চিকিৎসক দেবেন দত্ত।
কেউ ঘুসি মারছে। কেউ লাথি। কাচের একটা কোপ পড়ল ডান হাঁটুর পিছনটায়। বুঝতে পেরেছিলেন, বিপজ্জনক শিরা কেটে ফিনকি দিয় রক্ত বেরোচ্ছে। রক্ত বন্ধ করতে ব্যান্ডেজ চাইছিলেন। কেউ তা ছুড়ে ফেলে দিল। কাঁপতে কাঁপতে চাইছিলেন জল। রক্ত মুছতে চান তুলো। বদলে চলতে থাকে মার। জ্ঞান লোপ পাওয়ার আগে পর্যন্ত মুখগুলো দেখে বিস্ময় কাটছিল না টিওক চা বাগানের ডাক্তার দেবেন দত্তের। ছেলেগুলোর অনেকের জন্ম যে তাঁর হাতেই!
যোরহাটের জগদুয়ারের বাড়িতে বসে এখনও দিশাহারা মেয়ে ক্রিস্টিনা, ছেলে মঞ্জিল। ৩১ অগস্ট চা শ্রমিকদের হাতে নিহত দেবেনবাবুর মেয়ে জানান, বাবা ১৯৭২ সালে টিওক চা বাগানে যোগ দেন। পরে বিভিন্ন বাগানে কাজ করলেও মন পড়ে ছিল টিওকেই। ২০০৫ সালে অবসর নেন। ২০১৪ সালে ফের টিওক চা বাগানে বিনা বেতনে রোগী দেখা শুরু করেন। ক্রিস্টিনা বলেন, ‘‘যারা শনিবার বাবাকে খুন করল, তাদের অনেকের জন্মই বাবার হাতে। নিজের রক্ত দিয়েও রোগীকে বাঁচিয়েছে বাবা। যে ভাবে শিরা কেটে বাবাকে মারা হয়েছে, তা পাকা হাত ছাড়া সম্ভব নয়।’’ ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দাবি করছে পরিবার। দ্রুত বিচার চান ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী পীযুষ হাজরিকা জানান, জেলাশাসক অবিলম্বে ম্যাজিস্টেট পর্যায়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই পুলিশ ২৬ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের অসম শাখা ও অসম ফার্মাসিস্ট সংগঠন আগামী কাল, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। আইএমএ প্রতিনিধিদল আগামী কাল অসমেও আসবে।
৬ মে, ডিব্রুগড়ের ডিকম চা বাগানে গাছ চাপা পড়ে এক মহিলা শ্রমিক মারা গেলে বেধড়ক মার খান চিকিৎসক প্রবীণ ঠাকুর। এখনও আতঙ্কে তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনার পরে অনেকে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু আমি মানসিক ভাবে আর ওখানে কাজ করতে তৈরি নই। দেবেনবাবুর উপরে কী চলেছে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারছি।’’ শুধুমাত্র অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকরাই বাগানের হাসপাতালে কাজ করেন। অন্য কেউ বাগানের হাসপাতালে কাজ করতে আগ্রহী নন। চা সংগঠন হাসপাতালগুলির ভার সরকারকে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy