ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা দিল্লি এবং তার আশপাশের এলাকা। বিষাক্ত বায়ু ঘিরে রেখেছে রাজধানীকে। শনিবারের তুলনায় রবিবারের পরিস্থিতি আরও খারাপ! বিষাক্ত ধোঁয়াশার পুরু স্তর ঢেকে ফেলেছে শহরকে। বাতাসের গুণগত মান (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই) বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় দৃশ্যমানতা অনেকটাই কমেছে।
কেন্দ্রীয় দূযণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (সিপিসিবি) তথ্য অনুসারে, দিল্লির একিউআই রবিবার সকাল ৭টায় ৪৬১-এ পৌঁছেছে। শনিবার দিল্লির একিউআই ছিল ৪৩১।
দিল্লির সব পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের বাতাসের গুণগত মান ‘ভয়ানক’। তবে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গা রয়েছে, যেখানকার বাতাস আরও খারাপ। রবিবার সকালে ওয়াজ়িরপুরের একিউআই ৪৯৩, বিবেক বিহারে ৪৯৫, আনন্দ বিহারে ৪৯১, বাওয়ানায় ৪৯৮ এবং নরেলায় ৪৯২। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রোহিণীতে। সেই এলাকার একিউআই ৪৯৯।
সিপিসিবি-র তথ্য অনুযায়ী, একিউআই যদি ০-৫০ থাকে, তা হলে সেটি ভাল। ৫১-১০০ হলে সন্তোষজনক। ১০১-২০০ হলে মাঝারি। ২০১-৩০০ হলে খারাপ। ৩০১-৪০০ হলে অত্যন্ত খারাপ। ৪০১-৫০০ হলে ভয়ানক।
ভুগছে এনসিআর-ও
শুধু রাজধানী নয়, বিষ বাতাস ছড়িয়েছে দিল্লির আশপাশের এলাকাতেও। এনসিআরের বেশ কিছু জায়গায় দূষণের মাত্রা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। নয়ডার একিউআই ৪৭০। একই ভাবে ‘ভয়ানক’ পর্যায়ে রয়েছে গাজ়িয়াবাদ। সেখানকার একিউআই ৪৬০। তুলনায় গুরুগ্রামের (একিউআই ৩৪৮) পরিস্থিতি সামান্য ভাল। ফরিদাবাদের (একিউআই ২২০) অবস্থাও তেমন খারাপ নয়।
দৃশ্যমানতা কম
ভোর থেকেই দূষণের প্রভাব প্রকট রাজধানীতে। এক দিকে, ধোঁয়াশা অন্য দিকে, ঘন কুয়াশা— দুইয়ে ঢেকে রয়েছে দিল্লি। কয়েক মিটার দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। কয়েকটি জায়গায় দৃশ্যমানতা শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে, যার ফলে প্রভাব পড়েছে যান চলাচলেও।
ঘন কুয়াশার সতর্কতা জারি
ভারতের মৌসম ভবন (আইএমডি) জানিয়েছে, রবিবার ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দৃশ্যমানতা ১০০ মিটার পর্যন্ত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। জারি হয়েছিল ঘন কুয়াশার সতর্কতাও। আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতি পরিবর্তনের তেমন সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন:
চালু জিআরএপি-৪
শনিবার থেকেই দিল্লি এবং তার আশপাশের অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটতে থাকে। সেই আবহে আরও কড়া প্রশাসন। শহর জুড়ে চতুর্থ তথা সর্বোচ্চ স্তরের ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’ (জিআরএপি-৪) চালু হয়েছে। জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিসে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ হবে। স্কুলগুলির জন্যও নানা বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুলগুলি আপাতত চলবে ‘হাইব্রিড মডেলে’। অর্থাৎ, স্কুলে আসার পরিবর্তে বাড়ি থেকে অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা
দিল্লির হাসপাতালগুলিতে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের সংখ্যা এক লাফে আগের থেকে ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। রোগীদের মধ্যে বয়স্কদের পাশাপাশি রয়েছেন তরুণ এবং শিশুরাও। চিকিৎসকদের কথায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগে এ ধরনের রোগীদের ভিড় লেগেই রয়েছে।