জন্মদিবসে আলোচনার আলোয় ফিরে এলেন বিস্মৃতপ্রায় শিশিরকুমার।
শনিবার চিত্তরঞ্জন পার্কের চিত্তরঞ্জন ভবনে তাঁর ৭৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পাঠ ও আলোচনায় আবার আলোকিত হয়ে উঠলেন অনুবাদক, নাট্যকার, কবি এবং ভারতে তুলনামূলক সাহিত্য বিষয়ে শিক্ষাদানের অন্যতম পথিকৃৎ শিশিরকুমার দাশ। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন মেমোরিয়াল সোসাইটি ও ‘এক এবং দশ’ সাহিত্য পাঠচক্রের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে তাঁর বহুবিধ সারস্বত কর্ম ও সৃজন বিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি হল তাঁর কবিতা, গদ্য ও ‘অলৌকিক সংলাপ’ নাট্যাংশের পাঠ। ২০০৩ সালে প্রয়াত শিশিরকুমারের জন্ম ১৯৩৬ সালে। পঞ্চাশের দশকে, বিশেষ করে ১৯৫২ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ‘দেশ’, ‘পূর্বাশা’-সহ প্রায় সব প্রথম সারির বাংলা পত্রিকার নিয়মিত লেখক। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ পর্যন্ত লন্ডনের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এ শিক্ষকতা করে ফেরার পর যোগ দেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্যচর্চা বিভাগে। ১৯৮০ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ছিলেন সেখানকার ‘টেগোর প্রফেসর’ পদে। ১৯৯৯ থেকে আমৃত্যু ছিলেন কম্পারেটিভ লিটারেচার অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি। বলা চলে, মোটামুটি ভাবে তাঁর লন্ডনবাসের সময়কাল থেকে বা দিল্লিতে দীর্ঘ পেশাগত জীবন চলাকালীন বাংলা সাহিত্যজগতের মূল স্রোত থেকে কিছুটা উপেক্ষিত হয়ে পড়েন তিনি। আজকের অনুষ্ঠান তাই বিস্মৃতির আড়ালে চলে যেতে বসা শিশিরকুমারকে নতুন করে চেনার প্রয়াস হল। সেখানে তাঁর বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তৃতা দিলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলকুমার ভট্টাচার্য, আশিস নন্দী ও শ্যামাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। শিশিরকুমারকে নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণামূলক কাজ করছেন হিমাদ্রী দত্ত। শিশিরকুমারের পরিচিতি ও বইপত্র নিয়ে তাঁর লেখা একটি বইও প্রকাশিত হল অনুষ্ঠানে। অগ্রজ কবি শঙ্খ ঘোষ, যিনি রবীন্দ্রনাথের কিছু নির্বাচিত লেখা নিয়ে একটি সঙ্কলনের অন্যতম যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন শিশিরকুমারের সঙ্গে, একটি শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। অনুষ্ঠানে পড়া হল সেটিও।
সভার সম্মিলিত মত, বাংলা সাহিত্যে শিশিরকুমার স্মরণীয় হয়ে থাকবেন গীতা স্তোত্রের উপর লেখা পান্ডুলিপি সংস্করণে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অবলুপ্ত চতুর্থ চরণ’, গদ্যগ্রন্থ ‘মধুসূদনের কবিমানস’ এবং নাটক ‘অলৌকিক সংলাপ’-এর জন্য। তবুও নিয়মিত বাংলায় লেখালেখি করতে না পারার আক্ষেপ তাঁর ছিল। যদিও প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যের প্রচুর অনুবাদ তিনি করেছেন। পাশাপাশি, ইংরেজিতেও তিনি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করে গেছেন। ‘ইংলিশ রাইটিং অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ সম্পাদনা ও তিন খণ্ডে প্রকাশিত ‘আ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়াল লিটারেচার’ তার মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল। সাহিত্য অকাদেমি থেকে দশ খণ্ডে প্রকাশ পাওয়ার কথা থাকলেও তাঁর আকস্মিক মৃত্যু তিন খণ্ডেই দ্বিতীয়টির যবনিকা টেনে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy