Advertisement
E-Paper

গাফিলতির কোপ নয় লাইসেন্সে, খুশি ডাক্তাররা

চিকিৎসায় গাফিলতির ঘটনায় চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল হবে না, এ কথা সুপ্রিম কোর্ট বলে দেওয়ার পর খুশি ডাক্তারদের একটা বড় অংশ। চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন- এর প্রধান কৃষ্ণকুমার অগ্রবালের কথায়, ‘‘সঠিক রায়। বিচারকদেরও বিচার নিয়ে মতভেদ থাকে। তাঁরাও তো মানুষ।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৭

চিকিৎসায় গাফিলতির ঘটনায় চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল হবে না, এ কথা সুপ্রিম কোর্ট বলে দেওয়ার পর খুশি ডাক্তারদের একটা বড় অংশ। চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন- এর প্রধান কৃষ্ণকুমার অগ্রবালের কথায়, ‘‘সঠিক রায়। বিচারকদেরও বিচার নিয়ে মতভেদ থাকে। তাঁরাও তো মানুষ।’’

তিনি বলেন, ‘‘এক জন বিচারকের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। হয়তো অন্য বিচারকের মতে, সে ক্ষেত্রে মৃত্যদণ্ড না দিলেও হত। এর জন্য কি প্রথম বিচারকের বিচার করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হবে?’’

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহার ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি জানায়, চিকিৎসকেরাও মানুষ। তাঁদের চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল কি না, সেটা শুধু ঈশ্বর বলতে পারেন। সেই জন্য তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করা যায় না। বস্তুত, চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স বাতিলের আর্জি সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।

মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সচিব রিনা নায়ারের কথায়, ‘‘ঘটনা কতটা গুরুতর, তাতে চিকিৎসকদের ইচ্ছাকৃত ভুল কতটা ছিল, তার উপর বিচার নির্ভর করে। শীর্ষ আদালতের রায় মাথা পেতে নিতে হবে।’’

ভুল চিকিৎসায় চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল হবে না বলে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের প্রেক্ষাপটে কিন্তু রয়েছে বহু চর্চিত সেই অনুরাধা সাহা মামলা। ১৯৯৮ সালে বিরল ধরনের ত্বকের অসুখে মৃত্যু হয়েছিল ওই মহিলার। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল তিন চিকিৎসককে নির্দোষ বললেও তাঁদের দোষী বলেছিল ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’। ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট-ও রায় দেয়, ওই মহিলার মৃত্যুর ক্ষেত্রে তিন চিকিৎসকের গাফিলতি ছিল।

ওই তিন জন ও কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণও দিতে বলে শীর্ষ আদালত। তিন জনের মধ্যে দু’জন চিকিৎসকের ১০ লক্ষ টাকা করে ও তৃতীয় জন চিকিৎসকের ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ধার্য হয়। বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষতিপূরণ ধার্য হয় ৫ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা।

কিন্তু অনুরাধাদেবীর স্বামী, চিকিৎসক কুণাল সাহা ওই তিন চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিলের দাবিতে ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। আদালত তার রায়ে বলেছে, ‘‘ঘটনাটি ১৯ বছরের পুরনো। ইতিমধ্যে ওই চিকিৎসকেরা শাস্তি পেয়েছেন, সমাজে তাঁদের সম্মান নষ্ট হয়েছে। তাঁরা প্রচুর টাকা ক্ষতিপূরণও দিয়েছেন। এ বার কুণালবাবুর ক্ষান্ত হওয়া উচিত।’’

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ‘‘বিচারকরাও মানুষ। আমাদেরও তো ভুল হতে পারে। যদি আমরা চিকিৎসকদের ভুলের জন্য লাইসেন্স বাতিল করার কথা বলি, তা হলে কী বার্তা যাবে?’’

অনুরাধা সাহা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর অস্বস্তিতে পড়েছিল দেশের চিকিৎসক মহল। অনেকেরই তখন বক্তব্য ছিল, চিকিৎসকেরা জেনেশুনে কখনও রোগীর ক্ষতি করতে চান না, বরং রোগীকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁরাও মানুষ, তাঁদের চেষ্টা সব ক্ষেত্রে সফল না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের অপরাধীর পর্যায়ে ফেলা যায় না বলে সওয়াল করেছিলেন চিকিৎসকেরা।

সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিকতম নির্দেশের পর স্বস্তিতে বহু চিকিৎসক।

তবে মৃতার স্বামী বলছেন, ‘‘লাইসেন্স যদি বাতিল না-হয়, তা হলে শাস্তি হল কোথায়? আমি সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করব।’’

Supreme Court Medical Negligence Doctor's license
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy