Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

ট্রাম্পের সফর থেকে কী পেলাম আমরা? আমেরিকাই বা কী পেল?

চিনের অগ্রগতিই আমেরিকা ও ভারত-সহ বহু দেশের কাছেই বেশ চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

দু’জনে বড় কাছাকাছি। সোমবার, আমদাবাদে। ছবি- রয়টার্স।

দু’জনে বড় কাছাকাছি। সোমবার, আমদাবাদে। ছবি- রয়টার্স।

জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:৩৮
Share: Save:

চিন তার অতি প্রাচীন ‘সিল্ক রুট’-এর বাণিজ্যকে আবার ফিরিয়ে এনেছে। সর্বাধুনিক ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই)’ প্রকল্পের মাধ্যমে। এই প্রকল্পের মাধ্য়মে স্থল ও জলপথে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মতো তিনটি মহাদেশের সঙ্গে নানা রুটে যোগাযোগ গড়ে তুলছে চিন।

একই সঙ্গে চিন তার ৬০০ বছর আগের এক মুসলিম কমান্ডারের ভাবাদর্শকেও পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছে। সাত ফুট লম্বা সেই মুসলিম কমান্ডার অ্যাডমিরাল চেঙ হে ৬০০ বছর আগে ৩০০টি রণতরী ও ৩০ হাজার সেনা নিয়ে ভারত মহাসাগর প্রায় ঢুঁড়ে ফেলেছিলেন। এসেছিলেন ভারতের কালিকটেও। অ্যাডমিরাল চেঙ হে-র কোনও দেশ জয়ের অভিলাষ ছিল না। অন্য দেশগুলিকে চিনের ক্ষমতা বোঝাতে চেয়েছিলেন।

চিন যে এখন সিল্ক রুটের সুপ্রাচীন বাণিজ্য পদ্ধতি আর অ্যাডমিরাল চেঙ হে-র ভাবাদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে, সেটা আমেরিকা ও ভারত-সহ বহু দেশের কাছেই বেশ চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন- ভারতে এসে বাণিজ্যে লাভ হবে না, বুঝে গিয়েছেন ট্রাম্প

আরও পড়ুন- ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বড়াই জিইয়ে রাখতে ফের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন মোদী

আধুনিক চিনের উচ্চাশা সমুদ্রকে কেন্দ্র করে। দক্ষিণ চিন সাগর। লাগোয়া দেশগুলিকে তার মুঠোয় রাখতে চায় চিন। তার দ্বীপপুঞ্জগুলিকে চিন নিজের বলে দাবি করতে শুরু করেছে, যা বিতর্কিত। একই সঙ্গে অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে আমেরিকাকে টক্কর দিতে চাইছে চিন। ফলে, হনোনুলুতে নিজেদের দীর্ঘ দিনের বিশাল প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড-কে নতুন ভাবে ঢেলে সাজতে হচ্ছে আমেরিকার। তার নতুন নামকরণও করতে হয়েছে। ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড’।

বৈঠকে। মঙ্গলবার, দিল্লিতে।

আর এটাই নিজের স্বার্থে ওই অঞ্চলে ভারতকে আমেরিকার কাছে নিয়ে এসেছে। একই স্বার্থে আমেরিকার কাছে এসেছে জাপান, অস্ট্রেলিয়াও। এই চারটি দেশকে নিয়ে একটি জোটও গঠিত হয়েছে। তার নাম, ‘কোয়াড’। তার সদস্য চারটি দেশ, ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া বড় মাপের যৌথ সেনা মহড়াও করেছে।

নৌশক্তি নিয়ে চিনের উচ্চাশার সঙ্গে পাল্লা দিতে ভারতও আমেরিকার কাছ থেকে কিনেছে সর্বাধুনিক অ্যান্টি-সাবমেরিন ও অ্যান্টি-সারফেস হেলিকপ্টার। দিল্লি মনে করে, এই অঞ্চলে বিভিন্ন দেশে তার সেনাঘাঁটি বানিয়ে চিন চাইছে আর একটা ‘স্ট্রিং অফ পার্লস’ বানাতে।

চিন সেই স্ট্রিং অফ পার্লস’ বানাতে চাইছে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান ও জিবৌতির সঙ্গে জলপথে তার বাণিজ্যকে একলাফে অনেকটা বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে।

উত্তর সীমান্তে চিনের সঙ্গে ভারতের বিরোধ-বিবাদ মেটেনি। উত্তেজনা দৃশ্যত থিতিয়ে গেলেও, তা উধাও হয়নি। তার উপর ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে চিনের নৌশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাশা। তার জন্যই মার্কিন অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল হ।ে পড়তে হয়েছে ভারতকে, আরও বেশি করে। যা আমেরিকাকে খুশি করেছে।

এখনও ভারতকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করে রাশিয়া। কিন্তু গত কয়েক বছরে এ ব্যাপারে অনেক এগিয়ে এসেছে আমেরিকা। ভারতকে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে ট্রাম্পের দেশ এখন রাশিয়ার ঠিক পরেই।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ করার ব্যাপারে দর-দামে কিছু ছাড় দেওয়া হত। কিন্তু রাশিয়া সেটা দেয় না। সেই সব রুশ যুদ্ধাস্ত্রের গুণমানেও ফারাক রয়েছে। বিমান-বিধ্বংসী রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ‘এস-৪০০’ যেমন গুনমানের দিক থেকে অত্য়ন্ত উন্নত, তেমনই কয়েকটি সমরাস্ত্রের মান মোটেই আশানুরূপ নয়। মার্কিন যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রে গুণমানের এই ভিন্নতা নেই। সেগুলির প্রত্যেকটিই গুণমানের দিক থেকে উৎকৃষ্ট। কেউ কম, কেউ বেশি নয়। তার জন্য তার দামও অনেক বেশি।

ভারতের বন্ধু হতে চাইলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দিল্লিতে, মঙ্গলবার।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এই লাভালাভের পাশাপাশি ভারত সফরে এসে ‘মুসলিম সন্ত্রাসবাদে’র বিরুদ্ধেও প্রকাশ্য যুদ্ধঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসলামাবাদ কী করছে, গোটা বিশ্ব যে তার উপর নজর রাখছে, ট্রাম্প সে কথাও গত কাল পাকিস্তানকে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

অন্য দিকে, মার্কিন সংস্থা ‘এক্সন’-এর সঙ্গে ইন্ডিয়ান অয়েলের যে ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার ফলে আগামী দিনে মধ্য়প্রাচ্যের উপর ভারতের তেল-নির্ভরতা কমবে বলেই আশা করা যায়। সেই লক্ষ্যেই এই ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্টই কারণ রয়েছে। তবে ইরানের কাছ থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে ভারত যে দর-দামের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পেত, তা কতটা এ ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে, সেই সন্দেহটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

পরিশেষে এটা বলাই যায়, বুশ ও ওবামার মাধ্যমে যার সূত্রপাত হয়েছিল, ট্রাম্পের সফরের মাধ্য়মে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সেই কুশলী অংশীদারির ক্ষেত্রটি আরও জোরদার হয়ে উঠল।

লেখক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

ছবি- রয়টার্স

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE