক্তভোগীদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে নিষ্প্রদীপ রাখার প্রতীকি বার্তা দিতে শুরু করলেন। জ্যোতিবাবু মন্তব্য করলেন, এমন না করলেই ভাল হতো। আর নন্দীগ্রামের সময়ে ‘হাড় হিম করা’ বিবৃতি, গুলিতে আহতদের দেখতে তমলুকের হাসপাতালে চলে যাওয়া— কী না করেননি! রাজ্য সরকারের উষ্মা বাড়িয়ে সিঙ্গুর নিয়ে অনশনরত তৃণমূল নেত্রীর মঞ্চে হাজির হয়েছেন। রাজভবনে দরকষাকষির টেবিলে মমতার ৪০০ একর জমি ফেরতের দাবির পাশে দাঁড়িয়েছেন। যে সবের জেরে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে বিদায়ের পাঁচ বছর পরে বুদ্ধবাবুকে নিজের বইয়ে উল্লেখ করতে হয়েছে, রাজ্যপাল গাঁধীর ভূমিকা তাঁকে ব্যথিত করেছিল।

এখন অবশ্য সে সব ব্যথা মুলতবি! সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের সংযোজন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে মীরা এবং গোপালকৃষ্ণকে সমর্থন করা গেলে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের মদতে সীতারামকে কেন প্রার্থী করা যাবে না, এই প্রশ্নটাও তো এ বার ওঠা উচিত!’’

Gopalkrishna Gandhi CPM Vice President উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন Vice Presidential Candidate Presidential Election গোপালকৃষ্ণ গাঁধী সীতারাম ইয়েচুরি Sitaram Yechury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy