Advertisement
E-Paper

মুলায়ম নন, সপার মালিক অখিলেশই

সমাজবাদী পার্টিতে টিপুই এখন সুলতান! ২৫ বছর আগে নিজের হাতে গড়া দলের নাম বা প্রতীক ব্যবহারের অধিকার খোয়ালেন ‘নেতাজি’। আজ দেশের নির্বাচন কমিশন সরকারি ভাবে জানিয়ে দিল, উত্তরপ্রদেশের যাদব-যুদ্ধে জয়ী অখিলেশ যাদব ওরফে টিপু। তাঁর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীই সমাজবাদী পার্টি (সপা) নাম ব্যবহার করার অধিকারী। ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে সাইকেলে চড়ার মালিকও অখিলেশই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৮
মুখোমুখি। মুলায়মের লখনউয়ের বাড়িতে। পরে টুইটারে ছবিটি নিজেই পোস্ট করেন অখিলেশ।

মুখোমুখি। মুলায়মের লখনউয়ের বাড়িতে। পরে টুইটারে ছবিটি নিজেই পোস্ট করেন অখিলেশ।

সমাজবাদী পার্টিতে টিপুই এখন সুলতান!

২৫ বছর আগে নিজের হাতে গড়া দলের নাম বা প্রতীক ব্যবহারের অধিকার খোয়ালেন ‘নেতাজি’।

আজ দেশের নির্বাচন কমিশন সরকারি ভাবে জানিয়ে দিল, উত্তরপ্রদেশের যাদব-যুদ্ধে জয়ী অখিলেশ যাদব ওরফে টিপু। তাঁর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীই সমাজবাদী পার্টি (সপা) নাম ব্যবহার করার অধিকারী। ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে সাইকেলে চড়ার মালিকও অখিলেশই।

আগামিকাল উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফা নির্বাচনের মনোনয়ন শুরু হতে চলেছে। তার আগের সন্ধ্যায় কমিশনের ঘোষণায় স্বাভাবিক ভাবেই স্বস্তিতে অখিলেশ-শিবির। কমিশনের এই সিদ্ধান্তের পরে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়লেন মুলায়ম সিংহ যাদব।

সপা-র গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার দিন ছিল আজ। এ নিয়ে দু’ শিবিরেই ছিল উত্তেজনা। সময় যত গড়িয়েছে, তত উৎকণ্ঠার পারদ চড়েছে দিল্লি থেকে লখনউ। যদিও কমিশনের চূড়ান্ত রায় আসার আগেই লখনউয়ে সপা-র সদর দফতরে সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে মুলায়মের নামফলকের নীচেই লাগিয়ে দেওয়া হয় অখিলেশের নামফলক। ইঙ্গিত স্পষ্ট, কমিশনের সিদ্ধান্ত যাই হোক, দলের নেতা অখিলেশই। শেষ পর্যন্ত কমিশন অখিলেশের পক্ষেই সিলমোহর দেওয়ায় এ যাত্রা ক্ষমতা হস্তান্তরে কোনও বাড়তি জটিলতা সৃষ্টি হয়নি।

এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ কমিশন জানিয়ে দেয়, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন থাকায় অখিলেশ শিবিরকেই সমাজবাদী পার্টি নাম ও সাইকেল প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এখন মুলায়ম শিবির আলাদা ভাবে ভোটে লড়তে চাইলে তাদের নতুন প্রতীক ও নতুন নাম নিয়ে নামতে হবে। ইতিমধ্যেই লোকদলের তরফে জানানো হয়েছে, মুলায়ম চাইলে তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন।

