কোনও সংস্থার ডিরেক্টরের খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে তিনি চায়ের দোকান চালান। কেউ ধর্মতলায় হকারি করেন। হাজার পাঁচেক টাকার বিনিময়ে একটা কাগজে সই করে দিয়ে নিজেদের নাম-ঠিকানা লিখে দিয়েছেন।
এমন ‘ডিরেক্টর’দের সংস্থার নামেই কোটি কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে। ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে অচল পাঁচশো-হাজার টাকার নোট। শনিবার কলকাতা-সহ দেশ জুড়ে ভুঁইফোড় সংস্থাগুলিতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ইডি-কর্তারা দেখছেন কাগজে-কলমে সংস্থা তৈরি করে, যে কাউকে ডিরেক্টর সাজিয়ে অচল নোটে থাকা কালো টাকা সাদা হয়েছিল। ইডি সূত্রের দাবি, কলকাতাতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ফি দিল্লি-মুম্বইয়ের তুলনায় অনেক কম। কাগজে-কলমে ভুঁইফোড় সংস্থা খুলতে ব্রোকার, এন্ট্রি অপারেটরের মতো যে সব ব্যক্তির সাহায্য প্রয়োজন, তাঁরাও সস্তায় কাজ করেন। সেই কারণেই কলকাতায় এই ধরনের সংস্থার রমরমা।
ইডি-র এক কর্তা জানান, কারও ৫ কোটি টাকা কালো থেকে সাদা করার প্রয়োজন পড়লে, তিনি ৫ লক্ষ টাকার পুঁজিতে একটি সংস্থা খুলে ফেলেছেন। তার পর ওই সংস্থার ১০ টাকা দামের ৫০ হাজার শেয়ার ছাড়া হয়েছে। সেই শেয়ার ১০ টাকার বিনিময়ে ১ হাজার টাকায় ডিরেক্টরদের কাছে বেচে দেওয়া হয়েছে। ফলে সংস্থার মূল্য ৫ লক্ষ থেকে এক লাফে ৫ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। তার পর সেই টাকা আরও কিছু সংস্থার হাত ঘুরে আসল মালিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। দেখানো হয়েছে, ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য টাকা হাত বদল হয়েছে। কিন্তু আসলে এই সংস্থাগুলি কোনও ব্যবসা, কেনাবেচা কিছুই করেনি। যেখানে ৫ কোটি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার বেশি কর দিতে হত, তার বদলে সব মিলিয়ে লাখ খানেক টাকা খরচ করেই কালো টাকা সাদা হয়ে গিয়েছে।
কলকাতায় এই সংস্থাগুলির মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের বহু রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীর কালো টাকা সাদা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের দফতরে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া কাগজপত্র থেকে এখন তাঁদের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুম্বই ও সুরাতে কালো টাকা সাদা করতে হীরে ব্যবসায়ীদের কাজে লাগানো হয়েছিল বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। চেতন শাহ নামে এক হীরে ব্যবসায়ীর আই-প্যাড থেকে ইন্টারপোলের সিক্রেট এজেন্টের ভুয়ো পরিচয়পত্রও উদ্ধার হয়েছে। মুম্বইয়ে জগদীশ পুরোহিত নামে এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট রাজ্যের নেতা ছগন ভুজবলের কালো টাকা সাদা করার কাজ করেছিলেন বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy