কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা যখন বলছেন, তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে, তখন রাজ্য নেতারা তার বিরোধিতা করলেন।
আজ ইম্ফলের কংগ্রেস ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিংহ বলেন, ‘‘ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনমতের প্রতি চরম অবজ্ঞা ও অসম্মানের নিদর্শন। যে রাজ্যে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার রয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’ ইবোবির দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ রাজ্যবাসীর স্বার্থে পদত্যাগ করলে অনেক আগেই করতেন। তেমন হলে নতুন মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিয়ে বাজেট অধিবেশন সুষ্ঠু ভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারত। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের আগের দিন এই কাণ্ড করে ইচ্ছাকৃত সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি করা হল।
গত কাল কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি শাসন তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আজও সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। কিন্তু সমস্যা হল, মণিপুরের কুকিরাও রাষ্ট্রপতি শাসনকে নিজেদের নৈতিক জয় হিসেবে তুলে ধরায় তাঁদের সঙ্গে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের স্বর এক হয়ে গিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন মণিপুর প্রদেশ কংগ্রেসের মেইতেই নেতারা। মেইতেইদের সিংহভাগই রাষ্ট্রপতি শাসনের বিপক্ষে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই কারণেই আজ সাংবাদিক বৈঠক করে প্রদেশ নেতারা অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বস্তুত, মেইতেইদের যৌথ মঞ্চ কোকোমি এ দিন বিবৃতি দিয়ে বলেছে, বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও আচমকা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করাটা মণিপুরকে আরও অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়ার একটি ইচ্ছাকৃত চক্রান্ত। এই পদক্ষেপ কেন্দ্রের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বিজেপির উত্তর-পূর্বের ভারপ্রাপ্ত নেতা সম্বিত পাত্র আজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাজ্যপালের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু রাজ্য বিধানসভাকে স্থগিত রেখেছেন। পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে রাষ্ট্রপতি যখনই উপযুক্ত মনে করবেন, তখনই বিধানসভাকে পুনরুজ্জীবিত করা যেতে পারে।’’ সম্বিত আরও জানান, মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে কোনও আপস করা হবে না। এই অঞ্চলে শান্তি পুনরুদ্ধারে বিজেপি অঙ্গীকারবদ্ধ। অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করতে নাজেহাল এবং বীরেন-পন্থী ও বীরেন-বিরোধী দুই শিবিরকেই বাগে আনতে অপারগ সম্বিতের নিরাপত্তা বাড়িয়ে জ়েড ক্যাটেগরি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরেই কুকি এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। হাতে ও কাঁধে একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে কুকি এলাকা কাংপোকপির কে. গামনোমফাই গ্রামে ফুটবল খেলার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভিডিয়ো থেকে চিহ্নিত করে পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে।
এ দিকে, বীরেন রাজ্যের ভূমিপুত্রদের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে। তাতে বলেছেন, ‘আমি ২০২৩ সালের ২ মে পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করতে অক্লান্ত ভাবে কাজ করেছি। মায়ানমারের সঙ্গে ৩৯৮ কিলোমিটারের খোলা সীমান্ত এবং মুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থা মণিপুরের জনসংখ্যার ভারসাম্য বদলে দিচ্ছিল। খুব কম সংখ্যক অনুপ্রবেশকারীকেই চিহ্নিত করা গিয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত এবং মণিপুর থেকে বহিষ্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি।’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)