E-Paper

যক্ষগান থেকে ডান্ডিয়া, সব সুর মিলে যায় বেঙ্গালুরুর পুজোয়

দুর্গাপুজোর নস্টালজিয়া, বাংলা থেকে দূরে বসে পুজোকে মিস করা, আর বাঙালির শিকড়ের টান— এর থেকেই ভারতের সিলিকন ভ্যালিতে এক টুকরো বাংলাকে জীবন্ত করে তোলার চেষ্টাতেই ১৯৪৮ সালে ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন বেঙ্গালুরু’র হাত ধরে এই শহরে দুর্গাপুজোর সূচনা।

রেশমী মল্লিক

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:২১

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

ঢাকের তালে ডান্ডিয়া আর দুর্গাপুজোর মণ্ডপে কর্নাটকের ঐতিহ্যবাহী ‘গোম্বে হাব্বা’র সাজসজ্জা। বেঙ্গালুরুতে দুর্গাপুজোর চালচিত্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের একসঙ্গে থাকার নানা ছবি এ ভাবেই আমাদের চোখে ধরা দেয়।

দুর্গাপুজোর নস্টালজিয়া, বাংলা থেকে দূরে বসে পুজোকে মিস করা, আর বাঙালির শিকড়ের টান— এর থেকেই ভারতের সিলিকন ভ্যালিতে এক টুকরো বাংলাকে জীবন্ত করে তোলার চেষ্টাতেই ১৯৪৮ সালে ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন বেঙ্গালুরু’র হাত ধরে এই শহরে দুর্গাপুজোর সূচনা। এর পর ১৯৫৫ সালে শুরু হয় ‘জয়মহল সর্বজনীন দুর্গাপুজো’। সেখান থেকে শুরু করে আজ এই শহরে দেড়শোটিরও বেশি বারোয়ারি দুর্গাপুজো হয়। এর সঙ্গে রয়েছে প্রায় কয়েকশো আবাসিক কমপ্লেক্সের পুজো, যেখানে বাঙালিরা নিজেদের বাড়ির চৌহদ্দিতেই মেতে ওঠেন উৎসবের আনন্দে।

কিন্তু এখানকার পুজো শুধুমাত্র বাঙালি সংস্কৃতির এবং প্রথার জন্যই পরিচিত নয়, বেঙ্গালুরুর পুজোর সুর ছড়িয়ে আছে তার বহুসাংস্কৃতিক মিলনমুহূর্তে। দুর্গাপুজো তাই শুধু একটা ধর্মীয় উৎসব নয়, সেটা হয়ে উঠেছে ভারতের সব সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র— যেখানে বাঙালি ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে যায় কর্নাটকের দশেরা, উত্তর ভারতের নবরাত্রি, গুজরাটের ডান্ডিয়া বা অন্ধ্রপ্রদেশের বাথুকাম্মা পাণ্ডুগা।

এখানে অনেক পুজো মণ্ডপে স্থানীয় ‘যক্ষগান’-এর প্রভাব যেমন দেখা যায়, তেমনই বিভিন্ন আবাসনের পুজোতেও ‘গোম্বে হাব্বা’ বা পুতুল প্রদর্শনীও করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলা গানের সঙ্গে পরিবেশিত হয় কর্নাটকি ও হিন্দি গানও। আবার ঢাকের তালে ডান্ডিয়ার লাঠি মিলেমিশে তৈরি হয় এক ভিন্ন ছন্দ— বাঙালির ধুনুচি নাচের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ মেতে ওঠে গরবায়। শহরের বিভিন্ন দুর্গাপুজোর সঙ্গে দশমীর দিন ধুমধাম করে রাবণ দহনেরও আয়োজন করা হয়। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির জয়গানে মেতে ওঠেন সবাই।

এই সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের কথা বলতে গিয়ে ‘আসাম অ্যাসোসিয়েশন বেঙ্গালুরু’র এগ্‌জ়িকিউটিভ কমিটি মেম্বার দর্শনা গোস্বামী বললেন, “ঘর থেকে দূরে এই শহরের আর এক ঘরে সবাই মিলে যেন দুর্গাপুজোর আনন্দটা উপভোগ করতে পারি, তাই ১১ বছর আগে আমরা এই পুজো শুরু করি। বিহু যেমন আমরা একসঙ্গে পালন করি, তেমনই দুর্গাপুজো। অসম থেকে শিল্পীরা যেমন আসেন, পাশাপাশি অনুষ্ঠান করেন বেঙ্গালুরুর স্থানীয় শিল্পীরাও।” এই তালিকায় নবতম সংযোজন জেপি নগরের ‘আবাহন দুর্গাপুজো অ্যান্ড দশেরা উৎসব’। প্রথম বারের পুজোর ভাবনার কথা বলতে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তা দেবদীপ দাস জানালেন, “আমাদের আবাসনে ৮০০টি পরিবার, যার মধ্যে ৭০-৮০ জন বাঙালি। তাই সবাইকে নিয়ে চলার ভাবনা থেকেই পুজোতে যেমন দুর্গাপুজোর সব প্রথা আমরা পালন করব, তেমনই করা হবে নবরাত্রির কীর্তনও। অষ্টমীতে ধুনুচি নাচও হবে, আবার নবমীর রাতে হবে ডান্ডিয়ার আয়োজন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে সবাই মিলে সারা বছর মিলে মিশে থাকি, তাই পুজোর ক’দিনও সেই মেলবন্ধনকেই তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।” বেঙ্গালুরুর উত্তরে ‘নন্দিনী লে আউটে’ ৪৮ বছর ধরে দুর্গাপুজো করছে ‘নর্থ ব্যাঙ্গালোর কালচারাল সমিতি’। পুজো হবে নাগাপুরা মহালক্ষ্মীপুরমে। ডাকের সাজের প্রতিমা বিরাজমান হবে দাবার বোর্ডের আদলে তৈরি মণ্ডপে। পঞ্চমীতে আনন্দমেলা আর ষষ্ঠীতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে লাইট-সাউন্ড-লেজ়ার শো ও ডান্ডিয়া। এ ছাড়া, অন্য দিনগুলি গান,নাচ,আবৃত্তি, নাটক ও ধুনুচি নাচে হয়ে উঠবে জমজমাট। প্রায় ২০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগমে ভরে উঠবে পুজোপ্রাঙ্গণ।

বেঙ্গালুরুর দুর্গাপুজো তাই শুধুমাত্র বাঙালিদের উৎসব নয়, সবাই মিলে তৈরি হয় এক অনবদ্যসর্বজনীন উৎসব।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2025 Bengaluru Bengali Community

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy