সন্তানকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন রাশিয়ান মা। তাই আপাতত বাবার হেফাজতেই থাকবে চার বছরের ওই সন্তান। সম্প্রতি এক মামলায় অন্তর্বর্তী নির্দেশে এমনটাই জানিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, ওই রাশিয়ান মহিলা তাঁর সন্তানকে নিয়ে ভারত ছেড়ে চলে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। এমন কিছু ঘটলে বর্তমানে যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে, সেটিই অর্থহীন হয়ে যাবে বলে মনে করছে আদালত।
বর্তমানে সন্তানের হেফাজত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরের এক রুশ বধূ সন্তানকে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন। পারিবারিক আদালতের নির্দেশে তিন দিন পাঁচ বছরের সন্তানকে নিজের কাছে রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন রাশিয়ান মহিলা। পরে জানা যায়, তিনি সন্তানকে নিয়ে মস্কোয় চলে গিয়েছেন। ওই মামলায় কেন্দ্রের তরফে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছে, রুশ কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দিল্লি হাই কোর্টের এই নির্দেশ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
দিল্লি হাই কোর্টের এই মামলাটির ক্ষেত্রে, ২০১৩ সালে দম্পতির বিয়ে হয়েছিল। রাশিয়াতেই বিয়ে হয় তাঁদের। সেখানেই তাঁদের এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। পরে ওই দম্পতি সপরিবার ভারতে চলে আসেন। প্রথমে নয়ডা এবং দেহরাদূনে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। পরে সংসারে বনিবনা না-হওয়ায় আলাদা থাকতে শুরু করেন স্বামী-স্ত্রী। ওই রাশিয়ান মহিলা বর্তমানে গোয়ায় থাকেন। সেখানে যোগচর্চা শেখান। মাসে ২৫ হাজার টাকা করে উপার্জনও করেন। পারিবারিক আদালত জানিয়েছিল, তাঁদের সন্তান বাবার সঙ্গেই থাকবে। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাই কোর্টে যান মহিলা। অন্তর্বর্তী নির্দেশে পারিবারিক হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
আরও পড়ুন:
দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি অনিল ক্ষেত্রপাল এবং বিচারপতি হরিশ ভি শঙ্করের বেঞ্চ নির্দেশনামায় চন্দননগরের মামলার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছে। নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, “সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা আদালতের নজরে এসেছে। একটি দেশের নাগরিককে সে দেশের দূতাবাসের কর্তারা ভারত থেকে পালাতে সাহায্য করেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। তা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টও। ভিক্টোরিয়া বসু বনাম পশ্চিমবঙ্গের ওই মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। ওই ঘটনার ক্ষেত্রে আদালত বাবা-মা উভয়েরই যৌথ হেফাজতের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মামলাটি এক হতাশাজনক অবস্থায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে শিশুটিকে আদালতের এক্তিয়ার থেকে ‘ছিনিয়ে নেওয়া’ হয়েছে। মামলাটি এখন সংবাদমাধ্যমেরও নজরে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বার বার চেষ্টা করার পরেও বিষয়টি কূটনৈতিক লাল ফিতের গেরোয় আটকে রয়েছে।”