Advertisement
০৬ মে ২০২৪

দেশের ‘লক্ষ্মী’ এখন গেরুয়া শিবিরে ‘মস্তানি’

গত বছর ২২ অক্টোবর দীপাবলির আগে দীপিকা পাড়ুকোন ও পিভি সিন্ধুকে ‘ভারত কি লক্ষ্মী’ সম্মান দিয়ে সরকারি অ্যাম্বাসাডর ঘোষণা করা হয়।

জেএনইউয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে দীপিকা পাড়ুকোন।—ছবি এএফপি।

জেএনইউয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে দীপিকা পাড়ুকোন।—ছবি এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২৮
Share: Save:

কিছু দিন আগেই তিনি ছিলেন ‘দেশের লক্ষ্মী’, নরেন্দ্র মোদী সরকারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। জেএনইউয়ে গিয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর পরে তিনিই এখন ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’! দীপিকা পাড়ুকোনের বিরুদ্ধে যুযুধান গেরুয়া শিবিরকে আজ এ কথা মনে করিয়ে দিলেন জেএনইউয়ের প্রাক্তন ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট কানহাইয়া কুমার।

গত বছর ২২ অক্টোবর দীপাবলির আগে দীপিকা পাড়ুকোন ও পিভি সিন্ধুকে ‘ভারত কি লক্ষ্মী’ সম্মান দিয়ে সরকারি অ্যাম্বাসাডর ঘোষণা করা হয়। সে সময়ে বিজেপি সরকার জানিয়েছিল, দেশজুড়ে প্রশংসনীয় কাজ করার জন্য দুই ভারতীয় নারীকে এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রের দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রকের একটি প্রচার ভিডিয়োতেও অংশ নিয়েছিলেন দীপিকা। শীঘ্রই সেটি প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। একাধিক সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, জেএনইউয়ের ঘটনার পরে অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে দীপিকার ওই ভিডিয়োটিকে এখন আর প্রকাশ করছে না সরকার। এক সংবাদ সংস্থাকে মন্ত্রকের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘স্কিল ইন্ডিয়ার একটি প্রচার ভিডিয়ো বুধবার প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। শ্রম শক্তি ভবনের (মন্ত্রকের অফিস) অন্দরে দেখানোও হয়েছিল সেটি। কিন্তু গত কাল হঠাৎই ভিডিয়োটি তুলে নেওয়া হয়।’’ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে অবশ্য তাদের বলা হয়েছে, ভিডিয়োটি সামান্য ‘মাজাঘষা’ করা হচ্ছে।

৪৫ মিনিটের প্রচার ভিডিয়োটির বিষয়বস্তু ছিল, দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার পাওয়া উচিত। এক অ্যাসিড আক্রান্তের জীবন নিয়ে তৈরি দীপিকার আসন্ন ছবি ‘ছপক’-এর কাহিনিকে বুনে সরকারি ভিডিয়োটি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে একাধিক অ্যাসিড আক্রান্তের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় ছবির অভিনেতাদের। যদিও এখন এই ছবিকেই বয়কট করার ডাক দিয়েছে গেরুয়া শিবির। #বয়কটছপাক নাম দিয়ে প্রচার চলছে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে বিরোধীরাও। কংগ্রেস-শাসিত দুই রাজ্য ছত্তীসগঢ় ও মধ্যপ্রদেশ ‘ছপাক’কে করমুক্ত ঘোষণা করেছে।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর দীপিকার সমর্থনে টুইট করেছিলেন। তাতে আবার দীপিকার পদবির ভুল বানান লেখেন তিনি। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই টুইটটি মুছে দেন আসিফ। লিখেছিলেন, ‘‘কঠিন পরিবেশে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন আপনি। মানবিকতা সবার আগে #দীপিকাপাড়ুকোন।’’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমারের বক্তব্য, ‘‘উনি তো নিজের কাজ ছেড়ে ভারতের ব্যাপারে টীকাটিপ্পনী করে চলেছেন। অথচ ওঁর নিজের দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে যে কী অত্যাচার চলছে, তার ঠিক নেই। অন্যকে জ্ঞান না দিয়ে দেশকে মেরামত করার চেষ্টা করুন। নানকানা সাহিবে যা হয়েছে, তা জঘন্য।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় দীপিকার বিরুদ্ধে প্রচার আজও অব্যাহত। অসমের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে বিখ্যাত লোকেরা বোধ হয় এ ভাবেই এ সব জায়গায় যায়। এটাই এখন ট্রেন্ড।’’ মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা আশিস শেলার আবার বলেন, ‘‘সঞ্জয় লীলা ভংসালীর মতো পরিচালক থাকলে যোদ্ধা মস্তানির ভূমিকায় অভিনয় করা সহজ। কিন্তু বাস্তব জীবনে, যখন পিছনে কোনও পরিচালক নেই, তখন ওঁর (দীপিকার) উচিত নয়, নিজেকে মস্তানির মতো দেখাতে গিয়ে ওই অভিনয় করা। বাস্তবে ওই কাজ করা ওঁর কম্ম নয়।’’ ২০১৫ সালে ‘বাজিরাও মস্তানি’ ছবিতে মস্তানির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দীপিকা। সেই প্রসঙ্গ টেনেই খোঁচা দিয়েছেন শেলার। আরও বলেছেন, ‘‘জেএনইউয়ের ঘটনার পরে শুধুমাত্র এক পক্ষের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন দীপিকা। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। এ অবস্থায় এক পক্ষের লোকের সঙ্গে দেখা করা ঠিক নয়, ওকে ঝামেলায় তো পড়তে হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deepika Padukone JNU BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE