প্রথমে তেল, তার পরে গ্যাস। এ বার সমরাস্ত্র।
আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে জট কাটার ইঙ্গিত ফের মিলল। আমেরিকা থেকে বিপুল পরিমাণে তেল এবং রান্নার গ্যাস আমদানির কথা ঘোষণার পরে এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকার আমেরিকার থেকে প্রায় ৯ কোটি ৩ লক্ষ ডলারের যুদ্ধাস্ত্র কিনতে চলেছে। ভারতকে এই যুদ্ধাস্ত্র বিক্রিতে অনুমোদন দিয়েছে আমেরিকা। এর মধ্যে রয়েছে ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র এবং এক্সক্যালিবার নামের ক্ষেপণাস্ত্র।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়েছিল। সেখানেই ট্রাম্প একতরফা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ভারত আমেরিকার থেকে বিপুল পরিমাণে তেল, গ্যাস ও যুদ্ধাস্ত্র কিনতে চলেছে।এর পরে ট্রাম্প ভারতের উপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেওয়ায় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি থমকে গিয়েছিল। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রক ইঙ্গিত দিয়েছে, এই শুল্ক প্রত্যাহার নিয়ে খুব শীঘ্র ফয়সালা হতে পারে। তবে তার বিনিময়ে ভারতকেও আমেরিকা থেকে আমদানি বাড়াতে হবে। তা স্পষ্ট করে মোদী সরকার আমেরিকার থেকে এক বছরে ২২ লক্ষ টন এলপিজি আমদানি করার জন্য চুক্তি করেছে। দেশে আমদানি হওয়া এলপিজি-র ১০ শতাংশ এখন আমেরিকা থেকে আসবে। ভারত যে আমেরিকা থেকে তেল আমদানি বাড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট। অক্টোবরের পরে নভেম্বরে ভারতকে তেল রফতানির নিরিখে আমেরিকা চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। ভারতে যুদ্ধাস্ত্র রফতানির ক্ষেত্রেও রাশিয়া, ফ্রান্সের পরে আমেরিকা তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ভারতের কেনা যুদ্ধাস্ত্রে রাশিয়ার ভাগ কমেছে। এ বার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত পাকা হলে আমেরিকা থেকে যুদ্ধাস্ত্র আমদানি আরও বাড়বে।
বিরোধীদের অভিযোগ, ট্রাম্প আসলে চড়া শুল্ক ও বাণিজ্যের জন্য চাপ দিয়ে ভারতকে আমেরিকা থেকে আরও বেশি মাত্রায় তেল, গ্যাস, যুদ্ধাস্ত্র কিনতে বাধ্য করছেন। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি ৬১-তম বার দাবি করেছেন, তিনিই অপারেশন সিঁদুর থামিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনি মোদীকে চাপ দিয়েছিলেন। অপারেশন সিঁদুর না থামলে ৩৫০ শতাংশ শুল্কের হুমকি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার পরেও কেন নীরব? তাঁর মন্ত্রীরাওকেন নীরব?’’
আমেরিকার বিদেশ দফতরের ডিফেন্স সিকিউরিটি কো-অপারেশন এজেন্সি জানিয়েছে, এই যুদ্ধাস্ত্র হাতে পেলে ভারতের বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিপদের সঙ্গে মোকাবিলার ক্ষমতা বাড়বে। এই অস্ত্র বিক্রি ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিরতা, শান্তি ও আর্থিক উন্নয়নের জন্য জরুরি।’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)