বিহারে বিরোধীদের তোলা ভোট চুরির অভিযোগকে ফের উড়িয়ে আজ নির্বাচন কমিশন দাবি করল, ওই রাজ্যে যে ভোটার তালিকা পরিমার্জনের কাজ চলছে, তাতে ভোটার তালিকায় থাকা রাজ্যের প্রায় ৯৮% ভোটারের নথি তাদের ঘরে জমা পড়ে গিয়েছে। বাকি যে আট দিন সময় রয়েছে, তাতে বাকি দু’শতাংশ ভোটারের নথিপত্র জমা পড়ে যাবে বলে আশাকমিশনের। এ দিকে ভোটার তালিকায় নাম তোলার প্রশ্নে আধার কার্ডকে বিবেচনা করার যে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে, বিরোধীরা তার ভুল ব্যাখ্যা করছে বলে আজ সরব হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
নির্বাচন কমিশন বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ পরিমার্জনে হাত দেওয়ার পরেই কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে সরব হন বিরোধীরা। রাহুল গান্ধীদের অভিযোগ, শাসক দল বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিহারে ভোট চুরিতে তৎপর হয়েছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেসের অভিযোগ, অতীতে এ ভাবেই কর্নাটক বা মহারাষ্ট্রে ভোটার তালিকায় কারচুপি করে বিজেপিকে সাহায্য করেছিল কমিশন। এ যাত্রায় তা রুখতে রীতিমতো পথে নেমেছেন রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদবেরা। আজও বিহারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাহুল-তেজস্বীরা যখন ভোট চুরির প্রতিবাদে জনসভা করছেন, তখন পাল্টা কমিশন দাবি করেছে, গত ২৪ জুন থেকে আজ, ২৪ অগস্ট— এই দু’মাস সময়ে বিহারের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৯৮.২ শতাংশের কাগজপত্র (এনুমারেশন ফর্ম ও ভোটার হিসাবে প্রামাণ্য কাগজ) কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। আগামী আট দিনে বাকিদের কাগজও জমা পড়ে যাবে। পরবর্তী ধাপে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যাবতীয়কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পরে ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশকরবে কমিশন।
বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় মৃত, স্থানান্তর, একই ব্যক্তির একাধিক ভোটার কার্ড থাকার মতো কারণে প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। আজ কমিশন জানিয়েছে, বাদ যাওয়ার পরে খসড়া তালিকায় যে ৭.২৪ কোটি ভোটারের নাম উঠেছে, তাঁদের মধ্যে ০.১৬ শতাংশ ব্যক্তিই অভিযোগ জানিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। যার মধ্যে কেবল দশটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির বুথ লেভেল এজেন্টের মাধ্যমে। পাশাপাশি এ বারের তালিকায় ৩,২৮,৮৪৭ জন তরুণ-তরুণীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাঁরা এ বছর (১ জুলাই বা আগামী ১ অক্টোবর) আঠারো বছরে পা দিতে চলেছেন। এ দিকে সময়ের আগে প্রায় অধিকাংশ ভোটারের তথ্য কমিশনের ঘরে জমা পড়ায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছে কমিশন।
এ দিকে সুপ্রিম কোর্ট ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে স্বীকৃত নথির মধ্যে আধারকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া নাগরিকেরা নির্বাচনের কমিশনের নির্ধারিত ১১টি নথি অথবা আধার কার্ড জমা দিলেই তালিকায় নাম তুলতে পারবেন। অনলাইনের মাধ্যমেও নাম বাদ পড়া ভোটারেরা ওই কাজ করতে পারবেন। পাল্টা বিজেপির দাবি, মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন বিরোধীরা। আজ বিজেপির আইটি শাখার প্রধান অমিত মালবীয় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য একমাত্র বৈধ নথি হল আধার কার্ড। অন্য নথির সঙ্গে আধার দেওয়া যেতে পারে, এটুকই কেবল বলা হয়েছে। কারণ আধার আইনেই বলা রয়েছে, ওই কার্ড ব্যক্তির পরিচয় ও ঠিকানার প্রমাণ হলেও কোনও ভাবেই নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। ফলে ভোটার তালিকায় নাগরিকত্ব প্রমাণে আধার কার্ডের ব্যবহার হলে তা আধার আইনকেই অর্থহীন করে দেবে। তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট গত ১২ অগস্টের রায়ে জানিয়েছিল, আধার কোনও ভাবেই নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না।’’
বিজেপির দাবি, ভোটের বাজার উত্তপ্ত করতেই আধার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে হাতিয়ার করে বিতর্ক তৈরি করছেন বিরোধীরা। মালবীয় বলেন, ‘‘বিরোধীরা যতই দাবি করুক, ভোটার তালিকা পরিমার্জনের ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের প্রমাণে যে এগারোটি শর্ত ছিল, তাতে কোনও পরিবর্তন আসেনি। আধার কোনও ভাবেই মৃত, ভুয়ো বা বাংলাদেশি কিংবা রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে পারবে না। এদের নাম বাদ যাবেই। ভোট দেবেন কেবল ভারতীয় যোগ্য ভোটারেরাই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)