ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন) ‘পক্ষপাতিত্ব করে’ গৌতম আদানি গোষ্ঠীকে ড্রোন প্রতি ১৪৩ কোটি টাকার হিসাবে বিপুল অঙ্কের বরাত দিয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আজ সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) বৈঠকে ডিআরডিও-র সচিবের উপস্থিতিতেই এই মর্মে অভিযোগ জানিয়েছেন বিরোধী সাংসদরা।
রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কমিটিতে বিরোধী শিবির সদস্য কংগ্রেসের শক্তিসিন গোহিল, তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়, ডিএমকে-র তিরুচি শিবারা এই সরকারি প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উৎপাদন সংস্থার কাজে ঘোর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি ডিআরডিও-র বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদ, কে লক্ষ্মণ, অনুরাগ ঠাকুরের মতো সাংসদরাও। এই সংস্থাটি দেশের প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত অবস্থানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। অনিয়ম, প্রকল্প রূপায়ণে বিলম্ব, দাগি বেসরকারি সংস্থাকে সহ-উৎপাদক হিসাবে সঙ্গে নেওয়ার যে সব নিদর্শন এই সংস্থায় দেখা যাচ্ছে, তা দেশের নিরাপত্তার পক্ষে উদ্বেগজনক বলেই আজ বৈঠকে দাবি করেন কংগ্রেস, তৃণমূলের সদস্যরা।
তিন বছর আগে সিএজি সংসদে ডিআরডিও সংক্রান্ত যে রিপোর্ট পেশ করেছিল, তার ভিত্তিতে সংস্থাটি ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। পিএসি এখন সেই রিপোর্টটি খতিয়ে দেখছে।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আজ বৈঠকে সুখেন্দুশেখর বলেন, এক দিকে প্রচার করা হচ্ছে আত্মনির্ভর ভারতই মন্ত্র। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দেশের নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলির হাতে। তিনি একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি এমন একটি সংস্থাকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ উৎপাদনের বরাত দেওয়া হয়েছে, যাদের সিইও-কে তিন দিন আগে কেন্দ্রীয় এজেন্সি গ্রেফতার করেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক প্রতারণার জন্য। এমন দাগি সংস্থা যদি দেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদনে যুক্ত হয়, তা হলে ডিআরডিও-র গবেষণা এবং দেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য টাকার বিনিময়ে চিন বা পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে তাদের কত ক্ষণ লাগবে? এই ঝুঁকির মধ্যে কেন যাওয়া হচ্ছে এই প্রশ্ন তোলেন সুখেন্দুশেখর। তাঁর অভিযোগ, দেশের সুরক্ষা নিয়ে বাজি ধরছে কেন্দ্র।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, কংগ্রেসের শক্তিসিন গোহিল বলেছেন, ডিআরডিও-র প্রকল্পে ঠিক মতো নজরদারি হচ্ছে না। এক-একটি ড্রোন পিছু ১৪৩ কোটি টাকার দরে বরাত দেওয়া হয়েছে আদানি গোষ্ঠীকে। তারা ইজ়রায়েল থেকে কয়েক হাজার ড্রোন আনিয়ে নিজেদের ছাপ মেরে দিয়ে দিচ্ছে। কোনও মান যাচাই হচ্ছে না। এর ফল ভুগতে হচ্ছে মন্ত্রক বা দেশকে। ডিআরডিও-র দেওয়া রিপোর্টে বলা হচ্ছে, তাদের মোট প্রকল্পের সংখ্যা এখন ৩১১টি। তার মধ্যে ২৩৮টি প্রকল্পের খরচ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৬৩টির খরচ ১০ হাজার কোটি টাকা। খরচের এই অসাম্য কেন, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে বিলম্বের বিষয়টিও বিশেষ করে আলোচনায় উঠেছে বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির অনুরাগ ঠাকুর প্রশ্ন তোলেন অজস্র প্রকল্পের কাজ শেষ হতে অনাবশ্যক বিলম্ব নিয়ে।
দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে ৫০০টি প্রকল্পে বিলম্ব ঘটেছে। অনুরাগ বলেন, অডিট রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ১৮০ বিজ্ঞানীর পদ শূন্য রয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে ৩৮ জন বিজ্ঞানীকে কেন নির্মাণ কাজের তদারকিতে পাঠানো হয়েছে? এটা তো কোনও বিজ্ঞানীর কাজ হতে পারে না।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বিজেপির সাংসদ কে লক্ষ্মণ বৈঠকে বলেছেন, ডিআরডিও-র ১৫,৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদন নেই। রিপোর্টে উঠে এসেছে, সংস্থার একশো ভাগের মধ্যে পরিকল্পিত প্রকল্প মাত্র ৪২ শতাংশ, বাকি ৫৮ শতাংশ অপরিকল্পিত প্রকল্প। বিনা পেটেন্ট বা অর্থে বেসরকারি সংস্থার হাতে নিজেদের গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি তুলে দিচ্ছে ডিআরডিও কোনও পেটেন্ট ছাড়াই। এই সমস্ত প্রযুক্তি যদি পুরোপুরি বেসরকারি হাতে চলে যায়, তা হলে ডিআরডিও-র ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)