Advertisement
E-Paper

ভারত-পাকিস্তানের উচিত একসঙ্গে নৈশভোজ করা! সংঘর্ষবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছে আমেরিকাই, ফের দাবি ট্রাম্পের

ট্রাম্প বললেন, ‘‘ভারত এবং পাকিস্তানের দুই রাষ্ট্রনায়কই খুব ক্ষমতাশালী, শক্ত এবং সপ্রতিভ। সব থেমে গিয়েছে, আশা করি থেমেই থাকবে। ওরা (ভারত-পাক) একসঙ্গে ভালই এগোচ্ছে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৫ ১১:১১
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল চিত্র।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল চিত্র।

আবার মুখ খুললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবারও দাবি করলেন, বাণিজ্যকে হাতিয়ার করেই ভারত-পাক সংঘর্ষ থামিয়েছেন তিনি। বস্তুত আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে আজ তিনি দাবি করলেন, ভারত-পাকিস্তান একসঙ্গে ভালই এগোচ্ছে! আমেরিকান বিদেশসচিবকে উদ্দেশ করে বললেন, দুই রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে নৈশভোজের কথাও ভাবা যেতে পারে!

ঘটনাচক্রে গত কাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের পরে ভারত-পাক সংঘর্ষ প্রসঙ্গে আজ প্রথম একক সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। সেখানে গোটা প্রশ্নোত্তরের বেশির ভাগ সময়টাই কেটে গিয়েছিল ট্রাম্পের একের পর এক বিবৃতির ‘পাল্টা’ জবাব দিতে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে ট্রাম্পের

অভিপ্রায়, পরমাণু সংঘাত বন্ধ করায় তাঁর প্রশাসনের ভূমিকা, নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির অনুঘটক হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার যে সব দাবি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লাগাতার করে আসছেন, তাকে পাল্টা ভাষ্য দিয়ে খণ্ডন করতে চেয়েছিলেন জয়সওয়াল। কিন্তু গত কালের মোদীর ভাষণের ঠিক আগে যে ভাবে মুখ খুলেছিলেন ট্রাম্প, এ দিনও সেটাই করলেন। তবে পরে করলেন। ভারতীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ফের সরব হলেন তিনি।

ট্রাম্প বললেন, ‘‘ভারত এবং পাকিস্তানের দুই রাষ্ট্রনায়কই খুব ক্ষমতাশালী, শক্ত এবং সপ্রতিভ। সব থেমে গিয়েছে, আশা করি থেমেই থাকবে। ওরা (ভারত-পাক) একসঙ্গে ভালই এগোচ্ছে। আমরা হয়তো ওঁদের একসঙ্গে নৈশভোজেও বসাতে পারি। সংঘর্ষটা ছোট আকারে শুরু হলেও বড় দিকে এগোচ্ছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যেতে পারতেন।’’

দৃশ্যত ভারত সরকার যখনই নিজের অবস্থানকে স্পষ্ট করছে, ট্রাম্প নতুন করে অস্বস্তি বাড়িয়ে চলেছেন। বিরোধীরাও ছেড়ে কথা বলছেন না।

রণধীরের সাংবাদিক বৈঠকের পরেই কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘আমেরিকান বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়োর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিতি আছে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। জয়শঙ্কর এমনিতে অনেক কথা বলেন। ট্রাম্পের ভূমিকা এবং ভারত-পাক আলোচনা প্রস্তাব নিয়ে তিনি কিন্তু নীরব।’’ রাতে ট্রাম্প মুখ খোলার পরে ফের মাঠে নেমেছে কংগ্রেস। পবন খেরা লিখেছেন, ‘‘ট্রাম্প আবার বাণিজ্যের কথা বললেন! ভারত-পাক আবার হাইফেনবদ্ধই হল না শুধু, তিনি মোদী আর শাহবাজ় শরিফের মধ্যে তুলনাও করলেন! প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এটা মেনে নেবে?’’

অথচ আজ ট্রাম্পের দাবির ‘পাল্টা’ জবাব দিতেই হাজির হয়েছিলেন রণধীর। কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা প্রসঙ্গে ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমাদের দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় অবস্থান হল, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে শুধুমাত্র ভারত এবং পাকিস্তানই দ্বিপাক্ষিক ভাবে কথা বলবে। এই ঘোষিত অবস্থানের কোনও পরিবর্তনই হয়নি। আপনারা জানেন পাকিস্তান বেআইনি ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ড জবরদখল করে রেখেছে।” সংঘর্ষবিরতিতে হোয়াইট হাউসের ভূমিকা নিয়েও আজ বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়, “দু’দেশের ডিজিএমও-র মধ্যে সংঘর্ষবিরতির নির্দিষ্ট তারিখ, সময় এবং শব্দ নিয়ে কথা হয়েছে ১০ মে বিকেল ৩টে ৩৫ মিনিটে। এই ফোন কলের অনুরোধ বিদেশ মন্ত্রকের কাছে আসে পাকিস্তানের দূতাবাস থেকে দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিটে। কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে হটলাইনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। ভারতীয় ডিজিএমও-র সময় অনুযাযী স্থির হয় ৩টে ৩৫ মিনিটে কথা হবে।”

রণধীর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “১০ তারিখ সকালেই পাকিস্তানের প্রধান বিমানঘাঁটিগুলি আমরা আক্রমণ করি। এর পরই তারা গুলি চালানো এবং সামরিক অভিযান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিষয়টি স্পষ্ট করে নেওয়া ভাল যে, ভারতীয় সেনাই পাকিস্তানকে বাধ্য করেছে গুলি চালানো বন্ধ করতে।”

পরমাণু সংঘাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “একটি রিপোর্ট এসেছিল যে, পাকিস্তান ১০ মে তাদের পরমাণু সংক্রান্ত জাতীয় কমান্ড অথরিটি-র বৈঠক ডেকেছে। কিন্তু সেটাও তারা অস্বীকার করে। তাদের দেশের বিদেশমন্ত্রীই পরমাণু সংক্রান্ত কোনও পদক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছেন।”

তবে কয়েক মাস আগেই আমেরিকা সফরে গিয়ে সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে একমত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ট্রাম্প। অথচ ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে পহেলগামে পাকিস্তানের জঙ্গি-তাণ্ডবের কোনও উল্লেখ দেখা যায়নি। বরং তিনি সংঘর্ষবিরতির জন্য পাকিস্তানের প্রশংসা করে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর কথাই বলছেন।

সংঘর্ষবিরতির পরে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশক দার অবশ্য একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, ভারতই উন্মুখ হয়ে উঠেছিল সংঘর্ষ থামাতে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়, “আমরা পাকিস্তানের বিবৃতি দেখেছি। যে দেশ প্রায় শিল্প কারখানার মতো করে সন্ত্রাসবাদী উৎপাদন করে, তার পরিণতি এড়ানো যাবে ভাবলে তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে। ভারত, পাকিস্তানের যে সব জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে, তা কেবল ভারতেরই নয়, বিশ্বের অনেক নিরপরাধ মানুষের প্রাণনাশের কারণ।”

এই বিষয় নিয়ে ভারতের বক্তব্য, “গত সপ্তাহে অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানের অনেক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তাদের সামরিক ক্ষমতা বিশেষ বিশেষ জায়গায় অনেকটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে। এখন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী যদি মনে করেন যে, এগুলি তাঁদের বড় জয়লাভ, তা হলে তাঁকে স্বাগত জানাই!”

জয়সওয়ালের কথায়, হেরে গিয়েও নিজেদের ঢাক পেটানো পাকিস্তানের পুরনো অভ্যাস। ১৯৭১-এ, ১৯৭৫-এ, ১৯৯৯-এর কার্গিলের পরেও তারা একই ভাবে ঢাক পিটিয়েছিল।”

Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy