E-Paper

হাতিশালে নেই হাতি, আছে মহামায়ার অর্চনা

এক সময়ে অসমের গোয়ালপাড়া এবং বাংলাদেশের রংপুরের বিশাল এলাকা ছিল গৌরীপুরের শাসনাধীনে। জমিদার কবিশেখর বরুয়ার স্বপ্নে পাওয়া অষ্টধাতুর মহামায়া মূর্তিই রাজবংশের কুলদেবী। মহামায়া দর্শনের পরে রাজা খেতাব পান কবিশেখর বরুয়া।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:৫৭
গৌরীপুর রাজবাড়ির প্রতিমা।

গৌরীপুর রাজবাড়ির প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।

না, সেই বিখ্যাত হাতিশালে আজ আর হাতি নেই, ঘোড়াশালে নেই ঘোড়া। নেই রাজত্ব। নেই রাজাও। কিন্তু ধুবুরি জেলার গৌরীপুরের রাজবাড়িতে এখনও যা সগৌরবে বহাল- তা হল মহামায়ার ঐতিহ্য, দুর্গা পুজোর নিয়ম-নিষ্ঠা। মহালয়ার দিন থেকেই ধুবুড়ির ঐতিহ্যবাহী গৌরীপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বছর পুজো ৪০৪ বছরে পা দিল। দেবী পক্ষের প্রতিপদে ‘শ্বশুরবাড়ি’, সুপ্রাচীন মহামায়া মন্দির থেকে শোভাযাত্রা করে মহামায়া এলেন একই পাড়ায় থাকা নিজের বাড়ি, গৌরীপুরের রাজবাড়িতে। রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধর প্রবীরকুমার বরুয়া ও রাজপুরোহিত অরূপলোচন চক্রবর্তী শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।

এক সময়ে অসমের গোয়ালপাড়া এবং বাংলাদেশের রংপুরের বিশাল এলাকা ছিল গৌরীপুরের শাসনাধীনে। জমিদার কবিশেখর বরুয়ার স্বপ্নে পাওয়া অষ্টধাতুর মহামায়া মূর্তিই রাজবংশের কুলদেবী। মহামায়া দর্শনের পরে রাজা খেতাব পান কবিশেখর বরুয়া। সেই সঙ্গেই, ১৬২০ সালে প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেন তিনি। তখন প্রতি বছর প্রতিপদে মা মহামায়াকে রাঙামাটি থেকে গৌরীপুরে আনা হত। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে রাজা প্রতাপচন্দ্র বরুয়ার সময়কালে রাজধানী রাঙামাটি থেকে গৌরীপুরে চলে আসে। তৈরি হয় মহামায়া মন্দির। পুজোর সময়ে অসম তথা গোয়ালপাড়ার পরম্পরা মিলিয়ে অষ্টধাতু ও শোলার প্রতিমা একইসঙ্গে পূজিতা হন। শোলার মূর্তি বসবে ষষ্ঠীতে। রাজবাড়ির ইতিহাস বলে, স্বপ্নে পাওয়া মূর্তিটি ১৯৭২ সালে নিখোঁজ হয়। গৌরীপুরের তৎকালীন রাজা প্রকৃতীশ চন্দ্র বরুয়া (লালজি) বারাণসী থেকে আগের মূর্তির আদলে অষ্টধাতুর মা মহামায়ার মূর্তি তৈরি করিয়ে আনেন।

প্রবীর বরুয়া জানান, গৌরীপুরের পূজার সঙ্গে বলির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত কলার খোলে জোড়া পায়রার মাথা মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে উৎসর্গ করা হয় দুই দেবীকে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় গৌরীপুরে হয় ‘বিল্ববরণ’। সে দিন বলি দেওয়া একটি সাদা পাঁঠা। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে মহামায়া ও দূর্গার উদ্দেশে জোড়া পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোয় কালো পাঁঠা বলি দিয়ে তার ১০৮ টুকরো মাংস দিয়ে হয় হোম। নবমীতে পাঁঠার পাশাপাশি দুই জোড়া হাঁস, ১টি ভেড়া ও কুমড়ো বলি হয়। ভক্তেরাও পায়রা বলি দেন। অনেকে পুজোয় পায়রা ওড়ান।

লক্ষ্মী পূর্ণিমার পরের দিন অষ্টধাতুর মহামায়া ফিরে যাবেন শ্বশুর বাড়ি। শোলার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে নৌকো থেকে ব্রহ্মপুত্র ও গদাধর নদীর সঙ্গমে। ভাসানের পরে কুলপ্রথা অনুযায়ী রণচণ্ডী পূজা ও কামান পূজার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় যাত্রাপুজোর পরে পরিবারের নিয়ম মেনে, তিন রাত অজ্ঞাতবাসে কাটাতে হবে প্রবীর বরুয়াকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja Durga Puja 2024 guwahati

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy