বাধ্যতামূলক ভাবে স্মার্টফোনে প্রি-ইনস্টল করার সরকারি নির্দেশ ঘিরে বিতর্কের আবহেই নজিরবিহীন ভাবে বেড়ে গিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ ডাউনলোড করার প্রবণতা। কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতর (ডট) বুধবার জানিয়েছে, এত দিন সাধারণত দৈনিক ৬০ হাজারের মতো ডাউনলোড হচ্ছিল এই অ্যাপ। বিতর্কের আবহে মঙ্গলবার হঠাৎই তা ১০ গুণ বেড়ে প্রায় ৬ লক্ষে পৌঁছেছে।
প্রসঙ্গত, ভারতে বিক্রি হওয়া সব ফোনে ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপটি প্রি-ইনস্টল করা থাকতে হবে বলে গত ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের তরফে ফোন প্রস্তুতকারী সব সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যে স্মার্টফোনগুলি ইতিমধ্যে বাজারে এসে গিয়েছে, সেগুলিতেও সফ্টওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে ওই সরকারি অ্যাপটি প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার (ইনস্টল করার) কথা বলেছে কেন্দ্র। তার পর থেকেই গ্রাহকদের মোবাইলে ‘সঞ্চার সাথী’ ডাউনলোডের লিংক পৌঁছচ্ছে প্রতিনিয়ত। মঙ্গলবার থেকে সেই লিঙ্কের মাধ্যমে অ্যাপ ডাউনলোড প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে বলে ‘ডট’-এর দাবি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ওই নির্দেশ ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। ওই অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকদের ‘ব্যক্তিগত পরিসরে’ নজরদারি চালানো হবে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এই সঞ্চার সাথীকে ‘স্নুপিং অ্যাপ’ বলে চিহ্নিত করে অভিযোগ করেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে ফোন ব্যবহার করা গ্রাহকের গোপনীয়তার সুরক্ষা লঙ্ঘিত হবে। শুধু বিরোধী দল নয়, শিল্প বিশেষজ্ঞদের অনেকের অভিযোগ, এই অ্যাপের মাধ্যমে আদতে সরকারি নজরদারি বাড়তে পারে গ্রাহকদের উপর।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছে দুই মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাপ্ল এবং স্যামসাং। সেখানে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নির্দেশিকার কিছু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর। কেন্দ্রের নির্দেশে আগামী ১০০ দিনের মধ্যে প্রতিটি মোবাইল ফোন নির্মাতা বা আমদানিকারী সংস্থাকে ‘সঞ্চার সাথী’ প্রি-ইনস্টল নিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। কিন্তু অ্যাপ্ল বর্তমান আকারে নির্দেশটি বাস্তবায়ন করতে রাজি নয় বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া মঙ্গলবার জানান, ফোন ব্যবহারকারী গ্রাহকেরা যদি ওই অ্যাপ ব্যবহার না করতে চান, তা হলে তাঁরা তা মুছে দিতে (ডিলিট করতে) পারবেন। তিনি বলেন, ‘‘এটি অ্যাক্টিভেট করবেন না। যদি আপনার ফোনে এটা রাখতে চান, রাখুন। যদি এটা মুছে দিতে চান, তা-ই করুন।’’ সঞ্চার সাথী অ্যাপ নিয়ে বিরোধীদের তোলা নজরদারির অভিযোগ খারিজ করে জ্যোতিরাদিত্য জানান, এটি পুরোপুরি গ্রাহক সুরক্ষার বিষয়। বাধ্যতামূলক কিছু নেই।