প্রথমে এসেছিল বিকৃত অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে হুমকি। পরে তাঁকে রাস্তায় একা পেয়ে জোর করে টেনে গিয়ে গণধর্ষণের চেষ্টা। সেই সময় গর্ভপাতের বড়িও খাওয়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। নির্যাতিতার কানের কাছে মুখ এনে অভিযুক্তদের এক জন বলেছিলেন, ‘‘সন্তানকেও মেরে ফেলব। চিন্তার কিছু নেই!’’
দিল্লির আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ তোলা সেই ‘নির্যাতিতা’র বয়ানে ঘটনার এমনই বর্ণনা উঠে এসেছে। এফআইআর-এর প্রতিলিপির ঘেঁটে এ কথা জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’।
‘নির্যাতিতা’ মোট চার জন অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার। অভিযোগপত্রে তাঁর বক্তব্য, ঘটনার দু’-তিন দিন আগে থেকেই হুমকি মেল পাচ্ছিলেন তিনি। সেই মেলে তাঁকে শনিবার রাতে ময়দান গঢ়হীর কাছে দেখা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। এড়িয়ে গিয়েছেন। পর দিন আবার একটি মেল আসে। সেই মেলেও অশ্লীল ভাষায় কিছু কথা লেখা হয় তাঁর উদ্দেশে। হস্টেলের বাইরে বেরোতে বলা হয় তাঁকে। মেলটি তিনি বন্ধুদেরও দেখিয়েছিলেন। মেলে বলে দেওয়া সময়ে বাইরেও বেরিয়েছিলেন। কিন্তু কাউকেই দেখতে পাননি। এর পর রবিবার আরও একটি মেল পাঠানো হয়। সেই মেলে তাঁর হোয়াটস্অ্যাপের প্রোফাইল ছবি বিকৃত করে পাঠানো হয়। হুমকি দেওয়া হয়, যদি তিনি গেট নম্বর তিনের সামনে দেখা না করেন, তা হলে ওই ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
‘নির্যাতিতা’র অভিযোগ, একের পর এক মেল পাওয়ার পরেই ঘটনাটি ঘটে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন সেন্টারের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই রাস্তার উপর একটি নির্মীয়মাণ বাড়়ি রয়েছে। সেই বাড়িতে থাকা নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে দেখতে পেয়ে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে ডাক দেন। এর পর আরও দুই যুবক সেখানে এসে তাঁকে টানতে টানতে কনভোকেশন সেন্টারের পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ নির্যাতিতার।
অভিযোগপত্রে ওই ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রী জানান, হামলাকারীদের এক জন তাঁকে জোর করে গর্ভপাতের বড়ি খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা মুখ থেকে ফেলে দিয়েছিলেন। এর পরেই ওই যুবক পা দিয়ে তাঁকে চেপে ধরার চেষ্টা করেন। আর এক জন তাঁর চোখ বেঁধে দেন। এর পর হামলাকারীরা তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই সময় বাইরে কয়েক জনের আওয়াজ শুনতে পেয়েই তাঁরা পালিয়ে যান বলে দাবি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ‘নির্যাতিতা’। তাঁর দাবি, হস্টেলের ইনচার্জ প্রথমে তাঁর কথা বিশ্বাসই করেননি। তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘‘স্নান করে কাপড় বদলে নাও।’’ শুধু তা-ই নয়, ঘটনা সম্পর্কে তাঁর মা বা বাইরের কাউকেও বলতেও বারণ করা হয়েছিল। ভিডিয়ো কলে পরিবারের লোকেদের ক্ষতচিহ্ন দেখাচ্ছিলেন নির্যাতিতা। সে কাজ করতেও নিষেধ করা হয় তাঁকে। এই পরিস্থিতি নির্যাতিতার বন্ধুরাই পুলিশে খবর দেন। সেই খবর পাওয়া মাত্রই এক মহিলা সাব ইনস্পেক্টর ঘটনাস্থলে যান।
দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) অঙ্কিত চৌহান বলেন, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত চলছে।’’ যদিও অভিযুক্তদের এখনও খোঁজ মেলেনি। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন আধিকারিক জানান, ক্যাম্পাসের ৬০-৭০ জন নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নির্যাতিতার বন্ধুদের বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে। ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ হস্টেলের যে কেয়ারটেকার এবং ওয়ার্ডেন ‘নির্যাতিতা’কে পোশাক বদল করতে এবং স্নান করতে বলেছিলেন বলে ‘নির্যাতিতা’ দাবি করছেন, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।”