Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

২৩২টা দাঁত তুলে মুখ হাঁ চিকিৎসকদের

ছেলের গাল ফুলে ঢোল। এতটুকু খাবারও দাঁতে কাটার অবস্থায় নেই। কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। এ দিকে, গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শহরের হাসপাতাল, বহু বইপত্র ঘেঁটেও এ অসুখের কূলকিনারা করতে পারছিলেন না কোনও ডাক্তার। শেষমেশ মুখ থেকে বের হল ২৩২টি দাঁত! অসাধ্য সাধন করলেন দক্ষিণ মুম্বইয়ের এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। উচ্ছ্বসিত ডাক্তারদের দাবি, এক জনের মুখ থেকে এতগুলো দাঁত তোলার রেকর্ড বিশ্বের আর কোথাও নেই।

সেই ২৩২টি দাঁত।

সেই ২৩২টি দাঁত।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৯
Share: Save:

ছেলের গাল ফুলে ঢোল। এতটুকু খাবারও দাঁতে কাটার অবস্থায় নেই। কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। এ দিকে, গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শহরের হাসপাতাল, বহু বইপত্র ঘেঁটেও এ অসুখের কূলকিনারা করতে পারছিলেন না কোনও ডাক্তার। শেষমেশ মুখ থেকে বের হল ২৩২টি দাঁত! অসাধ্য সাধন করলেন দক্ষিণ মুম্বইয়ের এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। উচ্ছ্বসিত ডাক্তারদের দাবি, এক জনের মুখ থেকে এতগুলো দাঁত তোলার রেকর্ড বিশ্বের আর কোথাও নেই।

Advertisement

ভোগান্তির সূত্রপাত মাস চারেক আগে। ঔরঙ্গাবাদের বালসাভাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা ১৭ বছরের আশিক গাভাইয়ের মুখের ডান দিক অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে উঠতে শুরু করে। বহু ডাক্তার দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বাবা-মা তখন তাকে ঔরঙ্গাবাদের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। তারাও রোগের কূলকিনারা করতে না পেরে পাঠিয়ে দেয় দক্ষিণ মুম্বইয়ের বাইকুল্লার সরকারি হাসপাতালে।

“ছেলেটির ডান গালের ফোলা অংশে ব্যথা ছিল না। তবে অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে যাওয়ায় চেহারায় বিকৃতি এসে গিয়েছিল”, বললেন দন্তবিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুনন্দা ধীবারে। জানালেন বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁদের মনে সন্দেহ জাগে, মুখের ডান দিকে নীচের মাড়ির তলায় কোনও অতিরিক্ত অংশ চাপা পড়ে রয়েছে। যা খালি চোখে বোঝা যাচ্ছে না। তাঁরা ঠিক করেন, অস্ত্রোপচার করে দেখতে হবে ভিতরে কী আছে। এ দিকে, গরিব পরিবারের অস্ত্রোপচার করানোর ক্ষমতাই নেই। শেষে ডাক্তাররাই ‘রাজীব গাঁধী জীবনদায়ী যোজনা’য় কিশোরের নাম লিখিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন।

অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে সুনন্দারা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, কী অপেক্ষা করে ছিল তাঁদের জন্য। মাড়ির চামড়া খুলতেই ডাক্তারদের মুখ হা।ঁ ভিতরে লুকিয়ে সারি সারি দাঁতের মতো অংশ। সুনন্দার কথায়, “আমরা এক এক করে দাঁতগুলো তুলতে শুরু করি। সবগুলোর আকার সমান নয়। কোনওটা একেবারে সরষে দানার মতো ছোট। কোনওটা আবার মাপে গুলির (মার্বেল) সমান।”

Advertisement

তিনি জানালেন, ওই অংশগুলোই ক্রমশ মাড়ি ঠেলে দাঁতের মতো বেরিয়ে আসছিল। তাই অস্ত্রোপচার না করা হলে, ভবিষ্যতে খুবই যন্ত্রণাদায়ক হোত। “কিন্তু অবাক ব্যাপার, শুধুমাত্র মুখের ডান দিকের নীচের মাড়িতেই এ রকম হয়েছিল। মাড়ির বাকি অংশ একেবারে স্বাভাবিক ছিল”, বললেন সুনন্দা। সাত ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে মাড়ির তলা থেকে বেশ কিছু পাথুরে অংশও বের করা হয়েছে, জানালেন ডাক্তাররা। তাঁদের বক্তব্য, শিশু বয়সেই এই অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে নিরীহ টিউমার হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে এদের। চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় বলে ‘কমপ্লেক্স ওডোন্টোমা’।


আশিক গাভাই।

দন্ত-চিকিৎসকদের বক্তব্য, ভ্রূণের বয়স যখন ৬ সপ্তাহ, তখনই দুধের দাঁত ও স্থায়ী দাঁতের কুঁড়ি (টিথ-বাড) তৈরি হয়ে যায়। আশিকের ক্ষেত্রে সে সময়ই কোনও ভাবে ওই অতিরিক্ত অংশগুলো তৈরি হয়েছিল। যা সতেরো বছর পরে দাঁত হিসেবে মাড়ি ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। এই অস্বাভাবিকতা খুবই বিরল। তবে সংখ্যাটাই আরও অবাক করছে চিকিৎসকদের। একসঙ্গে ২৩২টা!

গত ২১ জুলাই অস্ত্রোপচারের পর তিনটে দিন ভালয় ভালয় কেটে গিয়েছে। আরও এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখার পরই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে আশিককে।

ছবি: এএফপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.