কমিশনের সিদ্ধান্ত জানার পরেই দিল্লি এবং লখনউয়ে অখিলেশ সমর্থকদের উল্লাস শুরু হয়ে যায়। লখনউয়ে অখিলেশের কালিদাস মার্গের বাড়ির সামনে শুরু হয়ে যায় অকাল দেওয়ালি। ঢাক ঢোল, নাচ, মিষ্টি বিতরণ। বিক্রমাদিত্য রোডের দলীয় দফতরের ছবিটাও ছিল একই রকম। অখিলেশের বাড়ির লাগোয়া মুলায়মের প্রাসাদ তখন নিস্তব্ধ। রাত আটটা নাগাদ বাবার সঙ্গে দেখা করতে যান অখিলেশ। সূত্রের খবর, বাবা যাতে আলাদা দল করে ভোট ভাগাভাগির পথে না যান, তাঁকে সেই অনুরোধ করেছেন টিপু। অখিলেশ-শিবিরের দাবি, এই বৈঠকে ফের মুলায়মকে আশ্বাস দেওয়া হয়, ভোটের পরে দলের সর্ব্বোচ্চ পদটি তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হবে।

কমিশনের এ দিনের সিদ্ধান্তে হতাশ বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে জিততে মরিয়া বিজেপি শুরু থেকেই চাইছিল বাবা-ছেলে কোনও পক্ষই যাতে সাইকেল প্রতীক না পায়। সে ক্ষেত্রে বাড়তি ফায়দা পেত তারা। এ দিনের সিদ্ধান্তের পরে অখিলেশ শিবিরের প্রধান সেনাপতি রামগোপাল যাদব বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ। এখন দ্রুত লখনউ ফিরে দলকে জেতানোর জন্য ঝাঁপাতে হবে।’’

কোন অঙ্কে জিতলেন অখিলেশ?

কমিশনের কাছে যাওয়ার পরে দু’দলই নিজের দাবি জানিয়ে প্রচুর নথি জমা দেয়। মুলায়ম শিবিরের দাবি ছিল, তিনিই দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। তাঁকে সরিয়ে যে বৈঠকে অখিলেশকে সর্বভারতীয় সভাপতি করা হয়েছিল, তা অবৈধ। আর অখিলেশের পক্ষে সব থেকে জোরালো যুক্তি ছিল যে, দলের অধিকাংশ বিধায়ক, সাংসদ, বিধান পরিষদ ও পঞ্চায়েত স্তরের নেতা-সহ দলের বিভিন্ন পদাধিকারীরা টিপুর পক্ষে। তাঁরা অখিলেশের পক্ষে থাকার হলফনামাও দিয়ে‌ছিলেন। এ ক্ষেত্রে সমর্থন কার পক্ষে, সেটাই খতিয়ে দেখেছে কমিশন। আর তাতেই জয়ী অখিলেশ।

এখন কী করবেন মুলায়ম? আজকের এই সিদ্ধান্তের পর তাঁর হাত থেকে দলও গেল, ছেলেও গেল! রয়ে গেলেন কেবল ভাই শিবপাল। আর যাঁর বিরুদ্ধে দল ভাঙার মূল অভিযোগ এনেছিলেন অখিলেশ, সেই অমর সিংহ গতকাল রাতেই চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাড়ি দিয়েছেন। হতাশ মুলায়ম শিবির এখন বলছে, হাওয়া বুঝে আগেই বিদেশ পালিয়েছেন অমর।

হাওয়া যে ছেলের পক্ষে তা বুঝতে পারছিলেন মুলায়মও। তাই এ যাবৎ রফাসূত্রের আশায় ইতিবাচক বার্তা দিলেও আজ সকাল থেকেই বেসুরো গাইতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি বরাবরই মুসলিমদের পক্ষে। আর এ ব্যাপারে অখিলেশের মানসিকতা নেতিবাচক।’’

অখিলেশ শিবিরের ব্যাখ্যা, আলাদা ভাবে ভোটে লড়ে ছেলেকে শিক্ষা দিতে চান মুলায়ম। তাই এ সব কথা বলেছেন। পরে নিজের পুরনো অভ্যাস মেনে ফের ডিগবাজিও খেতে পারেন উত্তরপ্রদেশের ‘নেতাজি’!

Akhilesh Yadav Election Commission Samajwadi Party
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy