Advertisement
E-Paper

মুখে কলম চলে দ্রুত, মাধ্যমিক দিচ্ছে কলিম

গিরিডির বিরনির মঝিলাডিহ গ্রামের কলিম আনসারির মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া দেখতে গোটা স্কুলেরই কৌতূহল। হবে না-ই বা কেন!  কলিম হাতে নয়, মুখ দিয়ে লেখে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৯
লড়াই: পেন মুখে চলছে কলিম আনসারির পরীক্ষা। —নিজস্ব চিত্র

লড়াই: পেন মুখে চলছে কলিম আনসারির পরীক্ষা। —নিজস্ব চিত্র

বছর পনেরোর ছেলেটি পরীক্ষার হলে ঢুকলেই বাকি পরীক্ষার্থীরা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকায়। এমনকী, ওকে দেখলে নিজের অজান্তে উঠে দাঁড়ান পরীক্ষার হলের পর্যবেক্ষকও। তাঁর চোখেও বিস্ময়। ছেলেটির সিটে গিয়ে তিনি রেখে আসেন প্রশ্নপত্র ও উত্তর লেখার খাতা।

গিরিডির বিরনির মঝিলাডিহ গ্রামের কলিম আনসারির মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া দেখতে গোটা স্কুলেরই কৌতূহল। হবে না-ই বা কেন! কলিম হাতে নয়, মুখ দিয়ে লেখে। মুখে কলম গুঁজে মাথা ঝুঁকিয়ে খাতায় লিখে যায় প্রশ্নের উত্তর। দু’টো হাতই নেই। না বাড়তি সময় বা বাড়তি কোনও সুযোগও পাচ্ছে না সে। পেন মুখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ করছে কলিম।

বয়স তখন সাত। প্রথম শ্রেণিতে পড়ত কলিম। খেলতে গিয়ে হাত দিয়ে ফেলেছিল মাটিতে ছিঁড়ে পড়ে থাকা হাই ভোল্টেজে তারে। দু’টো হাতই ঝলসে যায় কলিমের। কলিমের বাবা ইউনিস আনসারি বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ছেলেকে বাঁচাতে পারলেও ছেলের হাত দু’টো বাঁচতে পারেননি। ডান হাত কাঁধ থেকে ও বাঁ হাত কনুই থেকে কাটা পড়ে।

পড়াশোনা থামায়নি ছোট্ট কলিম। প্রত্যেক ক্লাসে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে পৌঁছে গিয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত। স্কুলের সামনে কলিমের জন্য টিফিন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কাকা ইয়াকুম আনসারি। বললেন, ‘‘ওর যখন হাত দু’টো কাটা পড়ল, তখন ও প্রথমে পা দিয়ে লেখার চেষ্টা শুরু করে। পা দিয়ে খুব ভাল লিখতে পারছিল না। তার পর রাতের পর রাত জেগে মুখে পেন নিয়ে লেখার অনুশীলণ করত কলিম। এখন ও মুখ দিয়ে দ্রুত লিখতে পারে।’’

গিরিডির সরিয়ার নেতাজি পার্ক সন্ত মেরি পাবলিক স্কুলে কলিমের সিট পড়েছে। ওই স্কুলের সেক্রেটারি পীযূষ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘পরীক্ষার খাতায় ওর লেখা দেখেছি। মনেই হবে না যে ও মুখে করে লিখেছে।’’ কলিমের বাবা বলেন, ‘‘পড়াশোনার প্রতি ওর জেদ দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। আমি গরিব রাজমিস্ত্রি। তবু ওকে বলেছি উচ্চশিক্ষার জন্য যতটা খরচ জোগানোর সাধ্য হবে, দেব।’’

পরীক্ষা হলে ঢোকার আগে কলিম জানাল, আগের পরীক্ষাগুলি ভালই হয়েছে। বেশি কথা বলার সুযোগ ছিল না। কলিম ঢুকে যায়।

পরে ফোনে কথা হল ফের। জানাল, বড় হয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। হাত নেই বলে সাময়িক অসুবিধা হলেও এখন আর এটাকে অসুবিধা মনে করে না সে। কলিম বলে, ‘‘কত প্রতিবন্ধী কত কিছু জয় করেছেন! প্রতিবন্ধী এভারেস্টে উঠেছেন! স্টিফেন হকিংও তো প্রতিবন্ধী ছিলেন!’’ ফোনের ও পারে কলিমের গলায় প্রত্যয়।

Madhyamik kalim Ansari Differently abled Student Ranchi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy