Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Tamil Nadu Politics

তামিলভূমে কি তালগোল? স্বর্ণদণ্ডে দ্রাবিড় আবেগ ছুঁতে চেয়েছিলেন মোদী, ‘আম্মা’র দল এড়াল গেরুয়া ছোঁয়া

নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ঐতিহাসিক রাজদণ্ড ‘সেঙ্গোল’ তুলে দিয়েছিলেন তামিল অধিনমের সদস্যরা। যা আসলে দ্রাবিড় আবেগকে ছোঁয়ার চেষ্টা বলে মনে করেছিলেন অনেকে।

Narendra Modi

সেঙ্গোল হাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫০
Share: Save:

লোকসভা ভোটে ‘নতুন জমি’ পেতে চায় বিজেপি। নজর তাই দক্ষিণে। লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে বিজেপির দাক্ষিণাত্য-জয়ে অক্সিজেন জোগানোর মতো ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার। কর্নাটকের একদা শাসক জনতাদল সেকুলার ঘোষণা করেছিল, তারা বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএতে শামিল হচ্ছে। কিন্তু ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাল কেটে দিয়েছে তামিলভূম।

তামিলনাড়ুর একদা শাসকদল এআইএডিএমকে দলের বৈঠক করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা আর এনডিএতে থাকবে না। লোকসভা ভোটে তারা লড়বে তাদের মতো করে। তার পরেই রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, এ বারও কি তামিলভূমে খাতা খুলবে না গেরুয়া শিবিরের? লোকসভার আগে প্রয়াত জয়ললিতার দল বিজেপির সঙ্গ ছাড়ায় কতটা চাপ গেরুয়া শিবিরের?

রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে বিজেপির একটি আসনও ছিল না তামিলনাড়ুতে। তৎকালীন জোটসঙ্গী এআইএডিএমকে জিতেছিল মাত্র একটি আসন। ৩৯টি আসনের মধ্যে বাকি ৩৮টি আসন জিতেছিল এমকে স্ট্যলিনের ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোট। যে জোটে কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই, মুসলিম লিগের মতো দলগুলি রয়েছে। ফলে রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ এই সংখ্যাতত্ত্ব দেখিয়ে দাবি করছে, তামিলনাড়ুতে বিজেপির হারানোর কিছু নেই। তাই এআইএডিএমকে-র ছেড়ে যাওয়া তাদের কাছে ভোটের অঙ্কে কোনও বিড়ম্বনার বিষয় নয়।

কিন্তু রাজনৈতিক মহলের অনেকে আবার বলছেন, তামিলনাড়ুকে বিজেপি ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে অন্য চোখে দেখছিল। তাঁদের বক্তব্য, গত ২৭ মে, নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের আগের রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে ঐতিহাসিক রাজদণ্ড ‘সেঙ্গোল’ তুলে দিয়েছিলেন তামিল অধিনমের সদস্যেরা। দেশের স্বাধীনতার পর ব্রিটিশদের থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক ওই স্বর্ণদণ্ড সেঙ্গোল। যাকে নতুন সংসদভবনে স্থাপন করে মোদী দ্রাবিড় আবেগ ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেই মনে করেছিলেন অনেকে। যার নিহিত উদ্দেশ্য ছিল তামিলভূমে জমি তৈরি করা।

অনেকেই মনে করেন, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি একা ৩০০ পার করেছিল ঠিকই, কিন্তু যে-যে রাজ্যে তারা যে-যে সংখ্যক আসন জিতেছিল, তা আর বাড়ানোর সুযোগ কম। বরং প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় কিছু আসন কমতে পারে। সেই ‘শূন্যস্থান’ পূরণ করতেই নতুন রাজ্যে, নতুন মুলুকে আসন পেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। যে কারণে কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনকে ‘লোকসভার মহড়া’ হিসাবে দেখেছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী মোদী কার্যত মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সেখানে প্রচার করেছিলেন। তীব্রতর করা হয়েছিল ধর্মীয় মেরুকরণও। কিন্তু তার পরেও কংগ্রেসকে ঠেকানো যায়নি। সরকার ভাঙা-গড়া, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বদল করেও কর্নাটক ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি।

রাজনীতিতে কিছু কিছু বিষয়কে ‘সূচক’ হিসাবে দেখা হয়। যেমন, তামিলনাড়ুতে সলতে পাকাতে বিজেপি হাতিয়ার করেছিল স্ট্যালিনের পুত্র তথা সেই রাজ্যের মন্ত্রী উদয়নিধির ‘সনাতন ধর্ম বিরোধী’ মন্তব্যকে। সমাজমাধ্যমে এমনই সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা যে, যাঁরা জানতেন না তাঁরাও জেনে গিয়েছেন, স্ট্যালিনের এক পুত্র আছেন। প্রয়াত করুণানিধির নাতি তথা স্ট্যালিনের পুত্র আবার তামিলনাড়ুর মন্ত্রীও বটে। কিন্তু সেই সলতে পাকার আগেই ‘আম্মা’র দলের পদ্মশিবিরের সঙ্গ ত্যাগ আসলে গেরুয়া শিবিরের জন্য ধাক্কাই।

দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র কর্নাটকে গত লোকসভা ভোটে অভূতপূর্ব ফল করেছিল বিজেপি। ২৭টি আসনের মধ্যে ২৫টিতেই পদ্ম ফুটেছিল। কিন্তু এ বার সেই ফলাফল ধরে রাখা যাবে কি না তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরেই সংশয় রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, প্রশাসনে সিদ্দারামাইয়া আর সংগঠনে ডিকে শিবকুমার কন্নড়ভূমে কংগ্রেসকে শক্ত জমিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকে এ-ও বলছেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া এবং তাঁর ছেলে এইচডি কুমারস্বামীর দল জেডিএসের সঙ্গে বিজেপির জোট গেরুয়া শিবিরকে বেশ কিছু আসনে ভাল ফল করতে সাহায্য করবে। এ কথা ঠিক যে, জেডিএস নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতেই বিজেপির হাত ধরেছে। কারণ, গত বিধানসভা ভোটে ২২৪টি আসনের মধ্যে ১৯টিতে জিতেছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দল। তবে এ-ও ঠিক যে, বিজেপিও বুঝতে পারছে ২০১৯-এর থেকে কর্নাটকে আর আসনবৃদ্ধির কোনও জায়গা নেই। বরং তারা কমতে পারে। অন্য দিকে বিহার, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ-সহ গেরুয়া ‘গড়’ বলে পরিচিত রাজ্যগুলিতে কী হবে, তা নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে। বাংলাত‌েও গত বারের ফল বিজেপি ধরে রাখতে পারবে কি না, সে জল্পনাও রয়েছে।

অনেকের মতে, বিজেপি ভোট এবং ভোটের অঙ্ক বোঝে। সেই অঙ্ক থেকেই গেরুয়া শিবির তামিলনাড়ুকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছিল। কিন্তু জয়ললিতার দলের ‘একলা চলো’ আপাত ভাবে তাদের কাছে ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও বিজেপির এক সর্বভারতীয় নেতা আবার তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে অন্য হিসাবের কথা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এআইএডিএমকে যদি একা লড়ে, তা হলে তারা কয়েকটি আসন জেতার জায়গায় গেলেও যেতে পারে। তাতে ভোট পরবর্তী অঙ্কে বিজেপিরই লাভ।

তবে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণার পর চেন্নাইয়ে এআইএডিএমকে সদর দফতরের সামনে সমর্থকেরা যে ভাবে বাজি ফাটিয়ে উৎসব করেছেন, তা গেরুয়া শিবিরের পক্ষে খুব একটা স্বস্তির নয়। জেডিএসকে জোটে নিয়ে যে বার্তা বিজেপি দিতে পেরেছিল, ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই তা মিলিয়ে গিয়েছে। তবে রাজনীতি সদা প্রবহমান। এখন দেখার, দাক্ষ্যিণাত্য জয়ে কী অঙ্কে এগোয় গেরুয়া শিবির। তার আগে অবশ্য তেলঙ্গানা বিধানসভা ভোটেও গেরুয়া শিবিরের ফলাফলের দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE