Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মন্ত্রী ফেরালেও কিশোরীর পাশে ডিএসপি

দিন আনতে পান্তা ফুরোয় বাড়িতে। ট্রাক-চালকের বছর সতেরোর মেয়ের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতির খরচের আর্জি নিয়ে গিয়েছিল মন্ত্রীর দরবারে। কিন্তু কেউ নজর দেননি।

নিসুকে পড়াচ্ছেন ‘মাস্টারমশাই’ বিকাশ শ্রীবাস্তব। —নিজস্ব চিত্র

নিসুকে পড়াচ্ছেন ‘মাস্টারমশাই’ বিকাশ শ্রীবাস্তব। —নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
রাঁচি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০২
Share: Save:

দিন আনতে পান্তা ফুরোয় বাড়িতে। ট্রাক-চালকের বছর সতেরোর মেয়ের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতির খরচের আর্জি নিয়ে গিয়েছিল মন্ত্রীর দরবারে। কিন্তু কেউ নজর দেননি।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে পায়ের নীচের মাটি অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছিল রাঁচির রাতু রোডের কিশোরগঞ্জের নিসু কুমারী। ভেবেছিল, হয়তো পড়াশোনা ছেড়েই দিতে হবে। তখনই আসে ফোনটা। ওপারে রাঁচির (সদর) ডিএসপি বিকাশ শ্রীবাস্তব।

স্বপ্নটা যে কিছুটা হলেও কাছে এগিয়ে আসবে, তা টের পায়নি নিসু। ফোন ছাড়ার পর আনন্দে কী করবে তা ভেবেই পাচ্ছিল না। নিসু বলে, ‘‘তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী অমর বাউরির জনতা দরবার থেকে ফেরার সময় ভাবছিলাম, সব কিছু শেষ। ইউপিএসসি পরীক্ষার বই কেনার টাকা নেই। নেই কোচিংয়ে পড়াশোনার উপায়।’’ তবে সব চিন্তা দূরে করে দেন বিকাশবাবু। কিশোরী নিসুর কথায়, ফোনে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমাকে পড়াতে বাড়িতে আসছেন। আধঘণ্টার মধ্যেই বাড়িতে চলে এলেন আমার সেই গৃহশিক্ষক!

নিসুর বাবা অশোক সিংহ ট্রাকচালক। মা রঞ্জনাদেবী দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন কিডনির অসুখে। নিসু জানায়, ভেলোরে মায়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে জমানো সব টাকা শেষ হয়েছে। নেই পড়াশোনা চালানোর খরচও। তা-ই গত কাল সে গিয়েছিল মন্ত্রীর দরবারে।

গত কাল সন্ধেয় নিসুর বাড়িতে পৌঁছন ডিএসপি। সঙ্গে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির কয়েকটি বই। নিসুর বাবা অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমাদের টালির বাড়ি। পুলিশকর্তাকে কোথায় বসতে দেব বুঝতে পারছিলাম না। পুরনো একটা চেয়ার টেনে মেয়েকে দেড়ঘন্টা পড়ালেন ডিএসপি সাহেব।’’

কী ভাবে জানলেন নিসুর কথা? কেনই বা তাকে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। বছর পঁয়ত্রিশের বিকাশবাবু জানান, মন্ত্রীর দরবারে মোতায়েন ছিলেন তিনি। নিসুর কথায় কেউ কান দিচ্ছেন না দেখে খারাপ লেগেছিল তাঁর। ডিএসপি বলেন, ‘‘ছাত্রজীবনে পড়াশোনার খরচ চালাতে আমি টিউশনও করতাম। তাই ভাবলাম মেয়েটির পাশে যদি দাঁড়াতে পারি।’’

ডিএসপি সাহেবকে গৃহশিক্ষক হিসেবে পেয়ে প্রচণ্ড খুশি নিসু। সে বলে, ‘‘উনি আমাকে প্রচুর হোমওয়ার্ক দিয়েছেন। বলেছেন দিনপনেরো পর ফের আসবেন। পলিটিক্যাল সায়েন্স, ভুগোল ও পরিবেশবিজ্ঞানের বইও আমাকে দিয়ে গিয়েছেন।’’

রাঁচির পুলিশ মহলে সদর ডিএসপি কড়া অফিসার হিসেবে পরিচিত। রাঁচির এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কাজের ফাঁকে গরিব ছাত্রদের পড়ানোর নেশা রয়েছে বিকাশের। মাঝেমধ্যে রাঁচির আদিবাসী ছাত্রাবাসে গিয়েও উনি ছেলেমেয়েদের পড়ান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IAS Nisu kumari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE