যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-তে আজ পাশ হয়ে গেল ওয়াকফ সংশোধনী বিলের খসড়া। আর তা হল বিরোধীদের প্রবল আপত্তিকে উপেক্ষা করেই। বিরোধীদের আনা ৫০০টির বেশি সংশোধনী খারিজ হলেও, শাসক শিবিরের সাংসদদের আনা ১৪টি সংশোধনী গৃহীত হয়েছে।
উভয় পক্ষের হট্টগোলের মধ্যে ১৬-১০ ভোটে শাসক শিবির জয়ী হওয়ায় খসড়া বিলটি পাশ হয়ে যায়। বৈঠকের পরে জেপিসি-র সদস্য তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ যা হল, তা গণতন্ত্রের নামে প্রহসন। বিল যখন পাশ করাটাই লক্ষ্য ছিল, তখন জেপিসি গঠনের কোনও দরকারই ছিল না।”
আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। আজ যে ভাবে তড়িঘড়ি ওই খসড়া বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়া হল, তা থেকে স্পষ্ট, আসন্ন অধিবেশনের প্রথম পর্বেই সম্ভবত ওই বিলটি আনতে চলেছে সরকার। আজ বৈঠকে বিলের প্রতিটি ধারা নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও, শেষ মুহূর্তে পাঠানো নির্দেশে বলা হয়, বিল সংক্রান্ত যে সংশোধনী এসেছে তা নিয়েই আজ আলোচনা হবে। বৈঠকের শেষে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে তৃণমূলের কল্যাণ, ডিএমকের এ রাজা, কংগ্রেসের গৌরব গগৈরা বলেন, সমস্ত নিয়ম ভেঙে আজ জেপিসি-র চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল নিজেই বিরোধীদের তোলা সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেটি নিয়ে কোনও আলোচনা না করে নিজেই ভোটাভুটি করিয়ে সংশোধনী বাতিল করে দেন। কল্যাণের কথায়, “আমি ওই বিলের ৪৪টি ধারার ক্ষেত্রেই সংশোধনী এনেছিলাম। একটি নিয়েও আলোচনা হয়নি।” একই দশা হয়েছে ৪৪টি সংশোধনী আনা বিরোধী এমআইএম সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েইসির ক্ষেত্রে। কল্যাণের কথায়, তাৎপর্যপূর্ণ হল, শাসক শিবিরের পক্ষে যে ১৪টি সংশোধনী আজ বিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেগুলি নিয়েও আলোচনার রাস্তায় যাননি জগদম্বিকা।
যে-সব সম্পত্তি ওয়াকফ না হওয়া সত্ত্বেও ওয়াকফের মর্যাদা পেয়ে আসছিল, সেগুলির পুনরুদ্ধারের কথা বলা হয়েছিল সংসদে পেশ হওয়া বিলে। বিলের সেই ধারা পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে সংশোধনী আনেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি সংশোধনীতে বলেন, যেগুলি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার চরিত্র বদলের চেষ্টা না করে বরং বিল পাশের পরে ভবিষ্যতে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি-না তা ভাল করে খতিয়ে দেখা হোক। নিশিকান্তের আনা ওই সংশোধনীটি আজ পাশ হয়। এর ফলে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত বা ব্যবহার করা হচ্ছে এমন কোনও সম্পত্তির চরিত্র পরিবর্তন হওয়ার আশু কোনও বিপদ থাকছে না।
আজ জগদম্বিকার বিরুদ্ধে অসংসদীয় ভাবে বিল পাশ করানোর অভিযোগ এনেছেন বিরোধী সাংসদেরা। তাঁদের বক্তব্য, “কোনও নিয়ম ছাড়াই অসংবিধানিক ভাবে ওই বিলটি পাশ করানো হয়েছে। আজ গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন।”
যদিও এই সংক্রান্ত অভিযোগ মানতে চাননি জগদম্বিকা। এ দিন তিনি বলেছেন যে, “গোটা প্রক্রিয়া নিয়মমাফিক হয়েছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)