Advertisement
E-Paper

বিহারে দু’দফায় ভোটের প্রস্তাব মেনে নিল কমিশন! বোরখা পরা ভোটারদের চিহ্নিত করতে বলে বিজেপির দাবি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত?

বিহারের ভোটের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গত সপ্তাহেই পটনায় গিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশন। সেই সময় বিজেপি এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ২০:০৯
বিহারে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করল কমিশন।

বিহারে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করল কমিশন। —ফাইল চিত্র।

বিজেপি চাইছিল বিহারের ভোট যাতে এক বা দুই দফার মধ্যেই সেরে ফেলা হয়। হচ্ছেও তা-ই। দু’দফাতেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন আয়োজন করছে কমিশন। আগামী ৬ এবং ১১ নভেম্বর— দু’দফায় বিহারে ভোটগ্রহণ হবে। ফলঘোষণা হবে ১৪ নভেম্বর। সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে তা জানিয়ে দিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার।

বিহারের ভোটের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গত সপ্তাহেই পটনায় গিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশন। সেই সময় বিজেপি এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কমিশনের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে ছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিজেও। ওই বৈঠকেই বিহার বিজেপির সভাপতি দিলীপ জয়সওয়াল কমিশনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিহারের ভোট যেন এক বা দুই দফাতেই সেরে ফেলা হয়। পটনা থেকে ফিরে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সময় দৃশ্যত সেই প্রস্তাবই মেনে নিল কমিশন।

প্রকৃত ভোটারেরা ভোট দিচ্ছেন কি না, পটনার বৈঠকে তা-ও যাচাই করার জন্য কমিশনের কাছে অনুরোধ করেন বিহারের বিজেপি সভাপতি। বিশেষ করে বোরখা পরা মহিলাদের মুখের সঙ্গে ভোটার কার্ডের ছবির মিল রয়েছে কি না, তা যাচাই করার আর্জি জানান তিনি। জয়সওয়ালের বক্তব্য ছিল, “ভোটারদের, বিশেষ করে বোরখা পরা মহিলাদের মুখের সঙ্গে তাঁদের ভোটার কার্ডের ছবির মিল রয়েছে কি না, তা যাচাই করতে হবে। যাতে শুধুমাত্র প্রকৃত ভোটারেরাই নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

সোমবার দিল্লি থেকে বিহার ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সময়েও এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে। সাংবাদিকেরা জানতে চান, ঘোমটা বা বোরখা পরা মহিলাদের পরিচয় কী ভাবে যাচাই করা হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে জ্ঞানেশ বলেন, “বোরখানশিন বা পর্দানশিনদের পরিচয় যাচাই করার জন্য প্রত্যেক বুথে আমাদের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা থাকবেন। প্রয়োজন হলে তাঁদের ‘চেকিং’ করা হবে। ভোটকেন্দ্রের ভিতরে কী ভাবে পরিচয় যাচাই করা হয়, এ বিষয়ে কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। তা কড়া ভাবে পালন করা হবে।”

কমিশন যে দ্রুত বিহার ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে পারে, তার আভাস পাওয়া গিয়েছিল মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশের বিহার সফরের সময়েই। গত শনিবারই বিহার বিজেপির সভাপতি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন, “যদি ধরে নেওয়া হয় আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা করা হবে, তবে নভেম্বরের ৩-৪ তারিখের মধ্যে ভোটগ্রহণ করা যেতে পারে।” ঘটনাচক্রে, কমিশনের ঘোষিত দিনক্ষণও তার আশপাশেই।

নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই বার বার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে বিহারের ভোট প্রসঙ্গ। এর অন্যতম কারণ, বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)। বিহার থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন। আগামী দিনে গোটা দেশে এসআইআর করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। বিহারে এসআইআর ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। প্রশ্ন উঠেছিল খসড়া তালিকা থেকে ভোটারদের নাম বাদ যাওয়ার সময়েও। এসআইআর নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে বিহারের ভোট রাজনীতিতে, তেমনই আলোচনা হয়েছে অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গেও। এমন এক পরিস্থিতির মাঝে সোমবার বিহারে দু’দফায় ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করল কমিশন।

ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর পরই ফের কমিশনকে নিশানা করেছে কংগ্রেস। বিজেপি এবং কমিশনের মধ্যে আঁতাঁতের অভিযোগ তুলেছে তারা। কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেন, ‘‘আমরা আমাদের প্রশ্নের কোনও উত্তর পাই না। নির্বাচন কমিশনকে প্রতিদিনই প্রশ্ন করা হচ্ছে। তারা এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে যে (বিহারে) অবৈধ অভিবাসী রয়েছে। কিন্তু অবৈধ অভিবাসীরা কোথায়? তারা কোনও উত্তর দিতে পারেনি।” তাঁর বক্তব্য, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী যে প্রশ্নগুলি তুলেছেন, তার কোনও উত্তর দিতে পারেনি কমিশন।

কমিশন সোমবার জানিয়েছে, বিহারের প্রথম দফার নির্বাচন হবে ৬ নভেম্বর। ওই দফায় ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ১০ অক্টোবর সেই সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা করা যাবে। তা যাচাইয়ের জন্য ১৮ তারিখ অবধি সময় পাওয়া যাবে। প্রার্থীরা নাম প্রত্যাহার করতে পারবেন ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হবে ১১ নভেম্বর। দ্বিতীয় দফায় মোট ১২টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ওই দফার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে ১৩ অক্টোবর। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা করা যাবে। ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রার্থীরা চাইলে নাম তুলে নিতে পারবেন।

কংগ্রেসের অভিযোগ, সোমবার ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় আসলে সুবিধা পাবে বিহারের জেডিইউ-বিজেপির শাসক জোটই। এর ফলে বিহারের শাসক জোট মানুষের মধ্যে অর্থ বিলোনোর জন্য সময় পাবে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতা খেরা। তাঁর প্রশ্ন, “এটি যদি বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ‘গটবন্ধন’ (জোট) না-হয়, তা হলে এটি কী?”

যদিও সোমবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকের সময়ে কমিশন জানিয়েছে, চূড়ান্ত তালিকায় এখনও প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যাবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন ২৪ জুন থেকে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করেছিল। ১ অগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলকে তা দেওয়া হয়েছিল। তার পর সকলকে দাবি এবং আপত্তির জানানোর জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এখনও চাইলে তাতে কোনও দাবি জানানো বা নাম যুক্ত করা যাবে।’’

যে এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে এত বিতর্ক, সেই এসআইআর-এরও প্রশংসা করতে দেখা যায় জ্ঞানেশকে। তিনি বলেন, ‘‘এই অনুশীলনের মাধ্যমে ২২ বছর পর ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণ হয়েছে। আমাদের ২৪৩টি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটিতে একজন করে নির্বাচনী নিবন্ধন কর্মকর্তা রয়েছেন।’’ পাশাপাশি ভোটার তালিকায় নিজের নাম রয়েছে কি না, তা-ও যাচাই করে দেখে নেওয়ার জন্য সকল ভোটারকে অনুরোধ করেছে। যদি কারও নাম তালিকায় না থাকে, তা হলে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য এখনও বিএলও-দের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ১০ দিন আগে পর্যন্তও ভোটার তালিকায় নাম যুক্ত করা যাবে।

বিহারে এ বছর মোট ৭ কোটি ২৪ লক্ষ ভোটার রয়েছেন। গোটা প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ৯০,০০০-এরও বেশি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ১,০৪৪টি কেন্দ্র পরিচালনা করবেন মহিলারা। সুষ্ঠু ভাবে নজরদারি নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত ভোটকেন্দ্রে ‘ওয়েব-কাস্টিং’ করা হবে। কমিশন জানিয়েছে, বিহারের নির্বাচনে ২৫০টি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ টহল চলবে। টহলের জন্য ঘোড়া থাকবে। সমস্ত কেন্দ্রে ডেস্ক, র‍্যাম্প এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। ৮৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের জন্য বাড়িতে ভোট দেওয়ার সুবিধা থাকবে।

Bihar Assembly Election Bihar Election Commission of India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy