স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে না চাওয়া, বন্ধুদের সামনে তাঁকে অপমান করা, বার বার পরকীয়া সন্দেহে তাঁকে অভিযুক্ত করা আসলে নিষ্ঠুরতারই শামিল। এর ফলে হিন্দু বিবাহ আইনে বিচ্ছেদ হতে পারে। এক দম্পতির মামলায় এমনটাই জানাল বম্বে হাই কোর্ট। স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন স্বামী। তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হয়েছে। পারিবারিক আদালত এ বিষয়ে যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা-ই বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদে সায় দেওয়া হয়েছে। খারিজ হয়েছে স্ত্রীর ভরণপোষণ খরচের আবেদনও।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে হয়েছিল ওই দম্পতির। এক বছরের মাথায় ব্যক্তিগত কারণে তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বিচ্ছিন্ন স্বামী এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মহিলা। জানান, তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে অপমান এবং হেনস্থা করা হয়েছে। এমনকি, তাঁর গয়নাগাটি আটকে রেখে তাঁকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
পরে আবার পুণের পারিবারিক আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ওই মহিলা জানান, তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চান না। ওই বাড়িতেই সংসার করতে চান। তবে মহিলার স্বামী তখন বিবাহবিচ্ছেদের জন্য পাল্টা আবেদন জানান। স্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার অভিযোগ তোলেন তিনি। হেনস্থা এবং গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ অস্বীকার করেন আদালতে। এই মামলা চলাকালীনই আদালতে স্বামী জানিয়েছিলেন, নানা ভাবে স্ত্রী তাঁকে হেনস্থা করেছেন। তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হননি। বন্ধুদের সামনে অস্বাভাবিক আচরণ করেছেন, তাঁকে অপমান করেছেন। পরকীয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন তাঁর বিরুদ্ধে। যুবকের বাড়িতে তাঁর বিশেষ ভাবে সক্ষম বোন থাকেন। তাঁকেও হেনস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করেন যুবক। ২০১৯ সালে পুণের পারিবারিক আদালত এই মামলায় যুবকের পক্ষে রায় দিয়েছিল। নির্দেশ দিয়েছিল বিবাহবিচ্ছেদের। নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মহিলা হাই কোর্টে যান ২০২১ সালে। স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ বাবদ মাসে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন মহিলা।
বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতি রেবতী মোহিতে দেরে এবং বিচারপতি নীলা গোখেলের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ, মহিলার দাবিগুলির সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্বামীর প্রতি তাঁর আচরণ নিষ্ঠুর ছিল। বন্ধুদের সামনে স্বামীকে অপমান করলে তাঁর মানসিক যন্ত্রণা স্বাভাবিক। আদালত বলেছে, ‘‘শারীরিক সম্পর্কে ‘না’ বলা, ভিত্তিহীন পরকীয়ার অভিযোগ আনা স্ত্রীর নিষ্ঠুরতা। স্বামীর বোনের প্রতি মহিলার আচরণও তাঁর পরিবারকে যন্ত্রণা দিয়েছে।’’ ফলে পারিবারিক আদালতের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করেনি হাই কোর্ট। মহিলার ভরণপোষণের আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।