দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে ফের তলব করল ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই মামলাতেই এর আগে মোট ছ’বার কেজরীওয়ালকে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতি বারই কোনও না কোনও কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়ান আপের প্রধান।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কেজরীওয়ালকে ষষ্ঠ বারের জন্য সমন পাঠিয়েছিল ইডি। গত সোমবার তাঁকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২ নভেম্বর থেকে মোট পাঁচ বার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার সমন এড়িয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে কেজরীওয়াল অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁকে পাঠানো ইডির সমন ‘অবৈধ’ এবং ‘রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। তাঁর দল আপের বক্তব্য ছিল, ‘‘ইডি নিজেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। বার বার সমন পাঠানোর পরিবর্তে ইডির উচিত আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা।’’ সপ্তম বার সমন পাঠানোর খবর প্রকাশ্যে আসার পর আপ দাবি করেছে, চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনে হারার প্রতিশোধ নিতেই কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত, চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচনে বিতর্কিত ভোটে বিজেপি প্রার্থী জিতলেও গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ফের ভোটগণনা হয়। তাতে জয়ী হন আপের মেয়র পদপ্রার্থী কুলদীপ সিংহ।
উল্লেখ্য যে, দিল্লির আবগারি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় পঞ্চম বার ইডির সমন এড়ানোর পর তা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে গত ৩ ফেব্রুয়ারি আবেদন জানানো হয়েছিল। ৭ ফেব্রুয়ারি সেই মামলার শুনানিতে বিচারক দিব্যা মলহোত্র নির্দেশ দিয়েছিলেন, আদালতে হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে হবে আপের প্রধানকে। ঘটনাচক্রে, এই সময়ের মধ্যেই দিল্লির আবগারি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডির তরফে ষষ্ঠ সমন পাঠানো হয় তাঁকে। এই পরিস্থিতিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়াল শুনানিতে হাজিরা দিয়ে কেজরী জানান, দিল্লি বিধানসভায় আস্থাভোট থাকার কারণে তিনি সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে পারছেন না। আদালত তাঁকে আগামী ১৬ মার্চ সশরীরে আদালতে হাজিরা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। আদালতের ‘ছাড়পত্র’ হাতিয়ার করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ইডির ষষ্ঠ সমনও এড়িয়ে যাবেন বলে আইনজীবীদের একাংশ মনে করছিলেন। কার্যক্ষেত্রে তা-ই হয়।
প্রসঙ্গত, দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় এখনও পর্যন্ত আপের দুই প্রবীণ নেতা, দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া এবং রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহ গ্রেফতার হয়ে তিহাড় জেলে গিয়েছেন। অভিযোগ, দিল্লি সরকারের ২০২১-২২ সালের আবগারি নীতি বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ীকে সুবিধা করে দিচ্ছিল। এই নীতি প্রণয়নের জন্য যাঁরা ঘুষ দিয়েছিলেন, তাঁদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছিল। আপ সরকার সেই অভিযোগ মানেনি। সেই নীতি যদিও পরে খারিজ করা হয়।
আরও পড়ুন:
এই অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লির তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। গত বছর এপ্রিলে এই মামলার তদন্তে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে তলব করেছিল সিবিআই। টানা ন’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তাঁকে। পরে ওই মদ-কাণ্ডে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের খোঁজে পৃথক তদন্ত শুরু করে ইডি। সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেজরীকে বার বার তলব করেছে তারা। যদিও এখনও পর্যন্ত এক বারও ইডির সমনে সাড়া দেননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।